30 Jul, 2025
নামাজের প্রতিটি অংশে যেমন দোয়া রয়েছে, ঠিক তেমনি দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময়েও একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত। এই দোয়াটি নামাজে পড়া সুন্নত, যদিও ফিকহের ভিন্ন ভিন্ন মাজহাবে এর হুকুমে কিছু পার্থক্য দেখা যায়।
বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামের মতে, এই দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। তবে হাম্বলি মাজহাবের ফতোয়া মতে, এটি ওয়াজিব। তাঁদের বক্তব্য— রাসুল (সা.) নিয়মিত এই দোয়াটি পড়তেন এবং নামাজে এমন কোনো রুকন নেই যা আল্লাহর জিকিরবিহীন। ফলে, দুই সিজদার মাঝের এই জিকির বা দোয়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জিকিরের মতো গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও হাম্বলি মাজহাবে এটিকে ওয়াজিব বলা হয়েছে, কিন্তু জমহুর (অধিকাংশ) ওলামায়ে কেরাম এই দোয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন, যেহেতু ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট দলিল নেই। তাই তাদের মতে, কমপক্ষে একবার ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ বলা উত্তম এবং এর বেশি পড়া আরও ফজিলতপূর্ণ।
দুই সিজদার মাঝের দোয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন হাদিসে কিছুটা ভিন্নতা পাওয়া যায়। কিছু সংক্ষিপ্ত, আবার কিছুতে শব্দ বেশি। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ সাতটি শব্দ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ দোয়া পাওয়া যায়—
আরবি:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ، وَارْحَمْنِي ، وَاجْبُرْنِي ، وَاهْدِنِي ، وَارْزُقْنِي ، وَعَافِنِي ، وَارْفَعْنِي
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি, ওয়া আ’ফিনি, ওয়ারফা’নি।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর রহম করুন, আমার প্রয়োজন পূরণ করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, রিজিক দান করুন, সুস্থতা দিন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
(সূত্র: আবু দাউদ: ৮৫০; ইবনে মাজাহ: ৮৮৮)
আরবি:
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ:
রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থ:
হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে ক্ষমা করুন।
(সূত্র: সহিহ মুসলিম: ৭৭২)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) তাঁর খালা মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাত যাপনকালে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাহাজ্জুদ নামাজের বিবরণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, দুই সিজদার মাঝখানে রাসুল (সা.) পড়তেন:
আরবি:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগ ফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়াজবুরনি, ওয়াহদিনি, ওয়ারজুকনি।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, রিজিক দান করুন এবং হেদায়েত দিন।
(সূত্র: বাইহাকি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১২২)
প্রথম সিজদা শেষে মাথা উঠানোর সময় তাকবির বলতে বলতে বসে যেতে হবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবির পড়া চলবে। বসার পর উপরোক্ত দোয়াগুলোর যেকোনোটি পড়া উত্তম।
দুই সিজদার মাঝের সময়টি এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এ সময় কোনো দোয়া না পড়ে চুপ থাকা নামাজের সৌন্দর্য কমিয়ে দিতে পারে। তাই কমপক্ষে একবার হলেও “রাব্বিগ ফিরলি” বলা উচিত, আর সময় থাকলে সম্পূর্ণ দোয়াটি পড়া শ্রেয়।