গ্রাম্য বাজার রচনা Grammo Bazar Rochona

গ্রাম্য বাজার রচনা Grammo Bazar Rochona

গ্রামের সবচেয়ে পরিচিতি স্থান হলো গ্রাম্য বাজার। একটি গ্রামের জন্য গ্রাম্য বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয় নিয়েই বাংলা রচনা

গ্রাম্য বাজার
সূচনা : গ্রাম্য বাজার বলতে আমরা বুজি যে স্থানে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রামের লোকজন যেখানে কেনা-বেচার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়, সে স্থানকে গ্রাম্য বাজার বলে। গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রের চাহিদা পূরণ করে বলে গ্রাম্য বাজার খুবই গ্রামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাম্য বাজার বেশি সময় স্থায়ী হয় না। এটি সকালে বসে দুপুরেই ভেঙে যায়। বাজার ভেঙে গেলেও স্থায়ী দোকানগুলো ঠিকই পড়ে থাকে। কারণ এগুলো সর্বদা গ্রামবাসীর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের প্রায় বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলে এখনো এই গ্রাম্য বাজারের অস্থিত্ব দেখা যায়। 

অবস্থান : গ্রাম্য বাজার সাধারণত খাল-বিলের পাড়ে, নদীর পাশে,  খোলা মাঠে বা কোনো বড় বটগাছের নিচে কিংবা কোনো তিন বা চার রাস্তার মিলনস্থলে গ্রাম্য বাজার বসে থাকে। তবে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন সহজেই মাল-পত্র নিয়ে বা যেখানে সহজে যাতায়াত করা যায় এমন  স্থানই গ্রাম্য বাজারের জন্য নির্বাচিত হয়। এ কারণে নদীর পাড়ে বা রাস্তার মিলনস্থলে বেশিরভাগ গ্রাম্য বাজার অবস্থিত। 

প্রকারভেদ : বড় বাজার ও ছোট বাজার এ দু প্রকার বাজারই আকার এবং স্থায়ীকালের উপর নির্ভর করে গ্রাম্য বাজার নির্ধারণ করা হয়। বড় বাজার সাধারণত সকাল আটটা থেকে শুরু করে রাত নয়-দশটা পর্যন্ত কেনা-বেচা চলে। আবার ছোট বাজারগুলো সকাল আটটা থেকে থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলে। কোনো কোনো বাজার সপ্তাহে একদিন বা দুদিন বা তিনদিন বিকেলে বসে— একে হাট বলে। 

দোকানপাট : বেশির ভাগ গ্রাম্য বাজারে অল্পসংখ্যক স্থায়ী দোকান থাকে। স্থায়ী দোকানগুলোর মধ্যে কাপড়ের দোকান, স্বর্ণের দোকান, মনিহারী দোকান, মুদির দোকানই প্রধান। এগুলো প্রায় সারাদিনই খোলা থাকে, তবে সভ্যতার বিকাশের সাথে ও রুচির পরিবর্তনে আজকাল গ্রাম্য বাজারে প্লাস্টিকের দোকান, ডাক্তারখানা, চায়ের দোকান, রেস্টুরেন্ট, ওষুধের দোকানও লক্ষ করা যায়। গ্রাম্য বাজারে অস্থায়ী দোকানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি থাকে। এগুলো দোচালা ঘর অথবা চারপাশে বেড়া থাকে না, অথবা কিছু দোকানপাট একেবারে খোলা মাঠেই বসে থাকে— কোনোটি সারিবদ্ধভাবে, কোনোটি এলোমেলোভাবে বসে পরে যে যেমন ভাবে বসে কোনো নিয়ম কানুন নেই। 

বিক্রয় দ্রব্য : গ্রাম্য বাজারে আটা, চাল, লবণ, তেল, ডাল, গুড়, মাছ, তরিতরকারি, মিষ্টি, মসল্লা ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে গহয়না, কাপড়-চোপড় এমনকি কিছু কিছু বিলাস দ্রব্যও বেচা-কেনা হয়ে থাকে। অবশ্য আগের চেয়ে এখন এসব দ্রব্যের পাশাপাশি আধুনিক উৎপাদিত দ্রব্যাদিও যেমন প্লাস্টিকের বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। 

বেচা-কেনার নিয়ম : গ্রামের লোক বেশির ভাগই কৃষিজীবী। এদের হাতে নগদ অর্থ থাকে না। তাই এরা বিভিন্ন জিনিস উৎপন্ন করে। যেমন : ধান, পাট, তরি-তরকারি, গুড় ইত্যাদি। এগুলো বিক্রয় করে তারা অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেনে। আগে তারা চাল দিয়ে লাউ বা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনতো যা এখনও দেখা যাই।  গ্রাম্য বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দর কষাকষি বা দামাদামি চলে খুব বেশি। 

প্রয়োজনীয়তা : গ্রামবাসীদের জন্য গ্রাম্য বাজার খুবই প্রয়োজনীয় ও উপকারী। এখানে তারা তাদের সুবিধামত জিনিসপত্র কেনা-বেচা করতে পারে। গ্রাম্য বাজার কাছে থাকার ফলে গ্রামবাসীকে দূরের শহরে যেতে হয় না, ফলে কষ্ট কম হয় এবং যাতায়াতের খরচও বেঁচে যায় এতে তাদের অনেক সুবিধা হয়। এ কারণেই গ্রাম্য বাজারের গুরুত্ব অপরিসিম। 

অসুবিধা : গ্রাম্য বাজারে ব্যাপক সুবিধা থাকা সত্বেও অসুবিধা রয়েছে তবে সুবিধার তুলনায় গ্রাম্য বাজারের অসুবিধা খুবই কম। গ্রাম্য বাজারে বহু লোকের সমাগম হওয়ায় সেখানে পরিবেশ দূষিত হয়। কোনো নিয়ম কানুনের ব্যবস্থা না থাকায়, যেখানে সেখানে গ্রামের লোকেরা পায়খানা-প্রস্রাব করা, কাশি ও থুথু ফেলে ফলে বাজারের পরিবেশ দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। পচাগলা ও ভেজাল জিনিস বিক্রয় হওয়ার ফলে জনগণের ক্ষতি হয়ে থাকে। 

উপসংহার : গ্রাম্য বাজার শুধু গ্রামবাসীদের জন্য কেনা-বেচার কেন্দ্রস্থলই নয়, পরস্পর ভাব বিনিময়ের মিলন ক্ষেত্রও বটে সেখানে ঘটে আবেগ বিনিময়। গ্রাম্য বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষ ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের মনের আশা, প্রকাশ করার সুযোগ পায়। 
আহা কি প্রবিত্র এই গ্রাম্য ভালোবাসা 
দেখেই হাসি আড্ডা এ যেন আনন্দ মহর
পরস্পরের সুখে দুঃখে মিলনের ভালোবাসা  
 
গ্রাম্য বাজারে মানুষের মধ্যে পরস্পর আলাপ-পরিচয় ও ভাবের আদান-প্রদানের ফলে আত্মীয়তার ও বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়। গ্রাম্য বাজারের চায়ের দোকানের আড্ডা আলোচনায় এবং খবরের কাগজ পড়ে গ্রামের মানুষ অনেক খবরাখবর পেয়ে থাকে। এতে তাদের জ্ঞানের বিকাশও ঘটে। গ্রাম্য বাজার তাই গ্রামবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকারকে গ্রাম্য বাজারের উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে, তাহলেই আসবে আটষটি হাজার গ্রামের মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি ও আনন্দ।