এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যালসিওনিয়াস এর সন্ধান মিললো জ্যোতি বিজ্ঞানীদের

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যালসিওনিয়াস এর সন্ধান মিললো জ্যোতি বিজ্ঞানীদের

আইসি-১১০১ ছায়াপথ আবিষ্কারের পর আবার নতুন করে এর চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুন বড় আসলো অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথ। এই ছায়াপথটি  আমাদের পৃথিবী গ্রহ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন আলোকবর্ষ থেকে দূরে অবিস্থিত। অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬.3 মিলিয়ন আলোকবর্ষ বা ১ কোটি ৬৩ লাখ আলোকবর্ষ। এর মধ্যবর্তি স্থানে ব্ল্যাকহোল রয়েছে যা আশে পাশের গ্রহ নক্ষত্র গুলো তার দিকে টেনে নিচ্ছে। এই ছায়াপথের নাম করা হয়েছে গ্রিকদের বিশাল দৈত্য আদিম দেবতা আকাশের পুত্রের নাম অনুসারে। তিনিও একজন বিশাল দৈত্য ছিলেন, সে দেবতা হেরাকলসের সাথে লড়াই করেছিলেন। দেবতা অ্যালসিওনিয়াস বিশাল দেহের অধিকারী হওয়ার কারণেই সদ্য আবিষ্কারের নামকরণ এই নামে রাখা হয়। বর্তমানে আবিষ্কার ছায়াপথের মধ্যে অ্যালসিওনিয়াস হলো সবচেয়ে বৃহত্তর ছায়াপথ। এটিই হচ্ছে বিজ্ঞানীদের কাছে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক যে এটি এত বড় কিভাবে হলো। এটি বড় হলেও আমাদের ছায়াপথের মতোই সাধারণ। তবে আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য আর অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের কেন্দ্রে রয়েছে ব্ল্যাক হোল। এবং ছায়াপথটি সেই ব্ল্যাকহোল হতেই শক্তি নিচ্ছে অথাৎ ব্ল্যাকহোলের কারণেই গ্রহ নক্ষত্র গুলো বিচ্ছিন্ন অবস্থাতে নেই। তবে আস্থে আস্থে আশে পাশের বস্তুগুলো ধীরে ধীরে তার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। 

এই ছায়াপথের সাথে আমাদের ছায়াপথের সম্পর্ক অনেকটা পৃথিবী এবং চাঁদের সম্পর্কের মতো। তবে অ্যালসিওনিয়াসের রেডিও তরঙ্গ উচ্ছ হারে নির্গত হয়। প্রায় ২০ হাজার রেডিও অ্যান্টেনার অধিক ওয়েভ ৫২টি কেন্দ্রের সাহায্য নিয়ে এটি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে এই ছায়াপথের কোনো একটি জায়গায় প্রচুর পরিমানে ঘনত্বর বিস্তার রয়েছে যার কারণে গালাক্সিটি এত বড় হয়েছে। এর ব্ল্যাক হোল আমাদের সূর্যের অপেক্ষায় প্রায় ২৫০ গুন বেশি বড় তাহলে ধারণা করে যাচ্ছে যে আশেপাশে অন্য কোনোর প্রাণীর বসবাস করা প্রায় অসম্ভব। এর আশপাশের গ্রহগুলোতে সবসময় ঝড়ের মধ্যেই থাকতে হয়। হয়তোবা দূরের কোনো গ্রহতে নক্ষত্রের আলোর মাধ্যমে জায়গাটি শান্তি পূর্ণ রয়েছে। কারণ বিজ্ঞানীরা শুরুতে এঁকে কোনো ছায়াপথ মনে করেনি, এটি একটি নক্ষত্র বহুল এলাকা মনে করেছিল সূর্যবিহীন জায়গা তবে ব্ল্যাকহোলের ধারা যে একটি বড় ধরণের ছায়াপথ হওয়া সম্ভব তা জানা ছিলোনা বিজ্ঞানীদের। অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের সন্ধান জ্যোতি বিজ্ঞানীরা সাধারণ ভাবেই পেয়েছিলো ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে এবং লো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে টেলিস্কোপ দিয়া প্রথমে তারা একটি নক্ষত্রে ঘেরা তারা দেখতে পাই পরে তারা সেখানকার ব্ল্যাকহোলে আবিষ্কারের পরই তারা বুজতে পারে এটি একটি এখনকার সময়ে সবচেয়ে বড় ছায়াপথ অ্যালসিওনিয়াস।

১৭৯০ সালে যখন আইসি-১১০১ ছায়াপথ আবিষ্কার করা হয় তখন এটিই মনে করা হতো সবচেয়ে বৃহত্তর। প্রায় ২৩২ বছর পর ২০২২ সালে তার রেকর্ড ভাঙ্গলো  অ্যালসিওনিয়াস। আইসি-১১০১ দৈর্ঘ্য  ছিল প্রায় ৫০ থেকে ১২০ আলোক বর্ষ। অথাৎ এই ছায়াপথের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগবে ৫০ থেকে ১২০ কোটি  বছর। আর অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথ  এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সময় লাগবে ১৫০ থেকে ১৭০ কোটি বছর লাগবে। অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের মতো প্লাজমাবর্তী রেডিয়ো ছোট ছোট ছায়াপথের দেখা বহুবার বিজ্ঞানীরা দেখেছেন তবে একটি ছায়াপথ এত বড় হতে পারে তা আগে তারা কল্পনা করতে পারেননি। আমাদের আবিষ্কার রত এখন পর্যন্ত মহা জগতে প্রায় ২০০ বিলিয়নের মতো গ্যালাক্সি রয়েছে তার মধ্যে ১৬ ই ফেব্রুয়ারিতে যোগ হলো আরেকটি অজানা গ্যালাক্সি। এভাবে দিন দিন প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমরা মহা বিশ্ব সম্পকে ধারণা লাভ করছি। অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে আমরা জানতে পারবো এর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি সম্পর্কে, এর আশে পাশে গ্রহ নক্ষত্র গুলোর পরিবেশ কিরূপ আচরণ করছে তার কথা। তবে ধারণা করা যাই যে অ্যালসিওনিয়াস ছায়াপথের ব্ল্যাক হলে আস্থে আস্থে গিলে খেতে খেতে ভারী আর বড় হতে থাকবে তবে আমাদের কোনো চিন্তা নেই কারণ এটি আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে, অথাৎ আমাদের কাছে যদিও আসতে এই ব্ল্যাকহোলের ৩০০ কোটিরও বেশি সময় লাগবে। যা আমাদের কাছে পোঁছাতে প্রায় অসম্ভব। তাই বলা যাই এই ছায়াপথ দ্বারা আমাদের কোনো ক্ষতির সম্ভনা নেই।