মধুর উপকারিতার চিকিৎসা কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী

মধুর উপকারিতার চিকিৎসা কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী

সকালে খালি পেটে মধু খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় কারণ মধুতে থাকা এনজাইম পেটের অম্লভাব কমিয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া হালকা গরম পানির সাথে যদি আপনি মধু মিশিয়ে খান তাহলে আপনার ওজন হ্রাস পাবে এবং লিভার পরিষ্কার থাকবে। সকালে মধু খাওয়ার সম্পর্কে একটি হাদিস হলো : আবু হুরায়রাহ (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ


حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خِدَاشٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ الْقُرَشِيُّ، حَدَّثَنَا الزُّبَيْرُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَاشِمِيُّ، عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ مَنْ لَعِقَ الْعَسَلَ ثَلاَثَ غَدَوَاتٍ كُلَّ شَهْرٍ لَمْ يُصِبْهُ عَظِيمٌ مِنَ الْبَلاَءِ ‏"‏ ‏.
   রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ভোরবেলা মধু চেটে চেটে খেলে সে মারাত্মক কোন বিপদে আক্রান্ত হবে না। [৩৪৫০]

যাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম তারা মধু খেলে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে আল্লাহ'র ইচ্ছাই নিজেদের বাঁচাতে পারবে। মধুতে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম রয়েছে যা হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল ধ্বংস করে দেয়। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, 
عَيَّاشُ بْنُ الْوَلِيدِ حَدَّثَنَا عَبْدُ الأَعْلٰى حَدَّثَنَا سَعِيدٌ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَبِي الْمُتَوَكِّلِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَخِي يَشْتَكِي بَطْنَه“ فَقَالَ اسْقِه„ عَسَلاً ثُمَّ أَتَى الثَّانِيَةَ فَقَالَ اسْقِه„ عَسَلاً ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ اسْقِه„ عَسَلاً ثُمَّ أَتَاه“ فَقَالَ قَدْ فَعَلْتُ فَقَالَ صَدَقَ اللهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيكَ اسْقِه„ عَسَلاً فَسَقَاه“ فَبَرَأَ.

এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে বললঃ আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয়বার আসলে তিনি বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে তিনি বললেন তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি এসে বললঃ আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হল। [৫৭১৬; মুসলিম ৩৯/৩১, হাঃ ২২৬৭, আহমাদ ১১১৪৬] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৯)

মধু তৈরী করতে মৌমাছিদের অনেক কষ্ট করতে হয় তারা বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে।  গ্লুকোজ, পানি, ফ্রুক্টোজ,  তেল ও এনজাইমের সংমিশ্রণে মধু তৈরী হয়। প্রাকৃতিক ভাবে রোগ থেকে মুক্তির তিনটি উপায় এর মধ্যে মধু একটি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ  
مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ أَخْبَرَنَا سُرَيْجُ بْنُ يُونُسَ أَبُو الْحَارِثِ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ شُجَاعٍ عَنْ سَالِمٍ الأَفْطَسِ عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ الشِّفَاءُ فِي ثَلاَثَةٍ فِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةِ عَسَلٍ أَوْ كَيَّةٍ بِنَارٍ وَأَنَا أَنْهٰى أُمَّتِي عَنِ الْكَيِّ.

তিনি বলেনঃ রোগমুক্তি আছে তিনটি জিনিসে। শিঙ্গা লাগানোতে, মধু পানে এবং আগুন দিয়ে দাগ দেয়াতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৬)
আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ الْحُبَابِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏ "‏ عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ الْعَسَلِ وَالْقُرْآنِ ‏"‏ ‏.‏

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’ আরোগ্য দানকারী বস্তুকে অবশ্যই তোমাদের গ্রহণ করা উচিতঃ মধু ও কুরআন মজীদ। [৩৪৫২]
তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল তবে মাওকূফ সূত্রে সহীহ।

মহান আল্লাহ তালা পৃথিবীতে যত ধরণের রোগ বালাই তৈরী করেছেন তার সব কিছুর প্রতিষোধকও তিনি তৈরী করেছেন। রোগ বালাই হচ্ছে মমিন বান্দাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহ তালা রোগ বালাই দিয়ে তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন অথবা তার কিছু গুনাহ মাফ করে দেন অথবা হিদায়েতও দিয়ে থাকেন অথবা আরো অনেক কিছুই আল্লাহ তালা করে দেন। আল্লাহতালার অনেক নিয়ামতের একটি হলো মধু। মধু খেলে মন ভালো থাকে, পাকস্থলী ভালো থাকে, লিভার পরিষ্কার হয়, এবং ঠান্ডার চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করা যায়। আবূ উবায় (রাঃ), থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ بْنِ سَرْجٍ الْفِرْيَابِيُّ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ بَكْرٍ السَّكْسَكِيُّ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ أَبِي عَبْلَةَ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا أُبَىٍّ ابْنَ أُمِّ حَرَامٍ، وَكَانَ، قَدْ صَلَّى مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ الْقِبْلَتَيْنِ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَقُولُ ‏"‏ عَلَيْكُمْ بِالسَّنَى وَالسَّنُّوتِ فَإِنَّ فِيهِمَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ ‏.‏ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا السَّامُ قَالَ ‏"‏ الْمَوْتُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ عَمْرٌو قَالَ ابْنُ أَبِي عَبْلَةَ السَّنُّوتُ الشِّبِتُّ ‏.‏ وَقَالَ آخَرُونَ بَلْ هُوَ الْعَسَلُ الَّذِي يَكُونُ فِي زِقَاقِ السَّمْنِ وَهُوَ قَوْلُ الشَّاعِرِ هُمُ السَّمْنُ بِالسَّنُّوتِ لاَ أَلْسَ فِيهِمُ وَهُمْ يَمْنَعُونَ جَارَهُمْ أَنْ يُقَرَّدَا

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উভয় কিবলার (বাইতুল মুকাদ্দাস ও কা’বা) দিকে নামায পড়েছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অবশ্যই তোমাদের সানা ও সান্নুত ব্যবহার করা উচিত। কারণ তাতে সাম ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘সাম’ কি? তিনি বলেনঃ ‘মৃত্যু’। রাবী আমর (রাঃ) বলেন, বিন আবূ আবলা বলেছেন, সান্নুত হলো এক ধরনের উদ্ভিজ্জ, অন্যরা বলেন, বরং তা ঘি রাখার চামড়ার পাত্রে রক্ষিত মধু। যেমন কবি বলেনঃ “তারা পরস্পর মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ থাকে ঘি ও সান্নুতের মত, তাই তাদের মধ্যে নাই কোন বিবাদ। তারা প্রতিবেশীকে ধোঁকার আশ্রয় নিতে বারণ করে”।
                                                                                                                    তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।