কোরিয়ান তরমুজের উপকারিতা Korean Melon Health Benefits Bangla

কোরিয়ান তরমুজের উপকারিতা Korean Melon Health Benefits Bangla

এশিয়ায় আবিষ্কৃত একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় মজাদার ফল হলো কোরিয়ান তরমুজ। এই তরমুজ স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক দিয়ে অন্যানো ফল থেকে বেশ উপকারী। অন্যান্য তরমুজ অপেক্ষায় কোরিয়ান তরমুজ দেখতে অনেক ভিন্ন। খুব বিরল প্রকৃতির তরমুজ হওয়ায় আমরা সচারাচর খেতে পারিনা বা দেখতেও পারিনা। এই ফল সবচেয়ে বেশি কোরিয়াতেই চাষ হয়; বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে এই ফলের চাষ বেশি দেখা যাইনা। এই ফলটি খেতে অনেকটা শসার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার মতো। তাই একে হানিডিউ তরমুজ নামেও ডাকা হয়। এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার আকৃতির এবং হলুদ রঙের উপর সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। আর গন্ধও খুব মিষ্টি ও স্পষ্ট, দূর থেকেও গন্ধ টের পাওয়া যায়। সুস্বাদু এবং মজাদার হওয়ার কারণে এটি কোরিয়ার প্রিয় ফলে রূপ নিয়েছে। কোনো একদিন কোরিয়াতে গেলে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। এই ফলের ভিতরে সর্বাদিক পরিমান পানি থাকে যা সম্পূর্ণ ফলের ৯০ ভাগ যা হাইড্রেটেড রাখতে আপনাকে সহায়তা করবে।
সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মুক্ত ফল হওয়ায় এটি নিয়মিত খেলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা শরীর থেকে কমতে শুরু করবে। যদি আপনি মোটা হন তাহলে এটি খেলে আপনার শরীর কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাবে না ফলে আপনি সুস্বাস্থ্যবান হয়ে উঠবেন। প্রতি ১০০ গ্রাম কোরিয়ান তরমুজের ভিতরে কি পরিমান স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। সেখানে প্রায় ৪৮ গ্রাম ক্যালোরি থাকে যা আপনাকে দীর্ঘস্থায়ী সচল এবং আপনার মেটাবলিজম সুস্থ্য রাখবে। এর ২.০৫ গ্রাম প্রোটিন আপনার মুখের ত্বককে মসৃণ করে। এতে থাকা ২.০৫ গ্রাম উপকারী ফাইবার আপনার হার্টের ভিতরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক ভাবে বজায় রাখে এবং হার্টে ব্লক হতে দেয় না ফলে আপনার হার্টের সু-স্বাস্থ্য বজায় থাকে। ১৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। যদি আপনি কিডনিতে পাথর বা ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে চান তাহলে এতে রয়েছে ৩৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা আপনাকে তা প্রতিহত করতে সহয়তা করবে। হাড় মজবুত এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এতে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের উপাদানও আছে। তাই এটি একটি স্বয়ং সম্পুর্ন্ন খাদ্য উপাদান।  

ওজন হ্রাস করতে চাইলে নিয়মিত কোরিয়ান তরমুজ খান - 
ওজন হ্রাস করতে কোরিয়ান তরমুজ অনেক সাহায্য করে থাকে। কারণ এটি খেতে যেমন শসার মতো ঠিক তেমনি শসার মতোই উপকার করে। কোরিয়ান তরমুজের ভিতর ফাইবার থাকে ফলে আপনার তার ফলে আপনার রক্ত কণিকা গুলোতে চর্বি থাকলে তা ধ্বংস করে দেয়। তাছাড়া এতে জিরো ক্যালোরি এবং ভিটামিন সি রয়েছে; ভিটামিন সি শরীর অতিরিক্ত চর্বিগুলো পোড়াতে সহয়ওতা করে।  

কোরিয়ান তরমুজ কোলেস্টেরল কমানোর উপায় -
আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি সমস্যায় ভুগেন এবং সঠিক খাবারের তালিকার সন্ধানে থাকেন তবে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় কোরিয়ান তরমুজ যোগ করতে পারেন। এই ফলটি মধুর সাথে তুলনা করলেও এতে বিন্দু পরিমানে কোনো কোলেস্টেরল নেই। এটি আপনি নিয়মিত খেলে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না ফলে আপনার শরীর ধীরে ধীরে কোলেস্টেরলের কমতে শুরু করবে। এবং যারা মোটা নয় তারাও এটি খেতে পারেন কারণ এটি কোনো কোলেস্টেরলের পোড়াই না, কেবল এতে জিরো কোলেস্টেরলের থাকার কারণে আপনি সু-সাস্থ্য হয়ে উঠবেন। 

ত্বকের যত্নে এই ফল খান -
ত্বকের প্রতি যত্ন নিতে কোরিয়ান তরমুজ সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ৯০% বিশুদ্ধ পানি এবং কোলেজন যা আপনার ত্বককে সতেজ রাখে, বয়স্ক ভাব দূর করে এবং মৃত কোষ গুলো ধংস্ব করে ফেলে। 

উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা দূর করতে কোরিয়ান তরমুজ খান -
পৃথিবীর মধ্যে যত গুলো ফলফলাদি রয়েছে তার মধ্যে কোরিয়ান তরমুজে সবচেয়ে কম পরিমানে সোডিয়াম রয়েছে। আমরা জানি শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম বৃদ্ধি পেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা সৃষ্টি হয়। যার ফলে পরে আমাদের হৃদ স্পন্দন বাড়তে শুরু করবে। আবার ওপরদিকে এতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম রয়েছে যা শরীরে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ফলে আমাদের হৃদ স্পন্দন স্বাভাবিক থাকে। কোরিয়ান ডাক্তাররা যে সকল রুগী হৃদ রোগের সমস্যায় ভুগছেন তাদের প্রতিদিন কোরিয়ান তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনি যদি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে চান খাবারের তালিকায় এইফলটি যুক্ত করতে পারেন।   

কোরিয়ান তরমুজ ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে -
ডায়েটারি ফাইবারের ভান্ডার আপনি কোরিয়ান তরমুজে পেয়ে যাবেন। শরীলে ডায়েটারি ফাইবার হ্রাস পেলে শরীলে এলডিএল কোলেস্টোরের পরিমান শরীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে শরীর মোটা এবং হৃদ ব্লক হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাছাড়া বদ হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং শরীরে ভিতর টক্সিন জমা হতে থাকবে পরে কোনো এক বিশাল বড় রোগ ক্যান্সারের মতো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভনা থাকবে। ডায়েটারি ফাইবার শরীরের এইচডিএল এর পরিমান বৃদ্ধি করে। যার কারণে আপনার শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন বজ্র আকারে বের হয়ে আসে। বদহজম সমস্যায় প্রতিরোধ করে এবং তারচেয়ে বড় কথা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ প্রতিরোধ করতে কোরিয়ান ফল সর্বাধিক সক্ষম উপকারী ফল। আপনার অতিরিক্ত মৃত কোষ গুলি ডায়েটারি ফাইবার পুড়িয়ে ফেলে যে কারণে আপনি ক্যান্সার রোগ থেকে বাঁচতে পারেন।    

হাইড্রেশন রাখতে সহয়তা করে -
আমরা এটি মধ্যেই আপনাকে বলেছি যে কোরিয়ান তরমুজে প্রায় ৯০% পানি থাকে। যা আমাদের প্রচন্ড গরম এর ডিহাইড্রেশন থেকে বাছায়। 

হৃদ সুস্থ রাখতে ফল কোরিয়ান তরমুজ খান - 
সামান্য পরিমান সোডিয়াম এবং অতিরিক্ত পটাসিয়াম আপনার শরীরের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক করে আপনার হৃদ সুস্থ্য রাখে। এর প্রক্রিয়াটি করতে আপনার কোনো নিয়ম কানুন মানতে হবে না, শুধুমাত্র কোরিয়ান তরমুজ খেলেই স্বাস্থ্যের এই উপকারটি পাচ্ছেন। 

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে কোরিয়ান তরমুজ ফল  খান -
ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস হলো কোরিয়ান তরমুজ। আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি চাহিদার ৬৫% আপনি এ ফল থেকে পেতে পারেন। যার ফলে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া সুস্থ থাকে তাছাড়া এর আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টিউপাদান বিপাকে সহয়তা করে। ভিটামিন সি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সর্বাধিক কার্যকর। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্ব্রিদ্ধ হওয়ায় এটি শরীর থেকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের দূর করে নতুন কোষের উৎপন্নতে কাজ করে যার কারণে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবেও কাজ করে। ত্বকে বয়ষ্কর চাপ এড়াতে ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের সাহায্য করে থাকে।  

ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে কোরিয়ান তরমুজ -
কোরিয়ান তরমুজে ক্যারোটিনয়েড জাতীয় যৌগ রয়েছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে পারে। এই ফলের লাইকোপিন উপাদান শরীরের মৃত কোষ গুলোকে মেরে ফেলতে সহয়তা করে যার কারণে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার থেকে আমরা বাঁচতে পারি। তাছাড়া কোরিয়ান তরমুজে স্বয়ং সম্পূর্ণ ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান আছে যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড এবং বিটা-ক্যারোটিনের মতো মহামূল্যবান উপাদান এর মধ্যে বিদ্যমান। এই উপাদান গুলো শরীরের মধ্যে ঘাটতি হলে ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।      

কোরিয়ান তরমুজ হাড় মজবুত করবে -
হাড়ের দুর্বলতা রক্ষায় কোরিয়ান মেলন সহায়ক হিসাবে কাজ করে। কারণ এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে রয়েছে যা হাড়কে মজবুত করে এবং এর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। 

কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে কোরিয়ান তরমুজ খান - 
আপনি যদি কিডনিতে পাথর হওয়া জনিত রোগে ভুগেন তাহলে কোরিয়ান তরমুজ আপনাকে এ থেকে বিস্তার করতে সাহায্য করবে কারণ এতে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম কিডনিতে প্রাথমিক পর্যায়ের পাথর গুলোকে গুলিয়ে ফেলতে পারে। 

স্ট্রোক প্রতিহত করতে এই ফল খান - 
স্ট্রোকের প্রধান কারণ হলো রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে মস্তিক্ষে রক্ত পোঁছায় না ফলে সেখানে এক রকমের বিগ্ন ঘটে যাকে আমরা স্ট্রোক বলি। কোরিয়ান তরমুজ রক্ত প্রবাহ সচল রাখে কারণ এটি ফ্রি কোলেস্টোরল ফল এবং প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম আছে যা অতিরিক্ত কোলেস্টোরল ধ্বংস করে দেয় যার ফলে রক্তে চর্বি জমে না। 

তবে বিশেষ সতর্কতা এই তরমুজটি অনেক উপকার থাকা স্বত্বেও ডায়াবেটিস রুগীদের জন্য খাওয়া ঠিক নয় কারণ এতে অতিরিক্ত চিনির পরিমাণও রয়েছে।