আনারকলি ফল বা প্যাশন ফলের স্বাস্থ্য গুনাবলী - Bengali Passion Fruit Health Benefit in Bangla

আনারকলি ফল বা প্যাশন ফলের স্বাস্থ্য গুনাবলী - Bengali Passion Fruit Health Benefit in Bangla

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাদের উপকারের জন্য অনেক উপকারী ফল দান করেছেন। তার মধ্যে একটি ফল হলো প্যাশন ফল। ফলটি রোগ প্রতিরোদ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের অঙ্গ পতঙ্গ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই আমরা প্যাশন ফলের কিছু গুণাবলীর সম্পর্কে জানবো। 


গর্ভবতী মায়েদের জন্য আদর্শ ফল প্যাশন:
গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে প্যাশন ফল খুবই উপকারী। প্যাশন ফলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ থাকে। শিশুর ভ্রূণের বৃদ্ধি, সুস্থ স্বাস্থ্য এবং বিকাশের জন্য এক উপকারী ফল। প্যাশন ফলে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ প্রতিরোধ করতে এ ফলটি নিয়মিত খান কারণ এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে। উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত এ ফলটি খেলে আপনাকে শক্তি দিবে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় প্যাশন ফল খেলে তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্যাশন ফল খান:
প্যাশন ফলে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরিলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীলের ফ্রি-রেডিকাল হ্রাস করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, মৃত কোষ ধ্বংস করে এবং কোষের বিভিন্ন ক্ষতি প্রতিরোধ করে। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে প্যাশন ফলে আলফা-ক্যারোটিন, বিটা-ক্রিপ্টোক্সানথিন এবং ভিটামিন সি উপাদান রয়েছে। ভিটামিন সি শরীলের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা বৃদ্ধি করে। ফ্লু, ঠান্ডা এবং অন্যান্য সংক্রমণ রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক কোষের কার্যকলাপ শক্তি বাড়ায়। 

পাকস্থলির সমস্যা দূর করতে নিয়মিত প্যাশন ফল খান:
আমাদের শরীলে ফাইবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ২০-৩০ বছর বয়সী পুরুষদের জন্য দৈনিক ৩৩.৬ গ্রাম প্রয়োজন এবং মহিলাদের ১৯-৩০ বছর বয়সী ২৮ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন কিন্তু গবেষণা মতে আমরা দৈনিক ১৫-১৬ গ্রাম ফাইবার খাই যা আমাদের কোলন কে দুর্বল করে দেয়। প্যাশন ফল প্রচুর পরিমানে ফাইবার সমৃদ্ধ। ফাইবার শরীলের পাকস্থলী অন্ত্র প্রণালীকে সুস্থ রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। তাছাড়া হার্টের রুগীদের ক্ষেত্রেও ফাইবার উপকারী। ফাইবার শরীলের কোলন থেকে  বর্জ্য এবং টক্সিন পদার্থ পরিষ্কার করে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।  

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার প্যাশন ফল:
গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্যাশন ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জি-আই) এর মান খুবই কম থাকে প্রায় ৩০। এটি খেলে রক্তে ধীরে ধীরে চিনি শোষিত হয়। অথাৎ রক্তে শর্করা বৃদ্ধি পাবে না, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের দুর্দান্ত ফল যা ইনসুলিনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্যাশন ফল খেলে চিনির প্রতি লোভ এবং মেজাজ খিট খিটে কমে। ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এইরকম জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হয়। তরমুজ এবং আনারসে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সর্বাধিক থাকে তাই এই জাতীয় ফল ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া ঠিক নয়। 

ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখবে প্যাশন ফল:
আমাদের শরীলে খুব বেশি রক্তচাপ হলে ধমনীতে অত্যধিক চাপ পরে ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়। অ্যালকালয়েড রক্তচাপ কমায় ও স্বাভাবিক রাখে এবং অ্যান্টিস্পাসমোডিক রাখে। এই অ্যালকালয়েড প্যাশন ফলে অত্যাধিক পরিমানে পাওয়া যায়। এই ফলে অতিরিক্ত পটাসিয়াম এবং কম সোডিয়াম থাকায় ফলটি রক্তনালীকে শিথিল করে এবং রক্ত ​​প্রবাহ স্বাভাবিক উন্নতি করে। একটি মাঝারি প্যাশন ফলে ৮২০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। সুতরাং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি প্যাশন ফল খান।

হৃদরোগ সমস্যা দূর করবে প্যাশন ফল:
প্যাশন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং বি৬ পাওয়া যায় যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। কম চর্বিযুক্ত প্যাশন ফল হওয়ায় আর মধ্যে কোলেস্টেরল নেই। কোলেস্টেরল রক্ত ​​প্রবাহকে বন্ধ করে ধমনীক ব্লক আর মাধ্যমে অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। কোলেস্টেরল শরীলের জন্য নীরব ঘাতক। প্যাশন ফলের ফাইবার এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে যা আমারে দেহের জন্য ভালো এবং এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় যা হার্টের জন্য খুবই খারাপ।  এলডিএল কোলেস্টেরল কমার মাধ্যমে আপনার হার্ট সুরক্ষিত থাকে। প্যাশন ফলের মধ্যে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীলের ধমনীর অভ্যন্তরীনে চর্বি জমতে দেয় না বরং তা কমায় এবং পরিষ্কার করে।

ভুলে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে প্যাশন ফল:
প্যাশন ফলের ফোলেট, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীলের স্নায়বিক বিকাশ বৃদ্ধি করে। ফোলেট উপাদান আল্জ্হেইমের রোগ থেকে প্রতিকারে সাহায্য করে এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। পটাসিয়াম মস্তিষ্কে রক্ত ​​প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে, জ্ঞানী করে তুলে, মস্তিক্সের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং স্নায়ু কার্যকলাপ উন্নতি হয়। এছাড়াও প্যাশন ফলে প্রচুর ভিটামিন বি৬ আছে। ভিটামিন বি৬ ঘাটতি হলে বমি বমি ভাব হয় এবং হতাশা মনোভাব সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমরা প্রাইয়ই ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন বি৬ গ্রহণ করি যা খুবই খারাপ, প্রতি দিন ১০০ মিলিগ্রামের বেশি গ্রহণ করবেন না।

হজম শক্তি বাড়াতে প্যাশন ফল:
প্রতি প্যাশন ফলে প্রায় ২৫ গ্রাম ফাইবার থাকে যা অন্ত্রের গতিবিধি বজায় রাখতে এবং হজমের শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে সাহায্য করে। প্যাশন ফলে ফাইবার এর পাশাপাশি জলের উপাদানও রয়েছে যা হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে। এর এনজাইম পাকস্থলীতে হজম রস বাড়ায় ফলে হজম শক্তি উন্নতি হয়। গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় প্যাশন ফল ব্যাপক উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্যাশন ফলের ফাইবার যোগ করলে ধমনী এবং রক্তনালীর থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ করতে আপনাকে সাহায্য করবে। 

ঘুমের সমস্যা দূর করতে প্যাশন ফল খান:
প্যাশন ফলে অ্যালকালয়েড এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা ঘুমের সমস্যা দূর করে। ডাক্তাররা অনিদ্রা রোগীদের প্যাশন ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন কারণ প্যাশন ফলে অ্যালকালয়েড থাকে যা অস্থিরতা, উদ্বেগ হ্রাস করে এবং নিদ্রাহীনতা থেকে মুক্তি দেয়। তাছাড়া প্যাশন ফলে ম্যাগনেসিয়াম থাকে তাও আপনার ঘুমের প্রশান্তি ঘটায়। ঘুমের ব্যাধি দূর করার সাথে সাথে বিপাককেও সাহায্য করে প্যাশন ফল। 

হাঁপানি রোগীদের নিয়ন্ত্রণে প্যাশন ফল:
বেগুনি প্যাশন ফলের খোসার নির্যাস খেলে হাঁপানির রোগীদের দারুন উপকারী হয় তাছাড়া ঘা সারাতে এবং কাশি চিকিৎসায় আর প্রয়োগ রয়েছে। এই ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বায়োফ্ল্যাভোনয়েডগুলিতে অ্যান্টিঅ্যালার্জিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা কাশি বা শ্বাসকষ্ট চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। 


আমাদের দেশে এই ফলের সংখ্যা কম হলেও বাহিরে প্রচুর উৎপন্ন হয়। স্বাস্থকর এই ফলটি আমাদের দৈনিক খাবারে যোগ করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করি।