দাজ্জালের আবির্ভাব এবং শেষ পরিণতি ও ইয়াজুয মাজুযের আবির্ভাব

দাজ্জালের আবির্ভাব এবং শেষ পরিণতি ও ইয়াজুয মাজুযের আবির্ভাব

দাজ্জালের আবির্ভাব
রাসূলুল্লাহ (স) তাঁর এক ভাষণের কমবেশী অংশ দাজ্জালের ঘটনা বর্ণনায় এবং সে দাজ্জাল থেকে ভয় প্রদর্শনেই কাটিয়ে দেন। সে ভাষণে একথাও বলেন যে, দুনিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এর চেয়ে বড় হাঙ্গামা-দাঙ্গা আর নেই। সমস্ত নবী (আঃ) নিজ নিজ উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন। আমি সর্বশেষ নবী আর তোমরা সর্বশেষ উম্মত। সে নিশ্চিতরূপে তোমাদের মধ্যেই আসবে । যদি সে আমার জীবদ্দশায় এসে পড়ে তবে আমি তাকে বাধা দান করবো। আর যদি আমার পরে আসে তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আক্রমণ হতে নিজেকে বাঁচাতে হবে। আমি আল্লাহ তা'আলাকেই প্রত্যেক মুসলমানের অভিভাবক করে যাচ্ছি। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে বের হবে। সে ডান ও বামে ঘুরাফিরা করবে ইরাকের জনমণ্ডলী দেখে তোমরা অটল থাকবে। জেনে রেখো আমি তোমাদেরকে তার এমন পরিচয় জানিয়ে যাচ্ছি যা অন্য কোন নবী তার উম্মতকে জানিয়ে যাননি। সে প্রথমতঃ দাবী করবে আমি নবী-আমি নবী। 
কাজেই তোমরা স্মরণ রেখো যে, আমার পরে কোন নবী নেই। এর চেয়েও বেড়ে গিয়ে বলবে আমি আল্লাহ, অতএব তথায় তোমরা জেনে রেখো যে, আল্লাহকে এই চোখে কেউ দেখতে পারে না। মৃত্যুর পরে তাঁর দেখা পাওয়া যেতে পারে না। আরও স্মরণ রেখে যে, সে এক চক্ষু বিশিষ্ট হবে। চক্ষুদ্বয়ের মধ্যে যে স্থান রয়েছে সে স্থানে তার কাফির লিখিত থাকবে যা প্রত্যেক শিক্ষিত অশিক্ষিত মোট কথা প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি পড়তে পারবে। তার আগুন হবে আসলে বেহেশত এবং বাগানটি হবে প্রকৃতপক্ষে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যাকে সে দোযখে নিক্ষেপ করবে সে যেন আল্লাহ তা'আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে এবং সূরা কাহাফের প্রাথমিক আয়াত গুলো পাঠ করে । ঐ আগুন তার জন্য ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হবে যাবে। তার এক হাঙ্গামা এও হবে যে, সে এক বেদুইনকে বলবে আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করতে পারি তবে তুমি আমাকে প্রভু বলে স্বীকার করবে? এমন সময় দু'জন শয়তান তার পিতা মাতার আকারে প্রকাশিত হবে এবং তাকে বলবে বৎস এটাই তোমার প্রভু। সুত্রং তাকে মেনে নাও। তার আর একটা ফিৎনা এও হবে যে, তাকে একটি লোকের উপর জয়যুক্ত করা হবে। সে তাকে করাত দ্বারা ফেড়ে দু'টুকরা করে দেবে তার পর সে জনগণকে বলবে আমার এ বান্দাকে তোমরা দেখ, এখন আমি তাকে জীবিত করবো। কিন্তু পুনরায় সে এ কথাই বলবে যে, তার প্রভু আমি ছাড়া অন্য কেউ। অতঃপর দুর্বৃত্ত তাকে উঠা বসা করাবে এবং বলবে: তোমার প্রভু কে? সে উত্তরে বলবে: আমার প্রভু আল্লাহ এবং তুমি তাঁর শত্রু দাজ্জাল। আল্লাহর শপথ এখন তো আমার পূর্বাপেক্ষাও বেশি বিশ্বাস হয়েছে। 

অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ “এ মুমিন ব্যক্তি আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ শ্ৰেণার জান্নাতের অধিকারী হবে।” আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন: এ হাদীসটি শুনার পর আমার ধারণা হয় যে, এ লোকটি উমার ইবনুল খাত্তাবই (রাঃ) হবেন । তাঁর শাহাদাত লাভ পর্যন্ত আমাদের ধারণা এটাই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তার একটি হাঙ্গামা এও হবে যে, সে আকাশকে পানি বর্ষণ করার নির্দেশ দেবে এবং আকাশ হতে পানি বর্ষিত হবে। সে যমীনকে ফসল উৎপাদন করার নির্দেশ দেবে এবং যমীন হতে ফসল উৎপাদন হবে। তার আর একটি ফিৎনা হবে এই যে, সে একটি গোত্রের নিকট যাবে এবং তারা তাকে বিশ্বাস করবে না। সে সময়ই তাদের সমস্ত জিনিস ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর সে অন্য গোত্রের নিকট যাবে । তৎক্ষণাৎ তার হুকুমে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত এবং জমিতে ফসল উৎপাদিত হবে। তাদের গৃহপালিত পশু পূর্বাপেক্ষা বেশি মোটা তাজা ও দুগ্ধবতী হয়ে যাবে। তারা মক্কা ও মদীনা ছাড়া যমীনের সমস্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াবে। যে যখন  মদীনামুখী হবে তখন সারা পথে সে তরবারী ধারা ফেরেস্তাগণকে দেখতে হবে। সে তখন 'সানতার' শেষ প্রান্তে 'যারীবে আহসারে নিকট থেমে যাবে। অতঃপর মদীনায় তিনটি ভূমিকম্প হবে। ফলে মদীনায় যত মুনাফিক নর ও নারী থাকবে সবাই মদীনা হতে বেরিয়ে গিয়ে দজ্জালের সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে যাবে। এভাবে মদীনা নিজের মধ্য হতে অপবিত্র লোকদেরকে দূর করে দেবে যেমন-লোহার ভাটা লোহার মরিচা দূর করে থাকে। সেদিনের নাম হবে 'ইয়াইমুল খালাস’ (মুক্তির দিন)।

উন্মে সুরাইকা (রা:) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু কে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)!  সেদিন আরববাসী কোথায় থাকবেন?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেন: প্রথমত তারা থাকবে খুব কম এবং তাদের অধিকাংশ থাকবে বাইতুল  মুকাদ্দাসে। তাদের ইমাম হবে একজন সৎ ব্যক্তি। সে ফজরের নামায পড়তে থাকবে এমন সময় ঈসা (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। ঐ ইমাম তখন পিছনে সরতে থাকবে যেন ঈসা (আঃ) ইমামতি করেন । 

কিন্তু তিনি তার কাঁধে হাত রেখে বলবেন: “তুমি সামনে এগিয়ে নামায পড়িয়ে দাও, ইকামত তোমার জন্যই দেয়া হয়েছে। তিনি বলবেন ? দরজা খুলে দাও।' দরজা খুলে দেয়া হবে। এদিকে দাজ্জাল সত্তর হাজার সৈন্য নিয়ে হাযির হবে। তাদের মস্তকে মুকুট থাকবে এবং তাদের তরবারীর উপর সোনা থাকবে। দাজ্জাল তাকে দেখে এমনভাবে গলতে থাকবে যেমন ভাবে পানিতে লবণ গলে থাকে। অতঃপর সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতঃ পালাতে থাকবে কিন্তু তিনি বলবেন: আল্লাহ তাআলা এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, তুমি আমার হাতেই মার খাবে, সুতরাং ওটা হতে রক্ষা পেতে পার না। অতএব, তিনি তাকে পূর্ব দরজা লাদ-এর নিকট ধরে নিবেন এবং সেখানে তাকে হত্যা করে ফেলবেন। তখন ইয়াহুদীরা হতবুদ্ধি হয়ে যাবে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করবে। কিন্তু তারা কোথাও মাথা লুকানোর জায়গা পাবে না ।
প্রত্যেক পাথর, বৃক্ষ, দেয়াল ও জীবজন্তু বলতে থাকবে: “হে মুসলমান ! এখানে ইয়াহদী রয়েছে । এসে তাকে হত্যা কর।' তবে বাবলা গাছ বলবে না। কেননা সে ইয়াহদীদের গাছ।
রাসূলুল্লাহ (স) বলেনঃ “সে চল্লিশ বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করবে। বছর হবে অর্ধ বছরের মত, বছর হবে মাসের মত, মাস হবে জুম'আর মত এবং শেষ দিনগুলো হবে ‘শারাবার মত। তোমাদের কোন লোক সকালে শহরের একটি দরজা হতে চলতে আরম্ভ করে দ্বিতীয় দরজায় পৌছতে পারবেনা। এমন সময়েই সন্ধ্যা হয়ে যাবে৷

জনগণ জিজ্ঞেস করেন: হে আল্লাহর রাসূল (স) ঐ ছোট দিনগুলোতে আমরা কিভাবে নামায আদায় করবো? তিনি বলেনঃ তোমরা এ দীর্ঘ দিনগুলোতে যেমন ভাবে অনুমান করে নামায পড়ছো, তখনও সেভাবেই অনুমান করে নামায পড়বে।
দাজ্জাল প্রকাশিত হওয়ার তিন বছর পূর্বেই ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে।
প্রথম বছরে বৃষ্টির এক-তৃতীয়াংশ আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর ভূমির উৎপাদনেরও এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয় বছরে আকাশকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, সে যেন বৃষ্টি দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ রাখে এবং এ নির্দেশ ভূমিকেও দেয়া হবে যে, সে যেন উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াশ কম করে। তৃতীয় বছর আকাশ হতে বৃষ্টির এক ফোটাও বর্ষিত হবে না।

অনুরূপভাবে ভূমিতে একটি চারাগাছও জন্ম নেবে না। সমস্ত জীবজন্তু এ দুর্ভিক্ষে ধ্বংস হয়ে যাবে ।
কিন্তু আল্লাহ পাক যাকে রক্ষা করবেন সেই রক্ষা পাবে । তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়: তাহলে সে সময় কিভাবে জীবিত থাকবে? তিনি বলেন: সে সময় তাদের খাদ্যের স্থলবর্তী হবে তাদের লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা, আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করা, সুবহানাল্লাহ পাঠ করা এবং আল-হামদুলিল্লাহ বলা। ইবনে মাজাহ (রঃ) বলেন, “আমার উস্তাদ তাঁর উস্তাদ থেকে শুনেছেন, তিনি বলতেন: এ হাদীসটি এ যোগ্যতা রাখে যে, শিশুদের শিক্ষক শিশুদেরকেও এটা শিক্ষা দিবেন, এমনকি লিখিয়ে দেবেন, যেন তাদেরও এটা স্মরণ থাকে।
অত্র হাদীসটি গরীব বটে, কিন্তু এর কোন কোন অংশের প্রমাণ স্বরূপ অন্য হাদীসও রয়েছে । (ইবনে কাসীর)
নাওয়াস ইবনে শামআন (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) একদা সকালে দাজ্জালের বর্ণনা দেন এবং এমনভাবে তাকে উঁচু ও নীচু করেন যে, আমাদের মনে হয়, না জানি সে মদীনার খেজুরের বাগানেই বিদ্যমান রয়েছে । অতঃপর আমরা তার নিকট ফিরে আসলে আমাদের চেহারা দেখে আমাদের মনের অবস্থা বুঝে নেন এবং জিজ্ঞেস করেন? ব্যাপার কি?" তখন আমরা তা বর্ণনা  করলে তিনি বলেনঃ “তোমাদের উপর দাজ্জালের চেয়েও আর একটা বেশি ভয় রয়েছে। আমার উপস্থিতিতে যদি সে বের হয় তবে আমি তাকে বুঝে নেবো। কিন্তু যদি আমার পরে সে বের হয়  তবে প্রত্যেক মুসলমানেরই কর্তব্য হবে তাকে বাধা দেয়া। 

আমি আল্লাহ তা'আলাকেই প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিনিধি বানিয়ে দিয়েছি। জেনে রেখো, সে যুবক হবে টেরা চক্ষু বিশিষ্ট। এটাও বুঝে নাও যে, সে দেখতে অনেকটা আবদুল উযযা মত হবে। তোমাদের সে তাকে দেখবে সে যেন সূরা কাহাফের প্রাথমিক আয়াতগুলো পাঠ করে নেয়। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী প্রান্ত থেকে বের হবে এবং ডানে বামে ঘুরে বেড়াবে। ওহে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা (ঈমানের উপর ) খুব অটল থাকবে।" ওহে আল্লাহর বান্দারা!  তোমরা (ঈমানের উপর) খুব অটল থাকবে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: হে আল্লাহর রাসূল (স)! সে কতদিন অবস্থান করবে।” তিনি বললেনঃ “চল্লিশ দিন। তার মধ্যে একটি দিন হবে এক বৎসরের সমান।” অতঃপর আমরা জিজ্ঞেস  করি, যে দিনটি এক বৎসরের সমান হবে সেদিন কি একদিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? তিনি বলেনঃ “না, বরং তোমরা অনুমান করে নেবে। আমরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (স)! তাদের চলার গতি কিরূপ দ্রুত হবে? তিনি বলেনঃ “মেঘ যেমন বাতাসে তাড়িত হয়ে চলতে থাকে। সে একটি গোত্রকে নিজের দিকে আহবান করবে। তারা তাকে মেনে নেবে।”

তখন তাদের উপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হবে; যমীন হতে ফসল উৎপাদিত হবে এবং তাদের গৃহপালিত পশুগুলো মোটা তাজা হয়ে যাবে ও খুব বেশি দুধ দেবে। সে আর এক সম্প্রদায়ের নিকট যাবে। তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলবে ও অস্বীকার করবে। সে সেখান থেকে ফিরে আসবে। তখন তাদের হাতে ধন-মাল কিছুই থাকবে না। সে অনুর্বর ভূমির উপর দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেবে, “হে  যমীন তোমার ধনাগার বের করে দাও।" তখন যমীনের মধ্য হতে ধন-ভান্ডার বেরিয়ে আসবে।

সে তখন মৌমাছির মত ঐ ধনের পেছনে পেছনে ফিরতে থাকবে। সে একজন নব্য যুবককে আহবান করবে এবং তাঁকে হত্যা করতঃ দু'টুকরা করে এতদূর নিক্ষেপ করবে যত দূরে একটি তীর চলে যায় । ঐ সময় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আঃ)-কে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি দুটি চাদর পরিহিত অবস্থায় দুজন ফেরেস্তার ডানার উপর হাত রেখে দামেস্কের পূর্বদিকের সাদা স্তম্ভের নিকট অবতরণ করবেন । যখন তিনি মস্তক ঝুঁকাবেন তখন তাঁর মস্তক থেকে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে পানি ঝরে পড়বে এবং যখন তিনি মস্তক উত্তোলন করবেন তখন ঐ ফোঁটাগুলো মুক্তার মত গড়িয়ে পড়বে। যে কাফির পর্যন্ত তার শ্বাস পৌছাবে সে মরে যাবে এবং তাঁর শ্বাস ঐ পর্যন্ত পৌছবে যে পর্যন্ত দৃষ্টি পেীছে থাকে।
তিনি দাজ্জালের পেছনে ধাওয়া করবেন এবং 'লুদ' নামক স্থানে তাকে ধরে ফেলে সেখানেই হত্যা করবেন। অতঃপর তিনি ঐ লোকদের নিকট আসবেন যারা এ হাঙ্গামায় রক্ষা পেয়ে যাবে। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলিয়ে দেবেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করবেন। অতঃপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঈসা (আঃ)-এর নিকট ওহী আসবে।
আল্লাহ তা'আলা তাকে বলবেনঃ “আমি আমার এমন বান্দাদেরকে প্রেরণ  করেছি যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউই করতে পারবে না। তুমি আমার এ বিশিষ্ট বান্দাদেরকে তূর পর্বতের নিকট নিয়ে যাও।” (ইবনে কাসীর)


দাজ্জালের শেষ পরিণতি
রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: মিরাজের রাত্রে আমি ইব্রাহীম (আঃ) এবং ঈসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। তারা পরস্পরের মধ্যে কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকেন । ইব্রাহীম (আঃ) বলেন : 'এ সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।' মূসা (আঃ)-ও এরুপই বলেন। কিন্তু ঈসা (আঃ) বলেন : “এর সঠিক জান আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারো কাছে নেই। হ্যাঁ, তবে আমার প্রভু আমার নিকট যে অঙ্গীকার করেছেন তা এই যে, দাজ্জাল বের হবে। দুটি দল তার সঙ্গী হবে। সে আমাকে দেখে এমন ভাবে গলে যাবে যেমনভাবে সীসা গলে যায়। আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করে দেবেন । এমন কি পাথর ও গাছ বলবে হে মুসলমান! এখানে আমার পিছনে একটি কাফির আছে তাকে হত্যা কর । সুতরাং আল্লাহ তা'আলা তাদের সকলকে ধ্বংস করবেন এবং মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে নিজ নিজ গ্রাম ও শহরে ফিরে যাবে। এরপরে ইয়াজুয ও মাজুয বের হবে এবং চতুর্দিক থেকে তারা আক্রমণ চালাবে। সমস্ত শহরকে তারা ধ্বংস করবে। যেসব স্থান তারা অতিক্রম করবে এ সবই ধবংস করে দেবে। যে পানির পার্শ্ব দিয়ে তারা গমন করবে তার সবই পান করে নেবে। লোকেরা পুনরায় আমার নিকট ফিরে আসবে। আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করবো। তিনি তখন তাদের সকলকেই একই সাথে ‘ধ্বংস করে দেবেন। কিন্তু তাদের মৃত দেহের সুগন্ধে বাতাস দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যাবে। ফলে চতুর্দিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। অতঃপর এত বেশি বৃষ্টি বর্ষিত হবে যে, ঐ সমস্ত মৃতদেহকে ভাসিয়ে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে । সে সময় কিয়ামতের সংঘটন এত নিকট হবে যে, যা কেউ জানতে পারবে না।

উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের তিনাট শহর হবে, একটি হবে দুটি সমুদ্রে মিলিত হওয়ার স্থানে, দ্বিতীয়টি হবে হীরায় এবং তৃতীয়টি হবে সিরিয়ায়। (ইবনে কাসীর)

এসময় মানুষ তিনটি সন্ত্রাসের সম্মুখীন হবে। অতঃপর দাজ্জাল বের হবে। তারা প্রথম শহরটিতে যাবে। সেখানকার লোক তিনটি অংশে বিভক্ত হবে। এক অংশ বলবে আমরা তাদের মোকাবিলা করবো এবং কি সংঘটিত হয় তা দেখবো। দ্বিতীয় দলটি গ্রামের লোকের সাথে মিলিত হয়ে যাবে এবং ততীয় দল তাদের নিকটবর্তী শহরে চলে যাবে। দাজ্জালের সাথে সত্তর হাজার লোক থাকবে। তাদের মাথায় মুকুট থাকবে। তাদের অধিকাংশই হবে ইয়াহূদী ও স্ত্রীলোক। এখানকার মুসলমানগণ একটি ঘাটিতে আটক থাকবে।

তাদের যেসমস্ত গৃহপালিত পশু মাঠে চরতে গিয়েছিল ঐগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের বিপদ খুব বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। ক্ষুধার তাড়নায় তাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটময় হয়ে পড়বে। এরূপ সংকটময় অবস্থায় সমুদ্রের মধ্য থেকে তাদের কানে শব্দ আসবে-“হে লোক সকল! তোমাদের জন্য আহার্য এসে গেছে। এ শব্দ শুনে লোক গুলো খুব খুশি হবে। কেননা, তারা বুঝতে পারবে যে, এটা কোন পরিতৃপ্ত ব্যক্তির কথা।
ঠিক ফজরের নামাযের সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম ( আঃ) অবতীর্ণ হবেন । মুসলমানদের নেতা তাকে বলবেন ? “হে রূহুল্লাহ (আঃ) ! আগে আসুন এবং নামায পড়িয়ে দিন ।” কিন্তু তিনি বললেনঃ "এ উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক কিছু সংখ্যক লোকের আমীর রয়েছে। কাজেই এ দলের আমীরই তাদের নামাযের ইমাম হৰে।” অতএব, তাঁদের আমীরই ইমাম হয়ে নামায পড়াবেন। নামায শেষ করেই ঈসা (আঃ) বর্শা হাতে নিয়ে দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন । দাজ্জাল তাঁকে দেখামাত্রই সীসার মত গলতে থাকবে। তিনি তার বক্ষে আঘাত করবেন। ঐ আঘাতেই সে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার সাথীরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করবে ।

শিশু নিজ অঙ্গুলি সাপের মুখে প্রবেশ করাবে। কিন্তু ওটা তার কোন ক্ষতি করবে না। ছেলেরা সিংহের সাথে খেলা করবে, অথচ তাদের কোন বিপদ ঘটবে না, নেকড়ে বাঘ ছাগলের গলায় গলায় এমনভাবে মিলে থাকবে মনে হবে যেন সে পাহারাদার কুকুর। সমস্ত জগত ইসলাম ও ন্যায়নীতিতে এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে যেমনভাবে বর্তন পানিতে পরিপূর্ণ হয়। সকলের একই কালেমা’ হয়ে যাবে। আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধ বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। কারাইশ স্বীয় রাজ্য ছিনিয়ে নেবে। পৃথিবী সাদা চাঁদির ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আদম (আঃ)-এর বরকতময় যুগের ন্যায় ফসল উৎপাদিত হবে। একটা দলের পরিতৃপ্তির জন্য এক গুচ্ছ আঙ্গুরই যথেষ্ট হবে। একটি ডালিম ফল এত বড় হবে যে, একটি দল একটি ডালিম খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে। বলদের মূল্য খুব বেশি হবে এবং ঘোড়া সামান্য দিরহামের বিনিময়েই পাওয়া যাবে।
জনগন জিজ্ঞাসা করলেনঃ “ইয়া রাসূলাল্লাহ (স) ঘোড়ার মুল্য হ্রাস পাওয়ার কারণ কি?” তিনি বলেনঃ “কেননা যুদ্ধে ওর সাওয়ারী মোটেই নেওয়া হবে না। তাঁরা প্রশ্ন করেনঃ “বলদের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি?” তিনি বলেনঃ “কেননা সমগ্র পৃথিবীতে কৃষি কাজ শুরু হয়ে যাবে।" 


ইয়াজুয মা'জুযের আবির্ভাব
দাজ্জালের ফেৎনা থেকে নিষ্কৃতি লাভের পর ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দাদের নিয়ে তুর পর্বতে গমন করবেন। অতঃপর ইয়াজুয মা'জুয সম্প্রদায় বের হবে এবং
চতুর্দিক থেকে লাফাতে লাফাতে চলে আসবে। তাদের প্রথম দলটি বাহীরা-তাবারিয়ায় আসবে এবং ওর সমস্ত পানি পান করে নিবে। তাদের পরপরই যখন অন্য দলটি আসবে তখন তারা ওটাকে এমন শুষ্ক অবস্থায় পাবে যে, তারা বলবে, সম্ভবত এখানে কোন সময় পানি ছিল না।
ঈসা (আঃ) এবং তাঁর সঙ্গী মুমিনগণ তথায় এমনভাবে অবরুদ্ধ থাকবেন যে, একটি বলদের মাথা ও তাদের নিকট এমন পছন্দনীয় হবে যেমন তোমাদের নিকট আজ পছন্দনীয় একশতটি স্বর্ণমুদ্রা। তখন আল্লাহ তা'আলা স্বীয় শক্রদেরকে গলগন্ড রোগে আক্রান্ত করবেন । ফলে তারা সবাই একই সাথে ধ্বংস হয়ে যাবে ।
অতঃপর ঈসা (আঃ) স্বীয় সঙ্গীগণসহ যমীনে অবতরণ করবেন। কিন্তু যমীনে অর্ধহাত পরিমাণ জায়গাও এমন পাবেন না যা তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধ হতে মুক্ত থাকবে। পুনরায় তারা আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা জানাবেন। 

ফলে আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের মত এক প্রকার পাখি পাঠিয়ে দেবেন। এ পাখিগুলো তাদের সমস্ত মৃতদেহ উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছামত জায়গায় নিক্ষেপ করবে। অতঃপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। ফলে সমস্ত যমিন হাতের তালুর ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর পর যমীনকে শষ্য এবং ফল উৎপাদনের ও বরকত ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হবে।
সেদিন একটি, ডালিম ফল একদল লোকের পক্ষে যথেষ্ট হবে। তারা সবাই ওর ছালের নীচে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারব। একটি উষ্ট্রীর দুধ গোটা একটি সম্প্রদায়ের লোক ও পান করে শেষ করতে পারবে না। 
' অত:পর আল্লাহ তাআলা এক মৃদু ও নির্মল বায়ু প্রবাহিত করবেন যা সমস্ত  ঈমানদার নর ও নারীর বগলের নির্দেশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে আর সাথে সাথে তাদের প্রাণ বায়ু ও নির্গত হয়ে যাবে। দুষ্ট ও বেঈমান লোকেরা কেবল বেঁচে থাকবে। তারা পরস্পর গাধার মত ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত থাকবে। আর তাদের উপর ভয়াবহ কিয়ামত সংঘটিত হবে।
(ইবনে কাসীর)
দাজ্জাল, দাজ্জালের আগমন, দাজ্জালের কাহিনী, দাজ্জাল কখন আসবে, দাজ্জাল কোথায় আছে, দাজ্জাল কবে আসবে, কেয়ামত ও দাজ্জাল, দাজ্জাল কে, দাজ্জাল দেখতে কেমন, দাজ্জালের ফিতনা, দাজ্জাল ও ইহুদী, দাজ্জালের ঘটনা, ইহুদী ও দাজ্জাল, দাজ্জাল কোথায় আছে, দাজ্জাল সম্পর্কে, দাজ্জাল এখন কোথায়, দাজ্জাল আগমনের আলামত, দাজ্জালের ফেতনা, দাজ্জালের মৃত্যু, দাজ্জালের চেহারা, দাজ্জালের পরিচয়, দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীস, dajjal in islam bangla, dajjal bangla, dajjal er kahini, dajjal kahini, dajjal story in bangla, dajjal fitna bangla, dajjal identity in bangla, dajjal er jibon kahini, ইয়াজুজ মাজুজ, ইয়াজুজ মাজুজ কারা, ইয়াজুজ মাজুজ এর কাহিনী, ইয়াজুজ মাজুজ কোথায় আছে, ইয়াজুয মাজুয, ইয়াজুজ মাজুজ এর জন্ম কিভাবে, কোথায় আছে ইয়াজুয মাজুয, ইয়াজুজ মাজুজ কখন আসবে, ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর কোথায়, ইয়াজুজ মাজুজ কি মানুষ, ইয়াজুজ মাজুজের আগমন, ইয়াজুজ ও মাজুজ, ইয়াজুয মাজুয কত দিন পৃথিবীতে থাকবে, ইয়াজুজ মাজুজ, ইয়াজুয মাজুয, কারা এই ইয়াজুজ মাজুজ, ইয়াজুজ মাজুজ এর ইতিহাস, ইয়াজুজ মাজুজ কার বংশধর