ঘুম না হওয়ার কারণ ও অনিদ্রার প্রতিকার

ঘুম না হওয়ার কারণ ও অনিদ্রার প্রতিকার

রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম ইনসমনিয়ার। সবারই কোনো না কোনো সময় রাতে ঘুম আসে না। তবে তা যদি দীর্ঘ সময় ঘটে ও দৈনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে এটি ইনসমনিয়ার লক্ষণ। ঠিকমতো ঘুম না হলে আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। তার সাথে আমাদের মন মেজাজ সারাদিন খিটখিটে হয়ে থাকে। সারাবিশ্বে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ ঘুম না হওয়ার সমস্যা ভুগছেন। আজকে আমরা জানবো কি সকল কারণে আমাদের ঘুমের সমস্যা হয়, তাতেই আমরা ঘুমের সমস্যা থেকে বিস্তার পেতে পারবো। 

মাদক সেবনের কারণে অনিদ্রা 
আমরা অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে চা, কফি, পান, জর্দা, নিকোটিন অথবা অন্য কোনো ধরণের মাদক সেবনে করে ঘুমাতে যায়। মনে করি এতে আমাদের অধিক ঘুম আসবে, আসলে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মাদক সেবনে করলে আমাদের মস্তিষের কার্যক্রিয়া কলাপ দুর্বল করে দেয় যার ফলে আমাদের ঘুম আসতে সমস্যা হয়।  

ঘুমের জন্য সঠিক পরিবেশ নির্বাচন না করার কারণে 
ঘুমের জন্য অবশ্যই সুন্দর পরিবেশ দরকার। অগোছালো ঘরে কখনো ভালো ঘুম হতে পারে না। তাই ঘুমানোর আগে অবশ্যই নিজ হাতে বিছানা ও ঘর পরিষ্কার ও সুন্দর রাখুন। মনে রাখতে হবে ঘুমানোর জায়গাটি ঠান্ডা রাখার কারণ ঘুমানোর জায়গাটি গরম থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। 

ঘুমের আগে গোসল না করার কারণে 
যদি আপনি দীর্ঘদিন অনিদ্রা সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনি ঘুমের আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। অনেকে গরমে ঠান্ডা পানি ও শীতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে চান, যা মোটেও ঠিক নয়। চেষ্টা করবেন সাধারণ পানি দিয়েই সবসময় গোসল করবেন।    

নিয়মিত ব্যয়াম না করার কারণে 
প্রতিদিন নিয়মিত ঘুমের আগে ২০ মিনিট ব্যয়াম করুন। ব্যয়াম করলে আপনার কোষ গুলি সক্রিয় হতে থাকবে। তারফলে আপনার ঘুম হবে। যারা ব্যয়াম করে না তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। কারণ তাদের দেহ তো কান্ত হয় না তাই ঘুমোও আসে না। সবসময় তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চেষ্টা করবেন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠবেন। সকালে সূর্যের আলোতে ২০ মিনিট ব্যয়াম করবেন, এতে আপনার মস্তিষ্ক রাত ও দিনের পার্থর্ক বুজতে পারবে।  

মানুষিক চাপের কারণে ঘুম না হওয়া 
অনেক সময় আমরা কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করে ঘুমাতে যাই তখন আমাদের ঘুম আসে না তাই সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার সকল যাবতীয় কাজ রাত ১০ টার ভিতরে শেষ করতে, তাতে আপনার মনে প্রশান্তি আসবে সাথে হবে ঘুম। আবার প্রিয়জনের মৃত্যু বা সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণেও ঘুম না হতে পারে। আপনার যদি পরীক্ষা অথবা সাক্ষাৎকার থাকে তাহলেও টেনশনের কারণেও ঘুম না হতে পারে। তাই মনকে সবসময় মজবুত রাখার চেষ্টা করবেন। সবকিছুকে এতটাও গুরুত্ব দেবেন না যার কারণে আপনি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েন।  

অনিয়মিত ঘুমের রুটিনের কারণে 
একজন আদশ মানুষ নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যাই। যারা একসময় ১০ টাই আবার ১২ টাই অথাৎ এক এক সময় ঘুমাতে যাই তারা ঠিক ঐ সময়ে ঘুমাতে পারে না। তাই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। 

ওষুদের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে 
আমরা বিভিন্ন ধরণের ওষুধ খেয়ে থাকি তাঁর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে এতেও আমাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। এরূপ সমস্যা হলে আপনার ডাক্তারকে জানান। 

গর্ভবতী মায়েদের ঘুম না হওয়া 
বাচ্চা জম্ম ১২ সপ্তাহের থেকে গর্ভবতী মায়েদের ঘুমের সমস্যা দেখা দিয়ে পারে। কারণ ঐ সময়ে বাচ্চাদের শরীরের গঠন বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

শরীরের রোগের কারণে 
শরীরের ভিতরের কোনো অঙ্গ নষ্ট হয়ে গেলে ঘুম আসতে সমস্যা হয়। আবার যারা হাঁপানি, কিডনি রোগ , মেনোপজ, এবং হৃদরোগের রোগের কারণেও ঘুম হয় না। 
 

কিছু সতর্কতা ও অনিদ্রার প্রতিকার: 
১। কখনও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাবেন না। আর চেষ্টা করবেন ঘুমের ওষুধ না খাওয়ার। 
২। বিকাল ৫ টার পর কখনও কোনো চা, কফি, এবং সিগেরেট খাবেন না। 
৩। ঘুমের আগে গরম দুধ ও ডিম খাবেন। 
৪। দিনের বেলায় ঘুমাবেন না। 
৫। খাবারের তালিকায় লেটুস যোগ করুন। 
৬। ঘুমের জন্য আদশ ফল হলো, কলা, কাজু বাদাম, আনারস, এবং কিউই।