বাংলাদেশের পাখি রচনা প্রবন্ধ bangladesher pakhi rochona

বাংলাদেশের পাখি রচনা প্রবন্ধ bangladesher pakhi rochona

বাংলাদেশের পাখি রচনা (bangladesher pakhi rochona) প্রবন্ধটি যেকোনো ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীরা পড়তে পারবে। বাংলার সৌন্দর্য সৃষ্টিতে বাংলার পাখির গুরুত্ব যে অপরিসিম সেই বিষয় নিয়েই এই রচনা। 
 

বাংলার সৌন্দর্য সৃষ্টিতে বাংলার পাখি রচনা
অথবা 
প্রবন্ধ রচনা বাংলাদেশের পাখি 

বাংলাদেশের পাখি 
ভূমিকা : আমাদের এই দেশ অপরূপ প্রাকৃতিক শোভায় ভরপুর। এ দেশের শোভা আরো শতগুণে বাড়িয়ে তুলেছে  রঙ-বেরঙের অসংখ্য পাখি। বাংলাদেশের পরিবেশের সাথে এরা একাত্ম হয়ে মিশে আছে। পাখির অনুপস্থিতি হলে এদেশের রূপ বৈচিত্র্যকে শ্রীহীন হয়ে যাবে। গৃহের আশেপাশে, গাছের ডালে-ডালে, ঝোপে ঝাড়ে, মাঠে-ঘাটে, খালে-বিলে, পুকুরে নদীতে সর্বত্র জায়গায় হাজার পাখির মেলা বসে এবং তারা মনের কণ্ঠে গান গাই। এই পাখিরা আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। সকাল-সন্ধ্যা-রাতে এরা আমাদেরকে সব সময় সঙ্গ দান করে। কবির ভাষায়— 
"কোথায় ডাকে ময়না পাখি, 
রাঙা নাচে গাছে গাছে? 
চরই কোথায় বাসা বোনে 
চাতক বারি কোথায় রে? 
সে আমাদের বাংলাদেশ 
আমাদেরই প্রাণের বাংলারে।" 
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি: পক্ষীবিদদের মতে এদেশে প্রায় ৫৭৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৪১০ প্রজাতির পাখি এই দেশে বাস করে এবং বাকিরা সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এই দেশে আসে। এদের অতিথি পাখি বলা হয়। শীতের শেষে আবারও শুরু হয় দেশের অভিমুখে তাদের বিরতিহীন উড্ডয়ন। দেশীয় পাখিরা এদেশের বনে বাস করে। এরা এদেশে ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ে। অতিথি পাখিরা শীত মৌসুমে এদেশে আসে এবং বসন্তের শেষে আবার চলে যায়।

পাখির শ্রেণীবিভাগ: এদেশে তিন ধরনের পাখি আছে- জলজ, স্থলজ ও উভচর। পাখিদের প্রকৃতি, অবস্থান এবং আচরণের ভিত্তিতে কয়েকটি দলে ভাগ করা যায়; যথা- মাঠের পাখি: রক, ফিঙে, নীলকণ্ঠ  ইত্যাদি। গাছের পাখি: হলদে পাখি, হাঁড়িচাচা, কোকিল ইত্যাদি। জলের পাখি: হাঁস, ডাহুক, মাছরাঙা, পানিপিপি ইত্যাদি। গৃহপালিত পাখি: চড়ুই, কাক, পায়রা, দোয়েল, শালিক, বুলবুল প্রভৃতি শিকারী পাখি: ঈগল, চিলি, পেঁচা ইত্যাদি। অন্যরা পাখিদের সাধারণ পাখি, পোষা পাখি, গানের পাখি, বসন্তের পাখি, অতিথি পাখি ইত্যাদিতে ভাগ করতে আগ্রহী। এদেশের বিখ্যাত কিছু পাখির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। নিচে:

অতিথি পাখি: উত্তর হিমালয় অঞ্চল শীতকালে পাখিদের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ কারণে প্রচণ্ড শীত থেকে রক্ষা পেতে সেখানকার পাখিরা ময়মনসিংহ ও সিলেটের হাওর বিল এলাকায় আশ্রয় নেয়। শীতকালে বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পাখি বাংলাদেশে আসে, তাদের অতিথি পাখি বলা হয়। শীতকালে বাংলাদেশে যেসব অতিথি পাখি আসে তার মধ্যে বলাকা, রেডবেস্ট্রে ফ্লাইক্যাচার, চা পাখি, পিপিট, খঞ্জনা ইত্যাদি।আমাদের দেশে যেমন আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসে এবং কিছুদিন পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসে, তেমনি এই পাখিগুলো আমাদের দেশে অতিথি হয়ে আসে। . তারা দেশকে সুন্দর করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

চিল ও মাছ রাঙা: চিল একটি উড়ন্ত পাখি। তারা নীল আকাশের সাগরে পালতোলা নৌকার মত ভেসে বেড়ায়। চিল শিকারী পাখি। তাদের দৃষ্টি খুবই প্রখর। তারা অনেক উচ্চতা থেকে খুব ছোট খাবার দেখতে পারে এবং ধাক্কা দেয় এবং তাদের পায়ের সাহায্যে সেগুলি তুলে নিয়ে তাদের মুখে ঢেকে দেয়। এরা ছোট পাখি, ছানা, মাঠের ইঁদুর ইত্যাদি শিকার করে। চিলির মতো মাছরাঙাও শিকারী পাখি। জলাশয়ের ধারে গাছের ডালে চুপচাপ বসে থাকে। ছোট মাছকে পানিতে ভাসতে দেখলে তারা পানিতে ঝাঁপ দেয় এবং ঠোঁট দিয়ে মাছ ধরে।

বুলবুল ও শালিক: বুলবুলকে গানের পাখি বলা হলেও তাদের গানের কণ্ঠ নেই। এদেশে কালো ও বাদামি রঙের বুলবুল দেখা যায়। তাদের মাথায় চিরুনি আছে। লেজটা একটু লম্বা। শালিক খুবই সাধারণ একটি পাখি। আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তারা খাঁচা পোষা এবং শেখানো বুলি আওড়াতে পারে। চুপ করে থাকা তাদের স্বভাব নয়। সারাদিন কিচিরমিচির করতে পছন্দ করে। এদেশে ভাটশালিক, গাংশালিক ও গোশালিক দেখা যায়।

বাজপাখি এবং শকুন: উভয়ই শিকারী পাখি। এরা আমাদের অতি পরিচিত পাখি। তারা দ্রুত এবং খুব সাহসী। শকুন মৃতভোজী প্রাণী। তারা দল বেঁধে উড়ে যায় দূর আকাশে মৃত প্রাণীর খোঁজে। একটি প্রাণী মারা না গেলে বা দুর্ভিক্ষ না হলে, তাদের খুব কমই দেখা যায়।

বাবুই এবং চড়ুই: বাবুই হল শৈল্পিক পাখি। তাল, তাল ও বাবলা গাছে তাদের ঝুলন্ত বাসা উন্নত প্রযুক্তি ও শিল্পের নিদর্শন। তারা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। চড়ুইরা তাদের বাসা বাঁধে খড়ের ছাদে, ছাদের কার্নিশে। দিনভর চলে তাদের আসা-যাওয়া আর কিচিরমিচির। তারা মানুষকে ভয় পায় না। তারা মানুষের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে।

পেঁচা: পেঁচা একটি নিশাচর পাখি। রাতে তাদের ডাক শুনলে মানুষের বুক কেঁপে ওঠে। তাদের মুখ মানুষের মুখের মতো দেখতে। ছোট বাচ্চারা তাদের ভয় পায়। পেঁচা একটি শিকারী পাখি। দিনের বেলা তাদের দেখা যায় না।

শ্যামা: শ্যামাও গানের পাখি। এরা খুব লাজুক পাখি। তাই তারা পাতার আড়ালে বনের গভীর থেকে গান গাইতে পছন্দ করে। তারা খাঁচা বন্দী পোষা প্রাণী। শামার রঙের সমাবেশ অনেকটা দ্বন্দ্বের মতো। পোকামাকড় তাদের খাদ্য।

কোকিল: কোকিল কাকের মতো কালো হলেও এর কণ্ঠস্বর খুব মিষ্টি। কোকিল বসন্তের বার্তাবাহক। শীতের বিদায়ে তিনি বহন করেন বসন্তের আগমন বার্তা। কোকিল কাকের বাসাতেই ডিম পাড়ে এবং কাকের সাহায্যে ডিম ফোটে। গাছের ঘন পাতায় লুকিয়ে থাকতে তারা গান গাইতে পছন্দ করে।

টিয়া: সবুজ শরীর ও লাল চঞ্চু বিশিষ্ট টিয়া পাখি আমাদের সবারই পরিচিত। টিয়া দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং মানুষের খামার ও বাগানে পরাগায়নের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। তারা খাঁচা বন্দী পোষা প্রাণী। তারা মানুষের কণ্ঠ অনুকরণ করতে খুব ভাল।

জাতীয় পাখি দোয়েল: যে পাখি সকালবেলা একটানা ডাক দিয়ে আমাদের ঘুম ভাঙায় তাকে দোয়েল বলে। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। বসন্তের শুরুতে তারা আমাদের কাছে মিষ্টি গান করে। বাগানে, যেখানে আলো এবং ছায়া লুকিয়ে থাকে, দিনমান লেজ নাচিয়ে গাছ থেকে গাছে উড়ে যায়। বেশিরভাগ ডোয়েল দেখতে চকচকে কালো। দুই পাশের ডানার মাঝ বরাবর একটি সাদা কলাম। তাদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ ইঞ্চি।

প্রকৃতির ঝাড়ুদার কাক: আমাদের চারপাশে হাজার হাজার পাখি বাস করে। এটা সেই কাক যার কড়া কণ্ঠ আমাদের বিরক্ত করে। এটি দেখতে খুবই কুৎসিত পাখি। কাকের কণ্ঠ যতই আমাদের কানে বিষিয়ে তুলুক না কেন, আমরা কাক ছাড়া পরিবেশ চাই না। কারণ তারা পচা ইঁদুর এবং ব্যাঙ থেকে শুরু করে সবকিছু খেয়ে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কার রাখে। তাই কাককে বলা হয় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। বিপদে তারা খুব সহযোগিতা করে।

উপসংহার: এদেশের বিভিন্ন ধরনের পাখি আমাদের পরিবেশের সঙ্গে মিশে আছে। পাখির কিচিরমিচির আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আনন্দময় করে তোলে। পাখি আমাদের বন্ধু, তারা আমাদের নানাভাবে উপকার করে। পাখিরা আগাছার বীজ, পোকা-মাকড় এবং ইঁদুর-সাপ ধ্বংস করে কৃষকদের উপকার করে। কিছু পাখি ক্ষেত ধ্বংস করে। তবুও, পাখি আমাদের আপনজন। পাখি ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু কিছু উন্মাদ মানুষের বেহিসেবী খামখেয়ালিপনায় পরিবেশগত কারণে কিছু প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। শিকারীরাও পাখি মারতে মেতে ওঠে। দেশের সৌন্দর্য রক্ষায় পাখি নিধন বন্ধ করতে হবে এবং পাখিদের আবাসস্থল রক্ষা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অপরিসীম।