পার্সিমন ফলের গুনাবলী স্বাস্থ্য উপকারিতা - Bengali Health Benefit of Persimmon

পার্সিমন ফলের গুনাবলী স্বাস্থ্য উপকারিতা - Bengali Health Benefit of Persimmon

পার্সিমন দক্ষিণ চীনের পার্বত্য অঞ্চলে সর্বপ্রথম পাওয়া যায়। পরে চীন, কোরিয়া, স্পেন, তুরস্ক, জাপান, ব্রাজিল, ইতালি এবং ইজরায়েল সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ফল চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে জাপানি পার্সিমন সবচেয়ে মজাদার এবং তাদের জাতীয় ফল। পার্সিমন উজ্জ্বল কমলা রঙের ফল। মিষ্টি মধুময় স্বাদযুক্ত বিশেষ ফল। ১৭০ গ্রাম মাঝারি পার্সিমন ফলে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সেখানে ক্যালোরি পরিমান প্রায় ১১৭ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, চিনি ২৫ গ্রাম, ফাইবার ৬ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৩০ গ্রাম, ১১৯ গ্রাম ভিটামিন-এ এবং ৩৪ গ্রাম ভিটামিন-সি রয়েছে। তাছাড়া ফাইবার ০.১৫ গ্রাম, ফসফরাস ৪৮ মিলি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫০  মিলি.গ্রাম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানও রয়েছে।
 
জাপানে দুই রকমের পার্সিমন দেখা যায় তা হলঃ
পার্সিমন হাচিয়া: সাধারণত অ্যাকর্ন আকৃতির এবং অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট যুক্ত হয়ে থাকে। এই ধরনের পার্সিমন গাঢ় লাল-কমলা রঙ্গের হয় এবং কালো কালো দাগ থাকে। হাচিয়া পার্সিমনের কোন বীজ থাকে না। এদের পাকলেই খাওয়া উত্তম।

পার্সিমন ফুয়ু: সাধারণত টমেটো আকৃতির এবং অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট বিহীন হয়ে থাকে। তাদের খোসা গাঢ় কমলা রঙ্গের হয়। ফুয়ু পার্সিম নেরও কোন বীজ হয় না। হালকা পাকলেই খাওয়া যায়।

পার্সিমন সু-স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী নিচে পার্সিমনের কিছু উপকারের কথা বলা হলঃ


পার্সিমন ফলের কারনে স্বাস্থ্য উন্নতি সমুহ:
পার্সিমন স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ। পার্সিমনে বিভিন্ন রকেমর  ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পার্সিমনে থাকা ভিটামিন সি রোগ পতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগের চিকিৎসা করে। পার্সিমনে ফাইবার বেশি থাকে ফলে দেহে কার্বোহাইড্রেট এর চলাচল ধীর করে দেয়, রক্তে শর্করা হ্রাস হয়। শরীরের ব্যাথা কমাতে পার্সিমন ফল ব্যাপক উপকারী। পার্সিমন ফল আর্থ্রাইটিসের হাত থেকেও আমাদের রক্ষা করতে পারে। পার্সিমনে ভিটামিন সি থাকার কারনে আর্থ্রাইটিসের প্রদাহ হ্রাস করে এবং দেহে উৎপন্ন ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে আমাদের বাচায়। 

হৃদরোগ সমস্যা মোকাবেলার খাবার পার্সিমন ফল:
পার্সিমন হার্টের ধমনী পরিষ্কার করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ধমনী ফুলে যাওয়া এবং সংকুচিত হওয়ার প্রকিয়াকে অ্যান্টিথেরোস্ক্লেরোটিক বলে। গবেষণায় বলা হয় পার্সিমনে অবস্থিত ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ উপাদান, অ্যান্টিথেরোস্ক্লেরোটিক প্রকিয়াকে শক্তিশালী করে। পার্সিমনের ফাইবার উচ্চ কোলেস্টেরলের রোধে কাজ করে। বিভিন্ন রকমের হৃদরোগ পার্সিমন ধংস্ব করতে পারে। পার্সিমনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এক বিশেষ ফল যা দেহের অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষ্ম করে দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পার্সিমন খেতে হবে। ট্যানিক অ্যাসিড এবং গ্যালিক অ্যাসিডের প্রধান উৎস পার্সিমন ফল। উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যাথা এবং উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ট্যানিক অ্যাসিড এবং গ্যালিক অ্যাসিড কাজ করে। 

চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির খাবার পার্সিমন:
চোখ সুস্থ রাখতে নিয়মিত পার্সিমন খেতে হবে। দেহে দৈনিক ভিটামিন-এ এর চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি পার্সিমনে রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়াও পার্সিমনের ছোলকায় প্রচুর পরিমাণে লুটেইন যৌগ রয়েছে ফলে তা খেলে চোখের বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচা যায়। পার্সিমন চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখের রোগ বালাই থেকে চোখকে রক্ষা করে। পার্সিমনে লিউটিন এবং জিযানটিন রয়েছে এটা ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখের ম্যাকুলারকে সুস্থ রাখে। দৈনিক ভিটামিন-এ চাহিদার ৭০ শতাংশ পার্সিমন পূরন করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি এবং চোখকে সুস্থ রাখতে পার্সিমন ফল একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের খাবার পার্সিমন:
গবেষণায় প্রমাণিত যে, অ্যান্টিডায়াবেটিক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্য পার্সিমনের খোসায় থাকা ফ্ল্যাভেনয়েডে রয়েছে। দেহে উৎপন্ন ক্ষতিকারক যৌগ যেমন প্রোটিন, চর্বি বা চিনি রক্তের সাথে মিশে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তা পার্সিমনের গ্লাইকেশন ধংস্ব করে দেয়। দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং ডায়াবেটিসের চিকিসায় গ্লাইকেশন ব্যবহার করা হয়। 

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে পার্সিমন:
পার্সিমন পাকস্তলির মল তৈরিতে সহয়তা করতে পারে। পার্সিমন উচ্চ ফাইবার থাকার কারনে তারা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। একজন মহিলার দৈনিক ফাইবারের চাহিদার এক চতুর্থাংশ পার্সিমন পূরণ করে। একটি পার্সিমনে প্রায় ৬ গ্রাম ফাইবার থাকে। প্রতিদিন সকালের নাস্তার সাথে পার্সিমন খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যান্সার প্রতিরোধের খাবার পার্সিমন:
গবেষণা মতে পার্সিমন অ্যান্টিকার্সিনোজেনিকের প্রভাব রয়েছে। মানে পার্সিমন বিটা-ক্যারোটিনের মতো হওয়ায় তাদের উচ্চ মাত্রায় ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্যারোটিনয়েড  রয়েছে ফলে তারা ফুসফুস এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পার্সিমন খান:
পার্সিমনে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ন খনিজ উপাদানের একটি পটাসিয়াম, যা পার্সিমনে উচ্চ পরিমানে পাওয়া যায়। পটাসিয়াম শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ন উপাদান যা সোডিলেটরের মত কাজ করে। পার্সিমন রক্তচাপ কমায় যার ফলে শরীরের  রক্ত ​​প্রবাহ  বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত পার্সিমন খেলে কার্ডিওভাসকুলার নিম্ন রক্তচাপ হ্রাস পায়। হাটের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে হার্ট কে সুস্থ রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার পার্সিমন:
পার্সিমনে উচ্চ মাত্রায় অবস্থিত ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দৈনিক চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন সি একটি পার্সিমনে রয়েছে। ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করে এবং রক্তে শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি করে। শ্বেতকণিকা জীবাণু, ভাইরাস এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে। বর্তমান করোনা ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পার্সিমন খাওয়া খুবই উপকারী।

ওজন কমানোর খাবার পার্সিমন:
পার্সিমনে উচ্চ ফাইবার থাকায় অতিরিক্ত ওজন কমানো ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য করে। ফাইবার ক্ষদা নিবারনে সহয়তা করে ফলে আপনি দীর্ঘ সময়ের তৃপ্ত অনুভব করেন। দৈনিক খাবারের চাহিদা ৬% একটি পার্সিমন ফল পূরন করে। পার্সিমন রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে ও ক্ষুদা নিবারণ হয়।


তাই পার্সিমন ফল খান আর সুস্থ থাকুন।