ক্রেডিট কার্ড কিভাবে বানাবো ? সহজ ধাপে আবেদন ও পাওয়ার উপায়

30 Jun, 2025

ক্রেডিট কার্ড কিভাবে বানাবো ? সহজ ধাপে আবেদন ও পাওয়ার উপায়

ক্রেডিট কার্ড কী? 

ক্রেডিট কার্ড হলো একটি অর্থনৈতিক পেমেন্ট কার্ড, যার মাধ্যমে আপনি ব্যাংক বা ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ধার (ঋণ) নিয়ে পণ্য বা সেবা কিনতে পারেন। এটি একটি ধরনের ‌"Buy Now, Pay Later" ব্যবস্থা। আপনি যত টাকা খরচ করবেন, তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করলে সুদ (interest) দিতে হয়।

ব্যবহার:

  • দোকানে POS মেশিনে কার্ড দিয়ে পেমেন্ট

  • অনলাইন শপিং

  • বিদেশে খরচ

  • মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে ফ্লাইট বুকিং পর্যন্ত


ডেবিট কার্ড বনাম ক্রেডিট কার্ড

বৈশিষ্ট্য ডেবিট কার্ড ক্রেডিট কার্ড
টাকা কাটে কোথা থেকে? আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংকের দেওয়া ক্রেডিট (ঋণ) থেকে
আগেই টাকা থাকতে হয়? হ্যাঁ না, ব্যাংক সীমা নির্ধারণ করে
সুদ নেই (সাধারণত) আছে (যদি সময়মতো বিল না দেওয়া হয়)
উদ্দেশ্য আপনার নিজের টাকায় খরচ ধার নিয়ে খরচ করে পরে শোধ

সংক্ষেপে, ডেবিট কার্ড দিয়ে আপনি নিজের টাকা খরচ করেন, আর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ব্যাংকের টাকা খরচ করেন।


ক্রেডিট কার্ড কেন দরকার হতে পারে?

অনলাইন পেমেন্ট

অনেক আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট (যেমন: Amazon, Netflix, Google Ads ইত্যাদি) শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করে। এই কার্ড থাকলে সহজে আন্তর্জাতিক কেনাকাটা বা সাবস্ক্রিপশন নেওয়া যায়।


ইমার্জেন্সি ফান্ড

হঠাৎ করে হাসপাতালে ভর্তি, ভ্রমণের খরচ বা জরুরি কোন খরচের সময় যদি হাতে নগদ না থাকে, তখন ক্রেডিট কার্ড হতে পারে ত্রাণকর্তা। একসাথে বড় খরচ করে পরে কিস্তিতে পরিশোধ করা যায়।


পয়েন্ট ও রিওয়ার্ড সুবিধা

প্রতিবার কার্ড ব্যবহার করলে আপনি পয়েন্ট, ক্যাশব্যাক, ছাড় বা অফার পেতে পারেন। এগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন কেনাকাটায় ডিসকাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

উদাহরণ:

  • ১০০০ টাকা খরচে ১০ পয়েন্ট

  • নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডে ১০% ছাড়

  • বিমান টিকিটে EMI সুবিধা

ক্রেডিট হিস্টোরি তৈরি

আপনি সময়মতো ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করলে আপনার ‌ক্রেডিট স্কোর ভালো হয়, যা ভবিষ্যতে লোন নেওয়ার সময় ব্যাংকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে।
 


ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা

বাংলাদেশে যেকোনো ব্যক্তি চাইলেই ক্রেডিট কার্ড পাবেন না। ব্যাংকগুলো কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও যোগ্যতা বিবেচনা করে তবেই কার্ড ইস্যু করে। নিচে আমরা সেই শর্তগুলো আলোচনা করছি:


বয়স

ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির ন্যূনতম বয়স হতে হবে ২১ বছর
কিছু ক্ষেত্রে (যেমন: সাপ্লিমেন্টারি কার্ড) ১৮ বছর বয়সীরাও কার্ড পেতে পারে, তবে মূল কার্ডহোল্ডারের অনুমতি লাগে।


আয়/চাকরির অবস্থা

ক্রেডিট কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে ব্যাংক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় আবেদনকারীর আয় বা চাকরির নিশ্চয়তা

যারা কার্ড পেতে পারেন:

  • সরকারি/বেসরকারি চাকরিজীবী

  • স্বনিয়োজিত ব্যক্তি (ব্যবসায়ী, ফ্রিল্যান্সার)

  • বিদেশে চাকরি করছেন এমন ব্যক্তি (NRI কার্ডের ক্ষেত্রে)

  • নির্দিষ্ট ইনকাম থ্রেশহোল্ড পূরণ করতে হবে (প্রতিমাসে সাধারণত কমপক্ষে ১৫,০০০-২০,০০০ টাকা আয় থাকলে অনেক ব্যাংক কার্ড দেয়)

 যাদের আয় কম, তারা সিকিউরড কার্ড পেতে পারেন (Fixed Deposit এর বিপরীতে)


 জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্টস

ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে গেলে নিচের নথিগুলো প্রয়োজন হয়:

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিবরণ
 জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বাধ্যতামূলক
 পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাম্প্রতিক
 টিন সার্টিফিকেট (যদি থাকে) আয়কর রিটার্নের জন্য
 ইনকাম সনদ চাকরিজীবীদের জন্য
 ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শেষ ৬ মাস) ব্যবসায়ীদের জন্য
 চাকরির নিয়োগপত্র/আইডি কার্ড চাকরিজীবীদের জন্য

ব্যাংক হিসাবের অবস্থা

ব্যাংকে আপনার অ্যাকাউন্টের স্থিতি (Balance), লেনদেনের নিয়মিততা এবং কোন ঋণ আছে কিনা — এসবই যাচাই করা হয়।

ব্যাংক দেখে আপনি:

  • সময়মতো টাকা জমা দিচ্ছেন কি না

  • একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা রাখেন কিনা

  • চেক বাউন্স হয়েছে কি না ইত্যাদি

একটি স্বচ্ছ ও সক্রিয় ব্যাংক হিসাব থাকলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


টিপস:

  • যদি আপনি ছাত্র বা বেকার হন, সরাসরি ক্রেডিট কার্ড পাওয়া কঠিন হতে পারে। তবে অভিভাবক বা আত্মীয়ের মাধ্যমে সাপ্লিমেন্টারি কার্ড নেওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশে কোন কোন ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দেয়?

বাংলাদেশে বেশ কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ধরণের ক্রেডিট কার্ড প্রদান করে। এসব কার্ডে থাকে পয়েন্ট সুবিধা, কিস্তি সুবিধা (EMI), ডিসকাউন্ট এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের সুযোগ। নিচে তিনটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোর তালিকা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:


প্রাইভেট ব্যাংক

 ব্র্যাক ব্যাংক (BRAC Bank)

  • কার্ড টাইপ: ক্লাসিক, গোল্ড, প্ল্যাটিনাম

  • ফিচার: ইএমআই, ক্যাশব্যাক, লাউঞ্জ এক্সেস

  • অনলাইন আবেদন: 

 ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক (DBBL)

  • কার্ড টাইপ: DBBL Nexus Credit Card

  • ফিচার: অনলাইন ট্রানজেকশন, ভিসা/মাস্টার কার্ড

  • সাপোর্ট: ইসলামী ও সাধারণ দুটো সেবাই

 সিটি ব্যাংক (City Bank – American Express)

  • কার্ড টাইপ: AMEX Blue, Gold, Platinum

  • বিশেষ সুবিধা: আন্তর্জাতিক ভ্রমণে ছাড়, প্রিমিয়াম সাপোর্ট

  • সহজ EMI প্ল্যান

 ইস্টার্ণ ব্যাংক (EBL)

  • কার্ড টাইপ: EBL Visa/Master/AMEX Credit Cards

  • ফিচার: প্রি-অ্যাপ্রুভড লোন, অনলাইন শপিং ছাড়

  • ইন্টারন্যাশনাল ইউজ:

 অন্যান্য প্রাইভেট ব্যাংক:

  • ইউসিবি (UCB)

  • মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (MTB)

  • ঢাকা ব্যাংক

  • সাউথইস্ট ব্যাংক

  • ট্রাস্ট ব্যাংক


সরকারি ব্যাংক

 সোনালী ব্যাংক

  • কার্ড টাইপ: সোনালী ক্রেডিট কার্ড (ভিসা/মাস্টার)

  • ফিচার: সরকারি কর্মচারীদের জন্য উপযোগী

  • সীমিত EMI সুবিধা

 জনতা ব্যাংক

  • কার্ড টাইপ: সাধারণ ও গোল্ড ক্রেডিট কার্ড

  • সীমিত ই-কমার্স সুবিধা

  • নির্ভরযোগ্য কিন্তু একটু ধীর প্রসেস

 অন্যান্য:

  • অগ্রণী ব্যাংক

  • রূপালী ব্যাংক

সরকারি ব্যাংকগুলোতে প্রক্রিয়াটি একটু সময়সাপেক্ষ হলেও নিরাপদ এবং ফি তুলনামূলক কম।


ইসলামিক ব্যাংকিং সেবায় ক্রেডিট কার্ড

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL)

  • কার্ড টাইপ: ইসলামী কার্ড (Shariah Compliant)

  • ভিত্তি: বাই-মূল বা ইজারা ভিত্তিক

  • সুদমুক্ত (সুবিধা অনুযায়ী চার্জ নির্ধারণ)

 আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক

  • শরীয়াহ ভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড

  • সীমিত ইএমআই সুবিধা

আরও কিছু ইসলামিক ব্যাংক যেমন:

  • এক্সিম ব্যাংক

  • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

বিশেষ টিপস: ইসলামিক ব্যাংকের কার্ডগুলোতে সুদের বদলে সার্ভিস চার্জ নির্ধারিত হয়, তাই যারা সুদ এড়িয়ে চলতে চান, তারা এই অপশনগুলো বিবেচনা করতে পারেন।



ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া (credit card kivabe banabo)

বাংলাদেশে এখন সহজেই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়, তা হোক অনলাইনে অথবা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে। নিচে দুটি পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সম্পর্কে ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো:

 ১. অনলাইন আবেদন

বর্তমানে বেশিরভাগ প্রাইভেট ব্যাংক তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন আবেদন গ্রহণ করে। এর সুবিধা হলো ঘরে বসেই সহজে আবেদন করা যায়।

 আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান (যেমন: www.bracbank.com, www.ebl.com.bd ইত্যাদি)

  2. “Apply for Credit Card” বা অনুরূপ অপশন নির্বাচন করুন

  3. প্রয়োজনীয় তথ্য ফর্মে দিন:

    • নাম, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর

    • জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর

    • মাসিক আয়, পেশা ইত্যাদি

  4. স্ক্যান কপি ডকুমেন্ট আপলোড করুন (যদি চায়)

  5. আবেদন সাবমিট করুন

তারপর কী হবে?

  • ব্যাংকের প্রতিনিধি আপনার সাথে যোগাযোগ করবে

  • আপনার ইনফরমেশন যাচাই হবে

  • সব ঠিক থাকলে কিছুদিনের মধ্যে কার্ড হাতে পাবেন


২. সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে আবেদন

যারা অনলাইন সিস্টেমে অভ্যস্ত না, তারা সরাসরি নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় গিয়ে আবেদন করতে পারেন।

 করণীয়:

  1. নিজে উপস্থিত হয়ে ফর্ম সংগ্রহ করুন বা ব্যাংকের প্রতিনিধির সহায়তা নিন

  2. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন

  3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিন

  4. ব্যাংক আপনার আবেদন প্রসেস করবে

  5. সফল হলে নির্ধারিত সময়ে আপনার ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়ে দেওয়া হবে বা ব্যাংক থেকে নিতে হবে


৩. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস তালিকা

ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে গেলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দিতে হবে। নিচে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো তালিকাভুক্ত করা হলো:

ডকুমেন্টস বিস্তারিত
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বাধ্যতামূলক
পাসপোর্ট সাইজ ছবি সাম্প্রতিক (১ কপি বা ২ কপি)
 টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি থাকে) ট্যাক্স রিটার্নে সহায়ক
ইনকাম সনদ / চাকরির প্রমাণপত্র চাকরিজীবীদের জন্য
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শেষ ৬ মাস) ফ্রিল্যান্সার বা ব্যবসায়ীদের জন্য
চাকরির আইডি কার্ড / অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে

বিঃদ্রঃ:

  • প্রত্যেক ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন অতিরিক্ত ডকুমেন্ট চাইতে পারে

  • আপনি যদি সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাহলে ফিক্সড ডিপোজিট (FDR) দরকার হতে পারে


আবেদনের পরে কী হয়?

ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার পরপরই আপনি কার্ড পেয়ে যাবেন না। ব্যাংক প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যাচাই-বাছাই করে থাকে। নিচে ধাপে ধাপে সেই প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হলো:


 ১. ডকুমেন্ট যাচাই

আপনার জমা দেওয়া সকল ডকুমেন্টস (জাতীয় পরিচয়পত্র, ইনকাম সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি) যাচাই করা হয়।

  • ভুল বা ভুয়া তথ্য থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে

  • ফর্মের তথ্য ও কাগজপত্রে মিল থাকতে হবে


 ২. ক্রেডিট স্কোর বা রেপুটেশন যাচাই

বাংলাদেশ ব্যাংকের CIB (Credit Information Bureau) রিপোর্ট দেখে আপনার পূর্বের ঋণের ইতিহাস ও ব্যাংক লেনদেনের রেকর্ড যাচাই করা হয়।

যদি পূর্বে কোন লোন বা ক্রেডিট কার্ড থেকে ডিফল্ট করা হয়ে থাকে, তাহলে কার্ড পাওয়া কঠিন হতে পারে
নিয়মিত বিল প্রদানকারী হলে পাবেন ভালো ক্রেডিট রেটিং — যা ভবিষ্যতের ব্যাংক লোনেও সহায়ক


 ৩. কার্ড ডেলিভারি

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ব্যাংক ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার দেওয়া ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়ে দেয়।

  • কিছু ব্যাংকে শাখা থেকেই কার্ড নিতে হয়

  • কার্ডের সাথে একটি পিন নম্বর আলাদাভাবে পাঠানো হয়

  • ফোনে এক্টিভেশন প্রক্রিয়া শেষ করে আপনি ব্যবহার শুরু করতে পারবেন


 ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম ও সতর্কতা

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পর অনেকেই তা বুঝেশুনে না ব্যবহার করে ঋণের ফাঁদে পড়ে যান। তাই নিয়মিত ও সচেতন ব্যবহার জরুরি।


 বিল পরিশোধের সময়সীমা (Billing Cycle & Due Date)

প্রতিটি কার্ডে একটি নির্দিষ্ট বিলিং সাইকেল থাকে (যেমন: মাসের ১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ)।
এরপর ব্যাংক আপনাকে একটি স্টেটমেন্ট পাঠায় এবং আপনাকে কিছুদিন সময় দেয় (১৫–২০ দিন) বিল পরিশোধের জন্য।

 সময়মতো সম্পূর্ণ পরিমাণ বিল পরিশোধ করলে কোনো সুদ দিতে হয় না
x সর্বনিম্ন টাকা (minimum due) দিলে পরের মাসে সুদ যোগ হবে


 ইন্টারেস্ট রেট (সুদ)

আপনি যদি সম্পূর্ণ বিল সময়মতো না দেন, তাহলে ব্যাংক প্রতিদিন ভিত্তিতে সুদ ধার্য করে।

  • বাংলাদেশে সাধারণত বার্ষিক সুদহার: ২০%-৩০% পর্যন্ত হতে পারে

  • ক্রেডিট কার্ডের EMI বা কিস্তি প্ল্যানে কম রেটে সুবিধা পাওয়া যায়


লেট ফি ও জরিমানা

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল না দিলে শুধু সুদ নয়, লেট ফিপেনাল্টি চার্জও যোগ হয়।

বিল পরিশোধ না করলে সম্ভাব্য জরিমানা
৫০০-১০০০ টাকা লেট ফি প্রতি মাসে
ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয় ভবিষ্যতে লোন পাওয়া কঠিন
ক্রেডিট সীমা কমিয়ে দেওয়া হতে পারে  

 ফ্রড বা স্ক্যাম থেকে বাঁচার উপায়

  • কার্ড ও পিন কারো সাথে শেয়ার করবেন না
  •  অবিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে কার্ড ব্যবহার না করাই ভালো
  •  বিদেশি বা সন্দেহজনক ফোন কল এড়িয়ে চলুন (OTP চাইলে ভুলেও দেবেন না)
  •  ফোনে SMS বা App Notification চালু রাখুন – প্রতিটি ট্রানজেকশনের আপডেট পাবেন
  •  প্রয়োজনে কার্ড ব্লক করার অপশন জেনে রাখুন

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা

ক্রেডিট কার্ড যেমন স্মার্ট আর্থিক সুবিধা দেয়, তেমনি ভুল ব্যবহারে এটি ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। নিচে এর প্রধান সুবিধা ও অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো:
 সুবিধা

 ১. ছাড় (Discounts)

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে অনেক ব্র্যান্ড ও রেস্টুরেন্টে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
উদাহরণ:

  • রেস্টুরেন্টে ১০–২০% ছাড়

  • অনলাইন শপিংয়ে প্রোমো কোড

  • স্পেশাল সেল বা ফেস্টিভাল অফার

 ২. EMI সুবিধা (Easy Monthly Installment)

বড় অঙ্কের পণ্য (মোবাইল, ফ্রিজ, ফার্নিচার) কেনাকাটা করলে EMI বা কিস্তিতে বিল পরিশোধ করা যায় — যা মাসে মাসে ছোট অংশে ভাগ হয়ে যায়।

 ৩. পয়েন্ট ও রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম

প্রতিবার ব্যবহারেই আপনি রিওয়ার্ড পয়েন্ট পান। এই পয়েন্ট দিয়ে:

  • ফ্রি পণ্য কেনা যায়

  • কুপন বা গিফট ভাউচার রিডিম করা যায়

  • বিমানের টিকিট, হোটেল বুকিং ইত্যাদিতে ছাড় পাওয়া যায়

 কিছু ব্যাংকে আছে "Cashback" সুবিধা — নির্দিষ্ট % টাকা ফেরত পাওয়া যায়


x অসুবিধা

 ১. ঋণের ফাঁদে পড়া

সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে সুদ ও জরিমানা বাড়তে থাকে। এতে মাসের পর মাস ঋণের বোঝা বেড়ে যেতে পারে।

 ২. অতিরিক্ত খরচের প্রবণতা

ক্রেডিট কার্ড হাতে থাকলে মানুষ অনেক সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ করে। মনে হয় — "এখন কিনি, পরে দেব", কিন্তু পরিশোধে চাপ পড়ে।

 ৩. ফ্রড বা হ্যাকিং এর ঝুঁকি

অনলাইন বা অবিশ্বস্ত স্থানে ব্যবহার করলে কার্ড হ্যাকিং, তথ্য চুরি বা জালিয়াতির ঝুঁকি থাকে।


বিকল্প সমাধান: ডেবিট কার্ড, ভার্চুয়াল কার্ড বা মোবাইল ওয়ালেট

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে না চাইলে বা যোগ্যতা না থাকলে নিচের বিকল্পগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:

 ডেবিট কার্ড

  • সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার হয়

  • কোনো সুদ নেই

  • সীমা: অ্যাকাউন্টে যত টাকা আছে, ততটুকুই খরচ করা যায়

  • অনেক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড এখন আন্তর্জাতিক লেনদেনেও সাপোর্ট করে (অনলাইন একটিভেট করতে হয়)


ভার্চুয়াল কার্ড

  • একবার ব্যবহারযোগ্য কার্ড

  • নিরাপদ অনলাইন পেমেন্টের জন্য

  • অনেক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ (যেমন: Citytouch, DBBL Nexus Pay) ভার্চুয়াল কার্ড দেয়

  • গ্রাহকের NID ও একাউন্ট থাকলেই অনলাইনে তৈরি করা যায়


 মোবাইল ওয়ালেট (Nagad, bKash, Rocket)

  • দৈনন্দিন খরচে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম

  • QR স্ক্যান, Send Money, Bill Payment

  • সুরক্ষা ব্যবস্থা ভালো

  • সীমিত সুবিধা: আন্তর্জাতিক লেনদেন বা EMI সুবিধা নেই


? সচরাচর প্রশ্নোত্তর (FAQ)

 ছাত্রছাত্রী কি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারে?
সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি মূল কার্ড পায় না। তবে অভিভাবকের মাধ্যমে সাপ্লিমেন্টারি কার্ড নিতে পারে। কিছু ব্যাংক স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড অফার করে নির্দিষ্ট শর্তে। কিন্তু ইউনিভার্সিটি এর ছাত্রছাত্রীরা তাদের ইউনিভার্সিটির আইডি কার্ড এর মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। 


 বেকার ব্যক্তি কি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারে?

না, সরাসরি নয়। তবে যদি তার নামে ফিক্সড ডিপোজিট (FDR) থাকে, তাহলে সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড নিতে পারে।


 কার্ডের সীমা (Limit) কীভাবে ঠিক হয়?

আপনার মাসিক আয়, ব্যাংক লেনদেন ও ক্রেডিট স্কোর দেখে ব্যাংক ক্রেডিট লিমিট নির্ধারণ করে। সাধারণত মাসিক আয়ের ২–৩ গুণ পর্যন্ত সীমা পাওয়া যায়।


 ক্রেডিট কার্ড তৈরি করতে কী কী লাগে?

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)

  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি

  • ইনকাম সনদ / চাকরির প্রমাণ

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট

  • টিন সার্টিফিকেট (প্রয়োজনে)


 কত টাকা বেতন হলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়?

প্রায় সব ব্যাংকে মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকা বা তার বেশি হলে সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়।


 ডেবিট কার্ড কিভাবে বানাবো?

১. যেকোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলুন
২. ডেবিট কার্ড ফর্ম পূরণ করুন
৩. অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা রাখলে কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি কার্ড পাবেন।


ডাচ্ বাংলা ক্রেডিট কার্ড করতে কী কী লাগে?

  • DBBL অ্যাকাউন্ট

  • NID ও ছবি

  • ইনকাম প্রমাণপত্র

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (৬ মাসের)

  • আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে


 ১৮ বছরের নিচে ক্রেডিট কার্ড কিভাবে করব?

মূলত সম্ভব নয়। তবে আপনি পিতামাতা বা অভিভাবকের সাপ্লিমেন্টারি কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন।


 ক্রেডিট কার্ড অর্থ কি?

ক্রেডিট কার্ড একটি পেমেন্ট কার্ড যার মাধ্যমে আপনি ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে পেমেন্ট করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দেন।


 ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে কম বেতন কত?

বেশিরভাগ ব্যাংকে ন্যূনতম ৳১৫,০০০–২০,০০০ মাসিক বেতন লাগবে। তবে FDR থাকলে এই সীমা কমেও করা যায়।


 ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা কী কী?

  • EMI সুবিধা

  • ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক

  • অনলাইন ও আন্তর্জাতিক লেনদেন

  • পয়েন্ট / রিওয়ার্ড

  • জরুরি সময়ের অর্থসাহায্য


 ক্রেডিট কার্ডে ভ্রমণ কোটা কী?

বাংলাদেশি নাগরিক বছরে ১২,০০০ মার্কিন ডলার (বা সমমানের মুদ্রা) পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে খরচ করতে পারে — একে ভ্রমণ কোটা বলা হয়।


 ক্রেডিট কার্ডের জন্য বয়স কত হতে হয়?

ন্যূনতম ২১ বছর হতে হয়। কিছু ব্যাংকে ১৮ বছরেও সাপ্লিমেন্টারি কার্ড দেওয়া হয়।


 আমি কি ১৭ বছর বয়সে ক্রেডিট তৈরি করতে পারি?

না। আপনি সরাসরি কোনো ক্রেডিট একাউন্ট বা কার্ড চালু করতে পারবেন না। তবে অভিভাবকের নামে কার্ডের ব্যবহার করতে পারেন।


 আমি কি আমার ক্যাপিটাল ওয়ান ক্রেডিট কার্ডে আমার সন্তানকে যুক্ত করতে পারি?

হ্যাঁ, আপনি তাকে অথরাইজড ইউজার হিসেবে যুক্ত করতে পারেন। এতে সে কার্ড ব্যবহার করতে পারবে, তবে মূল দায় আপনার ওপর থাকবে।


 ক্রেডিট কার্ডের মেয়াদ কত?

সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের মেয়াদ থাকে ৩ বছর। মেয়াদ শেষে নবায়ন (renew) করতে হয়।


ডিসকভার ক্রেডিট কার্ড পেতে কতদিন লাগে?

আমেরিকায় সাধারণত ৭–১০ কার্যদিবস লাগে। বাংলাদেশ থেকে নেওয়ার প্রক্রিয়া আলাদা এবং সম্ভব নয়।


 অ্যামেক্স হওয়ার বয়স কত?

American Express কার্ড পাওয়ার জন্য সাধারণত ন্যূনতম বয়স ১৮–২১ বছর, এবং উপযুক্ত ইনকাম থাকতে হয়।


 ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ন্যূনতম স্কোর কত?

বাংলাদেশে CIB রিপোর্ট ব্যবহৃত হয়। সাধারণত নেগেটিভ রেকর্ড না থাকলেই ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়।


 আমি কি ডিসকভার ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবহার করতে পারি?

হ্যাঁ, approval-এর পরে ভার্চুয়াল কার্ড দিয়ে অনলাইন শপিং শুরু করা যায়। ফিজিক্যাল কার্ড একটু পরে আসে।


ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবো?

অনেক ব্যাংক ও অ্যাপ (Citytouch, NexusPay, AmarPay) এখন অনলাইনেই ভার্চুয়াল কার্ড দেয় — যেটা শুধু অনলাইন ট্রানজেকশনে কাজ করে।


৪টি ভার্চুয়াল কার্ডে বেতন কত?

ভার্চুয়াল কার্ডে নির্দিষ্ট বেতন লাগে না, তবে অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স থাকতে হয় এবং মাসিক ট্রানজেকশন হিসাব করে লিমিট দেওয়া হয়।


 ক্রেডিট কার্ড অনুমোদনের সবচেয়ে সহজ উপায় কী?

সিকিউরড কার্ড (Fixed Deposit ভিত্তিক) পাওয়া সবচেয়ে সহজ। যাদের ইনকাম নেই বা নতুন ইউজার, তাদের জন্য এটি ভালো অপশন।


 ফিজিক্যাল কার্ড ছাড়া কি ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যাবে?

হ্যাঁ, আপনি কেবল ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন যা শুধুমাত্র অনলাইন ব্যবহারযোগ্য।


 আমি গুগল অ্যাডসেন্সের টাকা উঠানোর জন্য কী কার্ড নিবো?

আপনি মাস্টারকার্ড বা ভিসা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। Dutch Bangla, City Bank, BRAC – এগুলোর কার্ড ভালো কাজ করে।


 ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শপিং করা যায়?

হ্যাঁ, আপনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় জায়গায় শপিং করতে পারবেন — POS মেশিন, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপ ইত্যাদিতে।


 আপওয়ার্ক থেকে টাকা উঠানোর জন্য কী কার্ড নিবো?

পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড সবচেয়ে ভালো অপশন। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি Withdraw করে ডেবিট কার্ড দিয়ে ব্যবহার করা যায়।


 ক্রেডিট কার্ড নিলে বছরে কত টাকা ফি দিতে হয়?

সাধারণত ৳৫০০–৳৫০০০ পর্যন্ত বার্ষিক ফি দিতে হয়, যা ব্যাংক ও কার্ড টাইপ অনুযায়ী ভিন্ন।
কিছু ক্ষেত্রে প্রথম বছর ফ্রি অফারও থাকে।


 ক্রেডিট কত প্রকার?

ক্রেডিট মূলত কয়েক প্রকার:

  • ব্যাংক ক্রেডিট

  • বাণিজ্যিক ক্রেডিট

  • ভোক্তা ক্রেডিট

  • বিনিয়োগ ক্রেডিট

  • আন্তর্জাতিক ক্রেডিট

  • পাবলিক ক্রেডিট