14 Jul, 2025
বর্তমান সময়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হলো মনোযোগের অভাব। প্রযুক্তির আসক্তি, সামাজিক চাপ এবং পড়াশোনার অতিরিক্ত বোঝার কারণে অনেকেই পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। আর এ কারণেই প্রয়োজন হয় আত্মিক শক্তি ও আধ্যাত্মিক সহায়তা।
“পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া” হলো এমন একটি আধ্যাত্মিক অস্ত্র যা একজন শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে এবং শিক্ষাজীবনে সফলতার পথে পরিচালিত করে।
যখন কোনো শিক্ষার্থীর মনোযোগ পড়ে না, তখন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়, যেমন:
পাঠ্যবিষয়ের প্রতি আগ্রহ কমে যায়
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে থাকে না বা ভুলে যায়
আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে
সময় অপচয় হয় এবং পড়ার গতিও কমে যায়
পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল হয়, যা হতাশার কারণ হয়
মনোযোগের অভাব কেবল শিক্ষায় নয়, পুরো ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ইসলামে জ্ঞান অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। রাসূল (সা.) বলেছেন:
“জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ।” (ইবনু মাজাহ)
ইসলাম আমাদের শেখায়—শুধু বই পড়ে নয়, বরং দোয়া, ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ইবাদতের মাধ্যমে মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি করা যায়। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করলে:
অন্তরে শান্তি আসে
আল্লাহর উপর ভরসা বাড়ে
মন দ্বিধাহীন হয়
আত্মিক শক্তি দিয়ে চর্চা সহজ হয়
দোয়া শুধু মুখের কথা নয়, বরং তা এক ধরনের আত্মিক আবেদন। পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া পাঠ করলে একজন শিক্ষার্থী আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে, যা তার চিন্তাশক্তি ও হৃদয়ের গভীরতা খুলে দেয়।
দোয়ার কিছু উপকারিতা:
মনোযোগ বাড়ে ও চিন্তা পরিষ্কার হয়
মানসিক প্রশান্তি অনুভব করে
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়
পড়াশোনায় বরকত ও সফলতা আসে
যখন একজন শিক্ষার্থী “রব্বি যিদনি ইল্মা” বা অন্যান্য জ্ঞানের দোয়া পড়ে, তখন সে আসলে আল্লাহর কাছে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সরাসরি আবেদন করছে। এর মাধ্যমে:
অশান্ত মন শান্ত হয়
চিন্তাভাবনায় পরিপক্বতা আসে
আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভ হয়
পরীক্ষায় ও বাস্তব জীবনে সফলতা অর্জিত হয়
সততার সঙ্গে দোয়া করলে আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বেড়ে যায়। কারণ, তখন শিক্ষার্থী জানে, সে আল্লাহর উপর ভরসা করছে। এটি তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও স্থির করে তোলে। ফলে:
ভয় ও দুশ্চিন্তা কমে
আত্মবিশ্বাসের সাথে পড়াশোনা করতে পারে
একাগ্রচিত্তে অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে পারে
এইভাবে দোয়া, ইসলামী নির্দেশনা ও অধ্যবসায়ের সমন্বয়ে “পড়ায় মনোযোগ বৃদ্ধির দোয়া” একজন শিক্ষার্থীর সফলতার জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি মাধ্যম হতে পারে।
উচ্চারণ:
রব্বি যিদনি ইল্মা
অর্থ:
“হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।”
সূত্র:
সূরা ত্বা-হা – আয়াত ১১৪
ব্যাখ্যা:
এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু শক্তিশালী দোয়াটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও উপলব্ধির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে দেন। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক অমূল্য আধ্যাত্মিক সহায়তা।
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাফতাহ লি আবওয়াব রাহমাতিকা, ওয়াইয়াসসির লি আমরি, ওয়াসাব্বিত ক্বালবি আলা ত্বা‘আতিকা
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজা খুলে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন, এবং আমার অন্তরকে আপনার আনুগত্যে স্থির রাখুন।”
ব্যাখ্যা:
এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে সহজতা, সহায়তা এবং আত্মিক শক্তির জন্য প্রার্থনা। এটি পড়লে মনের গতি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ফলে মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা করা সহজ হয়। বিশেষ করে নতুন কোন অধ্যায় শুরু করার আগে এটি পড়া অত্যন্ত উপকারী।
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাজআলনি মিন উলিল আলবাব, ওয়ারযুকনি ফাহমান-নাবিয়্যীন, ওয়া হিফযাল মুরসালীন
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমাকে জ্ঞানী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন, নবীদের মত বুঝ এবং রাসূলদের মত স্মরণশক্তি দান করুন।”
ব্যাখ্যা:
এই দোয়াটি এমন এক অনন্য প্রার্থনা যেখানে একজন শিক্ষার্থী শুধু সাধারণ বোধশক্তি নয়, বরং নবীদের মত গভীর বুদ্ধি ও বিশুদ্ধ স্মৃতিশক্তি কামনা করে। এটি মনে রেখে প্রতিদিন পাঠ করলে পড়ালেখায় গভীরতা ও ধার আসে।
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা'আলতাহু সাহলান
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেন তাই সহজ, আপনি চাইলে কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যায়।”
ব্যাখ্যা:
পড়াশোনা শুরু করার আগে এই দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহর সাহায্যে কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যায়। এটি মনকে শান্ত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যার ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ আসে এবং কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।
এই দোয়াগুলো প্রতিদিন পাঠ করলে একদিকে যেমন আল্লাহর রহমত লাভ হয়, অন্যদিকে পড়াশোনায়ও আসে মনোযোগ, শক্তি ও স্থায়িত্ব।
পড়াশোনার শুরুতে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী:
اللَّهُمَّ لَا سَهْلَ إِلَّا مَا جَعَلْتَهُ سَهْلًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জা‘আলতাহু সাহলান
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি যা সহজ করেন তাই সহজ, আপনি চাইলে কঠিন বিষয়ও সহজ হয়ে যায়।
এই দোয়াটি পড়লে মনের জড়তা কেটে যায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ও কঠিন বিষয় বুঝতে সহজ হয়।
পড়ালেখা শেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন:
اللَّهُمَّ ثَبِّتْ عِلْمِي وَارْزُقْنِي فَهْمًا وَتَذَكُّرًا
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার অর্জিত জ্ঞানকে স্থায়ী করুন, আমাকে বুঝার শক্তি ও স্মরণশক্তি দিন।
এটি একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান ধরে রাখতে ও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত মানসিক একাগ্রতা ও সময়ানুবর্তিতার অভ্যাস তৈরি করে
কুরআন তেলাওয়াত করলে হৃদয় শান্ত হয় এবং চিন্তা পরিষ্কার হয়
ফজরের পর কুরআন তেলাওয়াত করে পড়া শুরু করলে মনোযোগ অনেক বেশি থাকে
“নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়।” – (সূরা রা’দ: ২৮)
পড়ার সময় নির্দিষ্ট করে নিন (যেমন: সকালে ৯টা–১১টা, রাতে ৮টা–১০টা)
মোবাইল ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন
ছোট ছোট টার্গেট তৈরি করে পড়ুন
প্রতিদিন কিছু সময় দোয়া ও ধ্যানচর্চায় রাখুন
নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়ার আগে দোয়া পড়া অভ্যাস করুন
ধীরে ধীরে এটি আপনার মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেবে মনোযোগী হতে
দোয়া পাঠ করলে নিজের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে
দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য ও বরকত লাভ হয়
কঠিন বিষয় সহজ হয়ে যায়
ভয় দূর হয়, আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়
নিয়মিত সালাত
দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াত
সময়ের সদ্ব্যবহার
একাগ্রতা তৈরি করা আমল
আত্মবিশ্বাস অর্জনের দোয়া
শুধু পড়ালেখার সময় নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনে এসব ইসলামিক আমল চর্চা করলে জ্ঞান, মনোযোগ ও সফলতা—তিনটিই আসবে আল্লাহর রহমতে।
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চেষ্টা করে, আল্লাহ তার পথ সহজ করে দেন।” – (সূরা আনকাবুত: ৬৯)
উত্তর:
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا (রব্বি যিদনি ইল্মা) — এই দোয়াটি সবচেয়ে ছোট, সহজ এবং ফলদায়ক। এটি সূরা ত্বা-হা, আয়াত ১১৪ থেকে নেওয়া হয়েছে।
উত্তর:
এই দোয়াগুলো কুরআন ও হাদীস থেকে নেওয়া, তাই মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। তবে যে কেউ আল্লাহর কাছে জ্ঞান ও মনোযোগের জন্য দোয়া করতে পারেন।
উত্তর:
দুই সময়েই দোয়া পড়া উত্তম:
পড়া শুরুর আগে বরকতের জন্য
পড়া শেষে জ্ঞান স্থায়ী ও পরীক্ষায় সফলতার জন্য
উত্তর:
শুরুতে শুধু “রব্বি যিদনি ইল্মা” মুখস্থ করলেই চলবে। সময়ের সাথে বাকিগুলোও আস্তে আস্তে শিখে নিতে পারেন।
উত্তর:
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
দৈনিক অন্তত ৫ মিনিট কুরআন তেলাওয়াত
সময়মতো ঘুম ও খাওয়া
নির্দিষ্ট টাইমে পড়াশোনা
দোয়া পাঠের অভ্যাস
উত্তর:
মোবাইল Silent বা Airplane Mode করুন
নির্দিষ্ট অ্যাপে টাইম লিমিট সেট করুন
পড়ার শুরুতে দোয়া করে নিয়ত ঠিক করুন
একাগ্রতার জন্য ২৫-৩০ মিনিটের Focus Session ব্যবহার করতে পারেন (Pomodoro Technique)
উত্তর:
অবশ্যই। পরীক্ষার আগে ও উত্তর লেখার সময় আল্লাহর সাহায্য কামনায় এই দোয়াগুলো মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস জোগায়।
উত্তর:
দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরণ করুন
“اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ…” দোয়া পড়ুন
তারপর আবার ছোট একটা অংশ থেকে পড়া শুরু করুন
ফজরের সময় পড়লে মনোযোগ বেশি থাকে