শরৎকাল রচনা অথবা তোমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল প্রবন্ধ রচনা

শরৎকাল রচনা অথবা তোমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল প্রবন্ধ রচনা

শরৎকাল রচনা অথবা তোমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল প্রবন্ধ রচনা

শরৎকাল 
সূচনা : যখন বৃষ্টির মেঘ আর দুঃখের কান্না থামে তখন প্রকৃতির আঙিনায় শিশির ভেজা পায়ের সাথে শরৎ আসে । শরৎ আসে নিঃশব্দে মৃদু হাওয়া নিয়ে। বাঙালি মায়ের সবুজ আঁচল জ্বলজ্বল করে তার অরুণ বরুণ কিরণমালায় । সেই মুহূর্তেই বিশ্বকবি তার নিজের মনের অজান্তেই বলে উঠে --
আজিকে তোমার মধুর মূরতি 
হেরিনু শারদ প্রভাতে 
হে মাতঃ বঙ্গ! শ্যামল অঙ্গ, 
ঝলিছে অমল শোভাতে।
রূপের বর্ণনা : ভাদ্রে শরৎ আসে। ভাদ্র-আশ্বিন তার লুকোচুরি খেলা খেলে। কার্তিকের কাছে তার বিদায়। শরৎ ঋতুর রানী। তার সৌন্দর্যে কোনো মলিনতা নেই, আছে আনন্দ, অবিরাম তৃপ্তি ও গভীর প্রশান্তি। শরতের সকালটা খুব মনোরম। সবুজ ঘাসের ডগায় শিশিরের ফোঁটা জমে। যেন ঘাসের উপর মুক্তার কণা জ্বলজ্বল করছে। দু'কূল মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদীর দুই ধারে রাশি রাশি কাশফুল ফুটে। কাশবনের হালকা বাতাস দোলা লাগে মনে। বিদ্রোহী কবি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠেন -
আজি, কাশবনে কে শ্বাস ফেলে যায়। 
মরা নদীর কূলে। 
সকালে পুবের আকাশ মোরগ ফুলের মত লাল হয়ে যায়। বলাকার দল নীল আকাশে উড়ে বেড়ায়। মেঘহীন আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘের দল ভেসে বেড়ায় মন খুলে। আকাশের নীল সাগর যেন সাদা মেঘের খেলা। আমরা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলি
আজি ধানের ক্ষেতে রোদ্র ছায়ায় 
লুকোচুরির খেলা, 
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলারে 
ভাই সাদা মেঘের ভেলা।
শরতের সাদা মেঘে চড়ে মন উড়ে যেতে চায় বহুদূরে। বৃষ্টি নেমে আসে প্রকৃতির এক নতুন ধারা যাকে আমরা বলি সবুজের ঝর্ণা ধারা। মাঠে সবুজ ধানের সমারোহ। ধানের শীর্ষে ফসলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তাই বিষণ্ণ কণ্ঠে কবি গেয়েছেন-
এমন ধানের ক্ষেতে ঢেউ খেলে যায়। 
বাতাস কাহার দেশে। 
শরৎ প্রকৃতিতে বিচিত্র ফুলের বাহার। শাপলা, পদ্ম, শেফালী, জুঁই প্রকৃতিকে সাজায় নানাভাবে। কবির ভাষায় তাই আমরা বলে উঠি 
কে এলো গো আমার দ্বারে শারদ প্রাতে 
শিউলী ফুলের মালাগাছি লয়ে হাতে। 
কাশের বনে রাশি রাশি 
ছড়িয়ে দিয়ে শুভ্র হাসি 
চরণ রেখে শিশির ধোয়া ঘাসের পাতে। 
এ সময় গাছে গাছে, নীল আকাশে ভেসে ওঠে দোয়েল-শ্যামা- ও পাপিয়ার গান। নদীর তীরে বসে তখন চথা-চবীর মেলা। প্রভাতে, আকাশ-বাতাসে, দূর্বাগাসে, শরতরাণী তার মিষ্টি সুবাস ছড়ায়, ভুলিয়ে দেয় সকলের মন। আমরা যেন আনন্দে উত্তেজিত হয়ে উঠি।
ডাকিছে দোয়েল, গাহিছে কোয়েল 
তোমার কানন সভাতে, 
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী 
শরৎ কালের প্রভাতে। 
শরৎ উৎসবের ঋতু : দুর্গাপূজা হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। শীতল শরতের জোছনাঝরা রাতে এই উৎসব কতই না আশ্চর্যজনক। এছাড়া শরৎকালে বিশ্বকর্মা পূজা ও লক্ষ্মী পূজা হয়। প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দে ভরপুর। 

শরতের উপহার: শরৎ হল হেমন্তের প্রস্তুতি পর্ব। তাই চুপিসারে শরৎ  সবুজ ধানের উপরে একটি ফসলের শীর্ষ তৈরি করে। শরতের এই আয়োজনে হেমন্ত ফসলে ভরা থালা উপহার দেয়। তাই কবি গেয়েছেন-
“পারে না বহিতে নদী জলভার, 
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর
এ সময় নদী-নালা মাছে ভরে যায়। বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রূপালী ইলিশ; সোনালি আশে ভরে গেছে বাজার। কাঁচা পদ্মসা কৃষকের হাতে আসে- আনে সুখ-শান্তি।
কাজকর্ম: এই সময়ে কৃষকদের কোনো বিশেষ কার্যক্রম থাকে না। পাট ও আউশ ধান কাটা আগেই শেষ হয়। কিছু এলাকায় আমন ধানের চারা লাগানো হয়।

শরতের বেদনা: শরৎ শুধু আনন্দই নয়, একটু কষ্টও বয়ে আনে। এ মৌসুমে সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। পানি কমতে শুরু করলে সর্বত্র কলেরা ও টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। অনেক সময় এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। এ সময় গোমড়কও দেখা দেয়।

উপসংহার: 'ঋতুরাণী' শরৎ আমাদের দেশের কবি-সাহিত্যিকদের ভাবিয়ে তোলে। শরতের মন মাতানো সৌন্দর্য সৌন্দর্য-পিপাসুদের মনকে উদাস করে তোলে। এ কারণেই শরৎ ঋতু আমাদের কাছে এত প্রিয়। আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অপরিসীম।


শরৎকাল রচনা for class 3, শরৎকাল রচনা for class, শরৎকাল রচনা hsc, শরৎকাল রচনা ssc, শরৎকাল রচনা for class 4, শরৎকাল রচনা পঞ্চম শ্রেণী, ছোটদের শরৎকাল রচনা, শরতের উৎসব রচনা, শরৎকাল রচনা, রচনা শরৎকাল রচনা শরৎকালের, শরতকাল রচনা, শরৎকালের রচনা, তোমার প্রিয় ঋতু শরৎকাল প্রবন্ধ রচনা, saratkal rachana, saratkal rachana bangla, sorot kal rochona, শরৎকাল রচনা, শরৎকাল বাংলা রচনা, রচনা শরৎকাল, বাংলাদেশের শরৎকাল রচনা, রচনা বাংলাদেশের শরৎকাল, শরৎকাল রচনা?, রচনা তোমার প্রিয় ঋতু শরৎ, Bangla Rachana on শরৎকাল