অধ্যবসায় বাংলা রচনা odhaboshay rochona bangla

অধ্যবসায় বাংলা রচনা odhaboshay rochona bangla

অধ্যবসায় বাংলা রচনা odhaboshay rochona bangla any class

অধ্যবসায় বাংলা রচনা ক্লাস ষষ্ট শ্রেণী থেকে দাদ্বশ শ্রেণী পর্যন্ত। odhaboshay rochona bangla 

সংকেত: ভূমিকা-অধ্যবসায় কী—অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা/গুরুত্ব—ছাত্র-জীবন ও অধ্যবসায়-অধ্যবসায় ও মানুষ-অধ্যবসায় ও প্রতিভা-অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ বা দৃষ্টান্ত-উপসংহার।
 

ভূমিকা :
“জীবনের প্রতি অধ্যায় চাই দৃঢ় প্রত্যয়,
চাই ঘাত-প্রতিঘাত লৌহ কঠিন সত্য হৃদয়।”
—কবিতার এই পঙ্ক্তিতেই অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র লুকিয়ে আছে। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, 'Our life is full of struggle' জীবনে সাফল্য লাভের একমাত্র হাতিয়ার হলো অধ্যবসায়। এটি মানুষের একটি মহৎ গুণ। তাই জগতে যে অধ্যবসায়ী সে-ই জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারে। সত্যিকার অর্থে কাজে বিফলতা সত্ত্বেও অসাধ্য কাজটি সুসম্পন্ন করার জন্য অবিচল উৎসাহ, দৃঢ় সংকল্প, অসীম ধৈর্য্য সব কিছুর নাম অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া পৃথিবীতে কোনো মহৎ কাজ সাধিত হয় না। জীবনবাদী লেখক ডা. লুৎফর রহমানের উক্তি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়, “সাধনার কোনো কোনো ব্যাপারে যদি প্রথমবারে ব্যর্থ মনোরথ হও, তবে তড়িৎ যেও না— বারে বারে আঘাত কর, দুয়ার ভেঙ্গে যাবে।” আর তাই তো কবির যথার্থ উচ্চারণ-
“পারিব না একথাটি বলিও না আর, 
একবার না পারিলে দেখ শতবার। *


অধ্যবসায় কী : এ পৃথিবীতে সফলতার জন্য চাই সাধনা; সাধনার জন্য চাই একাগ্রতা এবং নিষ্ঠা। বার বার কোন কাজের ব্যর্থতার গ্লানি মুছে ফেলে নিজেকে সাফল্যের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্য যে মহান প্রচেষ্টা, তারই নাম অধ্যবসায়। অর্থাৎ পরম ধৈর্যের সাথে কঠোর পরিশ্রমের নামই অধ্যবসায়। এই পৃথিবীতে যাঁরা বড় হয়েছেন, খ্যাতনামা হয়েছেন, তাঁরা সবাই অধ্যবসায়ের দ্বারাই হয়েছেন। অধ্যবসায়ী হতে না পারলে জীবনের পরম আকাঙ্ক্ষিত দ্রব্যটি মরীচিকার মতোই থেকে যায়।

অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা/গুরুত্ব : অধ্যবসায়ের গুরুত্ব জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই অপরিসীম। আর উদ্যম ব্যতিরেকে জগতে কোনো কাজই সুন্দর এবং সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় না। এ প্রসঙ্গে বাংলা সাহিত্যের কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার বলেছেন,
“কেন পাচ্ছ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ,
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?”

প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনে চলার পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই। পদে পদে বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে জীবনের উন্নতির সোপান হলো অধ্যবসায়। তাই বলা হয় 'Industry is the mother of good luck', 'পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি'। আর পরিশ্রমের নামই অধ্যবসায়। ঘনঘোর অমানিশা কেটে গেলে পূর্ণিমার জোছনা বিধৌত রাতের দেখা পাওয়া খুব সহজ হয়। তেমনি মানুষের জীবন উদিত সাফল্যের সৌভাগ্যের শুকতারা। কারণ, কোনো কাজই কঠিন নয়। কোনো কাজে একবার ব্যর্থ হলেই ভেঙে পড়া উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, 'Failure is the pillar of success'; 'ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি'। অধ্যবসায়ের জোরেই পৃথিবীর মানুষ অসাধ্য সাধন করেছে। ধর্মপ্রচারক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সেনানায়ক সবাই অধ্যবসায়ের জন্যই সফলকাম হয়েছেন। অসীম ধৈর্যসহ নিজ নিজ পথে অগ্রসর হয়ে সার্থক হয়েছেন হাজার বছরের সভ্যতা অধ্যবসায়ের ফলে মানুষ তার মেধা ও হাতকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছেন। অধ্যবসায়ের জোর মানুষ রপ্ত করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং তা দিয়ে মানুষ জলেস্থলে-অন্তরীক্ষে আধিপত্য বিস্তার করেছে।


ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায় : ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। কারণ, ছাত্রজীবনই জীবন গঠনের উপযুক্ত সময়। আলস্যপরায়ণ শ্রমবিমুখ ছাত্র কখনোই জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে না। যদি কোনো ছাত্র কঠিন অংকের সম্মুখীন হয়ে সে সমাধান না করেই উঠে পড়ে, তবে সে কোনো দিন আর তা করতে পারবে না। অধ্যবসায়ী ছাত্র কম মেধাসম্পন্ন হলেও সে জীবনে উন্নতির শীর্ষ শিখরে আরোহণ করতে পারে। ছাত্রজীবনের পরে কর্মজীবনেও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। কেউ একবারের চেষ্টায় সফলকাম না হলেও পুনঃপুনঃ চেষ্টা করে সফলকাম হতে পারে।

অধ্যবসায় ও মানুষ : মানুষের জীবনে সফলতা নির্ভর করে কঠিন কাজের সফলতার ওপর। আদিকাল থেকে মানুষ প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে চলেছে। দীর্ঘদিনের চেষ্টা ও সাধনা দিয়েই মানুষ গড়ে তুলছে জীবনকে, সফল ও সুন্দর করে তুলছে পৃথিবীকে। অধ্যবসায়ই জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি। মানুষের জীবনটা জটিল। আর এ জটিল কাজে সফলতা লাভ করার জন্য দরকার অধ্যবসায়, ধৈর্য ও ক্লান্তিহীন পরিশ্রম। অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই মানুষ গড়ে তুলেছে রোম নগরী। এই জন্য বলা হয়— 'Rome is not built in a day.' মানুষ যদি একবার পরাজিত হয়েই দুঃখ গ্লানিতে নিজেকে ব্যর্থ মনে করে, তার জীবনে কখনো উন্নতি আসে না। সমস্ত বাধা-বিঘ্ন, প্রতিকূলতা অতিক্রম করার শক্তি যার যত বেশি তার সফলতাও তত বেশি। বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। পৃথিবীর যত আবিষ্কার, যত গবেষণার সফলতা সবই অধ্যবসায়ের ফসল। মূলত, মানব সমাজের যা কিছু আছে সবই অধ্যবসায়ের অবদান।

অধ্যবসায় ও প্রতিভা : একটি বিদেশি প্রবাদে বলে, সমস্ত সাফল্যের মূলে মেধা থাকে যতখানি ঠিক ততখানি থাকে অধ্যবসায়। এই প্রবাদের সার্থকতা লেখা-পড়ার প্রসঙ্গে যতখানি বুঝা যায়, এমন আর কিছুতেই নয়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রও যদি শ্রমকুণ্ঠ হয়, তা হলে তার সাফল্যের সম্ভাবনা সুদূরপরাহত বললেই চলে। মেধা হচ্ছে ধারালো অস্ত্রের মতো, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাহায্যে তাকে শাণ দিতে হয়। তবেই সেই অস্ত্রের সদ্ব্যবহার সম্ভব হতে পারে। অনেক লোকের ধারণা এরূপ যে, অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী না হলে বড় বড় ও মহৎ কাজ সাধন করা যায় না। কিন্তু অধ্যবসায় ও পরিশ্রম ব্যতীত শুধু প্রতিভায় কাজ হয় না। প্রতিভা সম্বন্ধে পণ্ডিতেরা বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কেউ বলেন, “অবিরাম শ্রম করার প্রবৃত্তিকেই প্রতিভা বলে”। আবার কেউ বলেছেন, “উদ্যোগ করার ক্ষমতাই প্রতিভা।” কেউ বলেছেন, “প্রাণে সর্বদা উৎসাহ বহ্নি প্রজ্বলিত করার ক্ষমতাকেই প্রতিভা বলে।” অন্য এক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন, “সহিষ্ণুতাকেই প্রতিভা বলা হয়।” জগতে বহু বিখ্যাত লোক জন্মেছেন যারা প্রতিভাবান অপেক্ষা অধ্যবসায়ী ছিলেন বেশি। তাই প্রতিভা লাভ করতে হলে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। অধ্যবসায় সহকারে পরিশ্রম না করলে, নিছক প্রার্থনা বা তক্তির মাধ্যমে কোন কিছুতেই সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব। মেধা, সুযোগ কোন কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না, যদি না তাদের ব্যবহারিক প্রয়োগ অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা না হয়।

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ বা দৃষ্টান্ত : পৃথিবী মানুষের জন্য কোনো স্বর্গ নয়। প্রতিনিয়ত এখানে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। অলস ও নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা কোনোমতে বেঁচে থাকে। মানুষ হিসেবে জীবন ধারণ করতে হলে অবশ্যই তাকে পরিশ্রমী হতে হবে। রাজা রবার্ট ব্রুস্ একবার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। এমন সময় দেখলেন একটি মাকড়সা পরপর ৬ বার পরাজিত হবার পর সপ্তম বারে জাল বুনতে সক্ষম হলো। এতে তিনি উজ্জীবিত হয়ে আবার যুদ্ধ করলেন এবং বিজয়ী হলেন। হযরত মোহাম্মদ (সা) ধৈর্য সহকারে ধর্ম প্রচারে সমর্থ হয়েছিলেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, "Imposible is a word, which is only found in the dictonary of fools. - (অর্থাৎ “অসম্ভব শব্দটা কেবল বোকাদের অভিধানেই দেখা যায়।' অধ্যবসায়ের জন্যেই তিনি সামান্য পরিবারে জন্ম নিয়ে ফরাসি জাতির ত্রাতা হতে পেরেছিলেন। সর্বোপরি বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত আছে অধ্যবসায়ের গুণেই। বিজ্ঞানীরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন বলেই আজ হাজার হাজার আবিষ্কার তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে।

উপসংহার : ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন" বা "করেঙ্গা অর মরেঙ্গা”-এই প্রবাদগুলো অধ্যবসায়ের পরিচায়ক। নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়ই কোনো কিছুর অধিকারী হওয়ার পেছনে কাজ করে। অধ্যবসায় ব্যতীত কোনো সৃষ্টি বা গড়া সম্ভব নয়। তাই যে কোনো কাজ 'Do or die' এই মনোভাব নিয়ে আত্মপ্রতায়ী হয়ে করলে জয় সুনিশ্চিত। পরিশেষে বলা যায়, সঙ্কল্পে যারা অটল, জীবনকে মোহময়রূপে সাজাতে যারা অঙ্গীকারবদ্ধ, কর্মের প্রতি যারা আস্থাবান, মেধাকে যারা শাণিত করতে ব্যস্ত, তারাই সকল কর্মে বিজয়ী হয়। একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষের চলার পথ নিষ্কণ্টক, বাধা- বিপত্তি হয় দূরীভূত, সাফল্য ধরা দেয় হাতের মুঠোয়। অধ্যবসায়ের গুণেই দেশ, জাতি, কাল, স্থানে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে ওঠে। তাই আমাদের মন্ত্র হওয়া উচিত,

 
“ভেঙ্গে যাবে বাধন ভাঙ্গবে না তবু প্রতায় সাধন, ভাঙ্গবে না কভু সৃজন মনন। 
ধিক। শত প্রলয় মহাপ্রলয় দীপ্ত বাহুতে উড়াও আজি আত্মার মহাবিজয়।”
বাংলা ভাষা শিক্ষণ (ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ)


অধ্যবসায় রচনা class 7, অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৮, অধ্যবসায় রচনা class 9, অধ্যবসায় রচনা, অধ্যবসায় রচনা ক্লাস ৫, অধ্যবসায় রচনার 20 পয়েন্ট, অধ্যবসায় কি, অধ্যবসায় রচনা ssc, অধ্যবসায় বাংলা রচনা, অধ্যবসায়, odhaboshay rochona bangla, oddhaboshay bangla rochona class 7, oddhaboshay bangla rochona class 9, oddhaboshay bangla rochona class 6, oddhabosay bangla rochona class 10, অধ্যবসায় রচনা ১০ পয়েন্ট, oddhaboshay bangla rochona class, oddhabosay bangla rochona