প্যাসেঞ্জার কবুতর বিলুপ্ত - Passenger Pigeon Extinct Bangla

প্যাসেঞ্জার কবুতর বিলুপ্ত - Passenger Pigeon Extinct Bangla

আমিরিকা আবিষ্কারের আগের থেকে বসবাস করতো বিলুপ্ত প্যাসেঞ্জের কবুতর, বাংলায় যার নাম করলে দাঁড়ায় যাত্রী কবুতর। প্রকৃতির প্রতি মানুষের স্বার্থ সংঘর্ষে ফল হলো প্যাসেঞ্জের কবুতরের বিলুপ্তি। আমেরিকাতে মোট পাখির জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ ছিল এই পাখির প্রজাতি। তা সংখ্যাই প্রকাশ করলে ৪০ কোটি এর কাছাকাছি। ১৯ দশকের শেষের দিকে এই বন্য প্যাসেঞ্জের পায়রা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২৪ মার্চ ১৯০০ সালে বন্দিদশা থেকে বন্য পাখিটি ধরার সর্বশেষ প্রমাণ মিলে। আমেরিকান সরকার এই পাখিটি ধরার জন্য ২০০০ ডলার পুরুষ্কার ঘোষণা করেন। কিন্তু সেনাবাহিনী মদায়ন করার পরেও এই পাখিটির সন্ধান মিলেনি। বিশ্ব বসন্ত মৌসুমে শত শত নিরীহ দ্রুত গতির প্যাসেঞ্জের কবুতরের দেখার সাক্ষী আর হবে না। পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে, খাঁচায় বন্দি করে প্রজনন করেও তাদের প্রজাতি বাঁচানোর চেষ্টা সফল হয়নি। প্যাসেঞ্জের কবুতর প্রজাতির সর্বশেষ প্রাণীটি ছিল "মার্থা"। সেটি সিনসিনাটি জুলজিক্যাল গার্ডেনে মারা যায়। প্যাসেঞ্জের কবুতর কম্বিফর্মেস গণের অন্তর্গত এবং বৈজ্ঞানিক নাম এক্টোপিস্টেস মিগ্র্যাটোরিয়াস। এর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ হলো "এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করা, অভিবাসনকারী।" এরা কেবল বসন্ত এবং শরৎকালেই অভিবাসন করে না, এরা ঋতু থেকে ঋতুতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। 

প্যাসেঞ্জের কবুতর পাখির চেহারা তার গতি, চালচলন এবং উড্ডয়ন বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্যাসেঞ্জের কবুতর কীলক আকৃতির, ঘাড় এবং মাথা ছোট, লম্বা লেজ বৈশিষ্ট, ডানাদ্বয় ছিল লম্বা ও সূক্ষ্ম এবং বুকের খাঁচা ছিল বড় প্রশস্ত যা তাদের দীঘক্ষণ উড়ে থাকতে সাহায্য করে। মহিলা প্যাসেঞ্জের কবুতর অপেক্ষায় পুরুষেরা একটু লম্বা থাকে। পূর্ন বয়স্ক কবুতরেরা ১৫ ইঞ্চি থেকে ১৭ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা দেখতে সুন্দর হয় এরা। পুরুষ কবুতরের দেখতে মাথার অংশ ধূসর রঙের এবং ডানার পাখা গুলো কালো কালো রেখা ছিল, ঘাড়ের পিছনে বেগুনি রঙ ছিল, বুকের তলপেট সাদা ও গোলাপি ভাব ছিল, এবং পা ছিল লাল রঙের। নারীদের রং ছিল শরিলের নিস্তেজ এবং ফ্যাকাশে। মাথা এবং পিঠ বাদামী ধূসর, গলা এবং ঘাড়ের পিছনের কালো দাগগুলি হালকা ছিল এবং বুকের খাঁচা ফ্যাকাশে গোলাপি রঙের ছিল। রীতিমতো দেখা সকরো ঘুঘু, মৌর্নিং কবুতর হলো প্যাসেঞ্জের কবুতরের নিকটতম আত্মীয়। সকল ধরণের এক্টোপিস্টেস মিগ্র্যাটোরিয়াস প্রজাতির আকার ও রঙ প্যাসেঞ্জের কবুতরের সাথে দেখতে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই অনেকে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে এই সকল কবুতরকে প্যাসেঞ্জের কবুতর বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। 

সকরো ঘুঘু দেখতে প্যাসেঞ্জের কবুতরের চেয়ে কম উজ্জ্বল এবং ছোট হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক প্যাসেঞ্জের কবুতর আইরিসের রং উজ্জ্বল লাল থাকে এবং প্রাপ্তবয়স্ক সকরো ঘুঘু গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে থাকে। তাছাড়া শোক ঘুঘুর গলায় এবং কানে ছোট কালো কালো দাগ আছে কিন্তু প্যাসেঞ্জের কবুতরের তা নেই। সকরো ঘুঘু উড়ার সময়  বাঁশির শব্দ করে কিন্তু প্যাসেঞ্জের কবুতর নিরীহ প্রকৃতির ছিল। প্যাসেঞ্জের কবুতর দেখা যেত কুইবেক, নোভা স্কোটিয়া থেকে দক্ষিণে টেক্সাস, সেন্ট্রাল অন্টারিও, আলাবামা ফ্লোরিডার উচ্চভূমিতে, জর্জিয়া এবং লুইসিয়ানা এলাকা গুলোতে দেখা যেত। স্থায়ী ঘর বানানোর জন্য তারা গ্রেট লেক এবং নিউ ইয়র্ক অঞ্চলকে। শীতকালের প্রধান স্থান গুলো তে উত্তর ক্যারোলিনা, আরকানসাস এবং দক্ষিণে উপসাগরীয় অঞ্চলে এরা বেশি ডানা মেলে উড়ে বেড়াতো। এদের প্রধান খাদ্য ছিল অ্যাকর্ন, বীজ, বিচনাট এবং বেরি। তাছাড়া পোকামাকড় কীট পতঙ্গও খেতে ভালোবাসে। 

স্থানীয় আমেরিকানরা প্রচুর পরিমানে প্যাসেঞ্জের কবুতর শিকার করত মাংসের বাণিজ্যিক উদ্দেশে। ইউরোপীয়দের আগমনের পর থেকে এই কবুতর শিকার আরো বেড়ে যায় জনসংখার চাহিদা মেটাতে। তাছাড়া তাদের বাসস্থানও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। পরে পরিশেষে তাদের বড় পালের ঝোক না থাকায় তারা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে এবং বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১ সেপ্টেম্বর, ১৯১৪ সালে তাদের সর্বশেষ প্রাণীটি মারা যায়। আমেরিকানদের মনে সব সময় মনে থাকবে এই প্যাসেঞ্জের কবুতরের কথা।