কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা Kidney Rogir Khabar

কিডনি রোগীর খাদ্য তালিকা Kidney Rogir Khabar

যাদের কিডনির ক্ষমতা কম বা নষ্ট তাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বজ্র বের হতে সমস্যা হয় এবং তাতে রক্ত বিশুদ্ধ হয় না। তাই তাদেরকে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ত বিশুদ্ধ করতে হয়। কিডনিতে সমস্যা হলে শরীরের বজ্র যেমন সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস এগুলির পরিমান আমাদের দেহে বাড়তে থাকে যার ফলে আমাদের বাকি অঙ্গ পতঙ্গগুলি নষ্ট হতে থাকে। এই উপাদান গুলি রক্তে বেড়ে গেলে উচ্চ রক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। তাই ডাক্তাররা কিডনি রুগীদের দৈনিক ২,০০০  মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস খাওয়ার পরামর্শ দেন। তাই বলা চলে যেসকল খাবারে সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস কম সেগুলি কিডনি সমস্যা রুগীদের জন্য উত্তম খাবার। নিচে কিছু কিডনি রোগীর খাদ্য র কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলিতে সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস মাত্রা কম থাকে যা কিডনি সমস্যা রুগীদের জন্য আদশ খাবার যা ডাক্তাররা সুপারিশ করে। 

Kidney Rogir Khabar Talika 

বেল মরিচ : এ ধরণের মরিচে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম বেল মরিচে ১৫০% ই থাকে ভিটামিন সি। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্যও আশীর্বাদ। প্রতি ১০০ গ্রাম বেল মরিচে ৪ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২২ মিলিগ্রাম ফসফরাস, এবং ১৬০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম পাওয়া যায়। 

পেঁয়াজ : ভিটামিন সি, ভিটামিন বি এবং ম্যাঙ্গানিজ উপাদানের একটি ভাল উৎস হলো পেঁয়াজ। লবণের বিপরীতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারেন এতে শরীরে সোডিয়াম কম প্রবেশ করবে। তাছাড়া পেঁয়াজে প্রিবায়োটিক ফাইবার থাকে যা পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলিকে খাদ্যের যোগান দেয়। প্রতি ১০০ গ্রাম পেঁয়াজে সোডিয়াম ৪.৫ মিলিগ্রাম, ৩০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, এবং ১২০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। 

আনারস : আনারস গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল হওয়া স্বত্তেও এটিতে স্বল্প পরিমানে পটাসিয়াম থাকে সাথে খেতে মিষ্টিও থাকে। এতে প্রচুর পরিমানে  ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ব্রোমেলেন, এবং ফাইবার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে সোডিয়াম ১.৩ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১০০ মিলিগ্রাম, এবং ফসফরাস ৮ মিলিগ্রাম থাকে। 

সামুদ্রিক মাছ : অন্যান্য মাছে ফসফরাসের পরিমান বেশি থাকলেও সামুদ্রিক মাছে স্বাভাবিক পরিমানে ফসফরাস থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। সামুদ্রিক মাছ বেশি খাবার উপদেশ দেওয়ার একমাত্র কারণ হলো এতে ওমেগা-৩ এর পরিমান বেশি থাকে। ওমেগা-৩ আমাদের শরীরের ভিতরের ব্যথা কমানোর সাথে সাথে আমাদের মুখস্ত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মন উৎফল্ল করে, এবং মনের উদ্বেগ দূর করে। প্রতি ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছ রান্না করার পর পটাসিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম, এবং ফসফরাস ২২০ মিলিগ্রাম থাকে। 

রসুন : রসুনে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, এবং ভিটামিন বি ৬ এর একটি প্রধান উৎস। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন তারা লবণের পরিবর্তে রসুন খেতে পারেন। কারণ লবনে প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম থাকে যা কিডনির উপর বাড়তি চাপ পরে। প্রতি ১০ গ্রাম রসুনে সোডিয়াম ১.৬ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৫ মিলিগ্রাম, এবং পটাসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম থাকে। 

মূলা : মূলাতে ফসফরাস ও পটাসিয়াম যেমন কম থাকে টিক তেমনি অত্যাধিক ভিটামিন সি থাকে। মূলা চোখের ছানি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। প্রতি ১০০ গ্রাম মূলাতে ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪১ মিলিগ্রাম, এবং পটাসিয়াম ২২০ মিলিগ্রাম রয়েছে। 

শালগম : কিডনি রোগীর খাদ্য হিসাবে আলু বিপরীতে শালগম খেতে পারেন কারণ এতে কম পরিমানে পটাসিয়াম থাকে। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার এবং ম্যাঙ্গানিজ উপাদানও রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শালগমে  ১৬ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ফসফরাস ২৫ মিলিগ্রাম, এবং পটাসিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম থাকে। 

লাল আঙ্গুর : এই ধরণের আঙ্গুর কেবল খেতেই মজা না সাথে প্রচুর পরিমানে ভিটামিনে সম্ব্রিদ্ধ। লাল আঙ্গুরে ফ্ল্যাভোনয়েড রেসভেরাট্রল প্রচুর পরিমানে থাকে যা ডায়াবেটিস এবং হার্টের রুগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া  জ্ঞান শক্তি বৃদ্ধি করতেও এটি কাজ করে। লাল আঙ্গুরে প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে কারণ এতে অধিক পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। লাল আঙ্গুর মিষ্টি হওয়ার পরও কিডনি আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম লাল আঙ্গুরে ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, এবং পটাসিয়াম ১৬০ মিলিগ্রাম থাকে। 

ডিমের সাদা অংশ : যেসব রুগীদের ডায়ালাইসিস করতে হয় তাদের জন্য সর্ব উত্তম খাবার হলো ডিমের সাদা অংশ কারণ এতে প্রোটিনের পরিমানে বেশি থাকে সাথে এবং সামান্য পরিমানে ফসফরাস থাকে। কিন্তু ডিমের কুসুম কিডনি আক্রান্ত রুগীদের জন্য বেশ বিপদজনক কারণ এতে অধিক পরিমানে ফসফরাস থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমের সাদা অংশে ফসফরাস ১৮ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১৯৮ মিলিগ্রাম, এবং সোডিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম থাকে। 

ফুলকপি : ফুলকপি খুবই উপকারী সবজি। ফুলকপিতে ইনডোল হরমোন থাকে যা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, এবং ভিটামিন বি সহ বহু পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে এতে ফাইবারের উপাদানও রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা ফুলকপিতে পটাসিয়াম ১৬৯ মিলিগ্রাম,  ফসফরাস ৩৫ মিলিগ্রাম, এবং সোডিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। 

জলপাই তেল : যেসব কিডনি রুগীরা ওজন খুবই কম তাদের জন্য জলপাই তেল আশীর্বাদ কারণ এতে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত এবং চর্বি ও ফসফরাস মুক্ত একটি খাদ্য। এটির প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে কারণ এটিতে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। তাই রান্না করার সময় এ তেল ব্যবহার করুন। এই তেলে প্রতি ১৫ মিলিগ্রামে ০.৪ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, পটাসিয়াম ০.২ মিলিগ্রাম, এবং  ফসফরাসের কোনো উপাদান থাকে না। 

বাঁধাকপি : বাঁধাকপিতে পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়ামের পরিমাণ  খুবই কম থাকে। কিন্তু এটিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, এবং ভিটামিন কে সহ বিভিন্ন রকম  খনিজ উপাদান রয়েছে। এতে ফাইবারও রয়েছে তাই  মলত্যাগের সমস্যা দূর করে। প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে ১৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ২২ মিলিগ্রাম ফসফরাস, এবং ১২৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে।