13 Jul, 2025
বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যে উচ্চতা বৃদ্ধি বা লম্বা হওয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায়। বিশেষ করে যারা কম উচ্চতার কারণে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন বা চাকরি, মডেলিং, বা খেলাধুলার মতো পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন, তাদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই অনেকেই জানতে চান — “৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায়” আছে কি না।
সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধি একটি ধীরে ধীরে চলমান প্রক্রিয়া, যা বয়স, জেনেটিকস, হরমোন, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক সক্রিয়তার ওপর নির্ভর করে। তবে ৭ দিনের মধ্যে উচ্চতা এক ইঞ্চি বা চোখে পড়ার মতো বাড়ানো সম্ভব না হলেও, কিছু কৌশল অনুসরণ করলে দেহের ভঙ্গি সোজা হওয়া, মাংসপেশি প্রসারণ এবং স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে সামান্য উচ্চতা বৃদ্ধি অনুভব করা সম্ভব। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ লম্বা হওয়া সম্ভব না হলেও, আপনি নিজেকে তুলনামূলকভাবে লম্বা দেখাতে পারেন।
উচ্চতা নির্ধারণে জেনেটিক ফ্যাক্টর (বংশগত) মূল ভূমিকা রাখে। বাবা-মা যদি খাটো হন, তাহলে সন্তানেরও খাটো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই জেনেটিক সীমার মধ্যে থেকেও সুস্থ জীবনধারা ও সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে উন্নতি আনা সম্ভব।
জেনেটিক ফ্যাক্টর:
৬০-৮০% পর্যন্ত উচ্চতা নির্ভর করে জিনের ওপর।
পরিবারের উচ্চতা প্যাটার্ন প্রভাব ফেলে।
লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর:
পুষ্টিকর খাবার
নিয়মিত ব্যায়াম
ঘুম ও বিশ্রাম
মানসিক চাপমুক্ত থাকা
উচ্চতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল উপাদান হচ্ছে সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য। হাড়, মাংসপেশি এবং হরমোন গঠনে সঠিক পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রোটিন: হাড় ও পেশি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল
ক্যালসিয়াম: হাড় শক্তিশালী করে, উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
উৎস: দুধ, দই, ছানা, ব্রোকলি
ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।
উৎস: রোদ, ডিমের কুসুম, মাছের তেল
জিংক: গ্রোথ হরমোন সক্রিয় রাখে।
উৎস: বাদাম, চিংড়ি মাছ, লাল মাংস
আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম: রক্ত সঞ্চালন ও হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়ক।
উৎস: পালং শাক, কলা, বাদাম, দানা জাতীয় খাবার
সকালে:
দুধ, ডিম, কলা, ওটস বা চিড়ার সাথে বাদাম
দুপুরে:
ভাত/রুটি, ডাল, সবজি, মাছ/মুরগি
বিকেলে:
ফল, বাদাম, দই
রাতে:
হালকা ভাত বা রুটি, সবজি, ডিম
পানি:
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
খাবার অবশ্যই সময়ে সময়ে খেতে হবে (দিনে ৩ প্রধান ও ২ হালকা খাবার)
অতিরিক্ত খাওয়ার বদলে পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ করতে হবে
রাত্রে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে খাওয়া শেষ করা উচিত
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় খুঁজতে গিয়ে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং ব্যায়াম। যদিও এটি এক সপ্তাহেই বড় পরিবর্তন আনতে পারে না, তবে দেহের ভঙ্গি উন্নত করে আপনাকে আরও লম্বা ও সোজা দেখাতে সাহায্য করে। দৈনিক কিছু ব্যায়াম হাড়, মেরুদণ্ড এবং গ্রোথ হরমোনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সকালের সময় শরীর সবচেয়ে সাড়া দেয় ব্যায়ামে। নিচের ব্যায়ামগুলো উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য উপযোগী:
ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ (Cat-Cow Stretch)
মেরুদণ্ড নমনীয় করে
পেট ও পিঠে চাপ সৃষ্টি করে
কবরা স্ট্রেচ (Cobra Stretch)
পেট নিচে রেখে উপরের দিকের শরীর উঁচু করা
মেরুদণ্ড প্রসারিত করে
হ্যাংগিং (Bar Hanging)
হ্যান্ড বার বা দড়ি ধরে ঝুলে থাকুন
মেরুদণ্ড টেনে লম্বা করতে সহায়ক
টাচিং টোজ (Toe Touch)
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিচু হয়ে পায়ের আঙুল ছোঁয়ার চেষ্টা
হ্যামস্ট্রিং প্রসারিত করে
পেলভিক লিফট (Pelvic Bridge)
পিঠে শুয়ে হাঁটু ভাঁজ করে কোমর উপরে তোলা
পিঠ ও হিপ ফ্লেক্সর শক্তিশালী করে
প্রতিটি ব্যায়াম ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে ২-৩ বার করুন।
যোগব্যায়াম মানে শুধু মানসিক প্রশান্তি নয়, বরং শারীরিক উন্নয়নেও এটি দুর্দান্ত। নিচের যোগগুলো হাড়কে শক্তিশালী এবং শরীরকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে:
তাড়াসন (Tadasana - Mountain Pose):
দাঁড়িয়ে হাত উপরে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ান
শরীরকে লম্বা রাখে
ভুজঙ্গাসন (Bhujangasana - Cobra Pose):
পেটের উপর শুয়ে উপরের অংশ তুলুন
মেরুদণ্ড প্রসারিত করে
সার্বাঙ্গাসন (Sarvangasana - Shoulder Stand):
পা ও কোমর উপরে তুলে শরীর ভারসাম্যে রাখা
থাইরয়েড হরমোন ও রক্তসঞ্চালনে সহায়ক
সুর্য নমস্কার (Surya Namaskar - Sun Salutation):
পুরো শরীরের ব্যায়াম
রক্ত চলাচল, স্ট্রেচিং ও ফোকাস বাড়ায়
প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করলেই পরিবর্তন অনুভব করবেন।
উচ্চতা বৃদ্ধিতে গ্রোথ হরমোন (HGH) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সক্রিয় থাকে সাধারণত রাতে এবং ব্যায়ামের সময়। নিচের ব্যায়ামগুলো HGH সক্রিয় করতে সাহায্য করে:
স্কিপিং (লাফ দড়ি):
মেরুদণ্ডে গতি আনে এবং শরীরের ভারসাম্য উন্নত করে।
সাইক্লিং:
পা ও কোমরের হাড় শক্তিশালী করে, শরীর ফিট রাখে।
বাড়তি ওজন নিয়ে স্কোয়াট (Weighted Squat):
হাড়ের চাপ বাড়িয়ে গ্রোথ হরমোন উত্তেজিত করে।
জগিং/দৌড়:
কার্ডিও এবং পেশি সক্রিয় করে।
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় অনুসরণ করতে গেলে শুধু খাওয়া বা ব্যায়াম যথেষ্ট নয়, ঘুমের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গভীর ঘুমের সময় শরীরে সবচেয়ে বেশি গ্রোথ হরমোন (HGH) নিঃসরণ হয়।
HGH বেশি নিঃসৃত হয় ঘুমের Deep Sleep বা Slow Wave Sleep পর্যায়ে।
অপ্রতুল ঘুম HGH হ্রাস করে এবং শরীরের গ্রোথ বন্ধ করে দিতে পারে।
রাত ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ঘুম সবচেয়ে কার্যকর।
এই সময়ের মধ্যে শরীর স্বাভাবিকভাবে মেরামতি ও বৃদ্ধির কাজ করে।
দিনে ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা উচিত।
লম্বা হওয়া ৭ দিনের মধ্যে অনেকটা অসম্ভব হলেও, উপরোক্ত ব্যায়াম, সঠিক যোগব্যায়াম এবং ঘুমের অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর সোজা, নমনীয় ও সুস্থ থাকবে। যা আপনাকে দেখাবে আরও লম্বা, ফিট ও আত্মবিশ্বাসী। “৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায়” মূলত জীবনের স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে।
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় খুঁজতে গেলে সবার আগে যেটা খেয়াল রাখতে হবে তা হলো— শরীরের সঠিক ভঙ্গি বা posture। কারণ অনেক সময় উচ্চতা কম না হলেও ভুল ভঙ্গির কারণে আমরা খাটো দেখাই।
ভুলভাবে বসা বা দাঁড়ালে মেরুদণ্ড বেঁকে যায়, ফলে শরীর সংকুচিত দেখা যায়। সোজা হয়ে দাঁড়ালে স্বাভাবিক উচ্চতা প্রকাশ পায় এবং আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।
সঠিকভাবে দাঁড়ানোর নিয়ম:
কাঁধ সোজা, বুক সামনের দিকে
পা দুইটি সমানভাবে মাটিতে রাখুন
মাথা সোজা, চিবুক সামান্য উপর দিকে
সঠিকভাবে বসার নিয়ম:
পিঠ সোজা রাখুন (চেয়ারে পিছনে সাপোর্ট দিন)
পা মাটিতে সমানভাবে রাখুন
ল্যাপটপ বা মোবাইল চোখের সমান উচ্চতায় ব্যবহার করুন
মোবাইল ব্যবহার করার সময় নিচু হয়ে না দেখে চোখের সামনে ধরে দেখুন
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে প্রতি ৩০ মিনিটে উঠে হাটুন
কাজের জায়গায় যদি সম্ভব হয়, Ergonomic Chair/Table ব্যবহার করুন
স্ট্রেচিং ব্যায়াম দৈনিক চালিয়ে যান, বিশেষ করে ঘাড় ও পিঠের জন্য
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় অনুসরণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকে ঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
পানি হাড়ের কার্টিলেজকে নমনীয় রাখে, যাতে সহজে বাড়তে পারে
ক্যালসিয়াম ও মিনারেল সঠিকভাবে শোষণে সাহায্য করে
টক্সিন বের করে দিয়ে গ্রোথ হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়
দেহের কোষ পুনরুজ্জীবিত হয়, ফলে পেশি ও হাড় স্বাস্থ্যবান থাকে
পরামর্শ: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ডিটক্স ওয়াটার হচ্ছে পানির সঙ্গে প্রাকৃতিক উপাদান (লেবু, আদা, শসা, পুদিনা) মিশিয়ে প্রস্তুত একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, শরীরকে পরিষ্কার রাখে এবং হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে।
সাধারণ একটি ডিটক্স রেসিপি:
১ লিটার পানিতে ২ টুকরা লেবু, ৫ টুকরা শসা, ৪-৫টা পুদিনা পাতা দিয়ে সারারাত রেখে দিন
সকালে খালি পেটে পান করুন
এটি হরমোন ব্যালান্স, টক্সিন রিমুভ এবং পুষ্টি শোষণ বাড়াতে সহায়ক।
উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে কিছু নিরাপদ সাপ্লিমেন্ট ও ঘরোয়া উপাদান।
সতর্কতা: ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা ঠিক নয়। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও তুলনামূলক নিরাপদ সাপ্লিমেন্টের উদাহরণ:
Calcium + Vitamin D Tablets:
হাড় গঠনে সহায়ক। সাধারণ ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।
Zinc + Magnesium Supplements:
ঘুম ও হরমোন অ্যাক্টিভিটিতে সহায়তা করে।
Growth Hormone Stimulators (HGH boosters):
নির্দিষ্ট বয়সে সীমিত কার্যকর। কেবল চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণযোগ্য।
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় এর ঘরোয়া রেমেডিগুলোর মাঝে রয়েছে সহজলভ্য উপাদান যা হাড়, পেশি ও হরমোন উন্নয়নে সাহায্য করে।
দুধ:
ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। দিনে ১-২ গ্লাস পান করা উচিত।
কলা:
ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, পেশি ও হাড় শক্তিশালী করে।
হলুদ:
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, হাড় ও জয়েন্ট সুস্থ রাখে।
মধু:
প্রাকৃতিক এনার্জি সোর্স, হজমশক্তি বাড়ায় ও শরীরকে হালকা রাখে।
তিল বা কালো জিরা:
ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কের ভালো উৎস।
প্রতিদিন সকালে দুধের সাথে ১ চামচ মধু, অথবা কলার সাথে দুধ ব্লেন্ড করে খাওয়া যেতে পারে।
“৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায়” বাস্তবিকভাবে এক সপ্তাহে উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব না হলেও, এই সময়ের মধ্যে জীবনধারায় কিছু বড় পরিবর্তন আনলে আপনি দেখতে পাবেন — আপনি নিজেকে আগের চেয়ে আরও সোজা, ফিট এবং আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছেন। সঠিক posture, পর্যাপ্ত পানি, ব্যায়াম, এবং প্রাকৃতিক উপাদান— এগুলোই হতে পারে আপনার উচ্চতা উন্নয়নের স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি।
৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় খুঁজতে গিয়ে অনেকেই কয়েকদিন চেষ্টা করার পর হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে—এই ধরনের শারীরিক পরিবর্তন একটি মানসিকভাবে দৃঢ় ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া সম্ভব নয়।
উচ্চতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটে, তাই ধৈর্য্য ছাড়া ফল পাওয়া কঠিন।
মনোবল ভেঙে গেলে নিয়মিত ব্যায়াম বা সঠিক অভ্যাস চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ইতিবাচক মনোভাব আপনার দৈনন্দিন কাজে ও আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলবে, যা আপনাকে আরও “উচ্চতা” দেবে—মনোজাগতিক এবং বাস্তব অর্থেই।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
আপনি কেন লম্বা হতে চান? সেটি স্পষ্ট করে নিন।
ডায়েরি লিখুন:
প্রতিদিন আপনি কী ব্যায়াম করলেন, কী খেলেন, কেমন ঘুমালেন—লিখে রাখুন।
আয়নায় নিজেকে দেখুন:
প্রতিদিন নিজেকে আয়নায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখুন এবং বলুন—“আমি প্রতিদিন উন্নতি করছি।”
ইনফ্লুয়েন্সার বা সফল মানুষদের ভিডিও দেখুন:
যারা কম উচ্চতার হলেও সফল হয়েছেন, তাঁদের গল্প অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
নিজেকে পুরস্কৃত করুন:
নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সফল হলে নিজেকে ছোট উপহার দিন।
অনেকেই ৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায় বলতে এমন কিছু খোঁজেন যা বাস্তবে সম্ভব নয়। ইন্টারনেটে বা টিভিতে প্রচারিত নানা অতিরঞ্জিত দাবি থেকে সাবধান থাকা দরকার।
না, বাস্তবিকভাবে ৭ দিনে হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
তবে কিছু ব্যায়াম, সোজা দেহভঙ্গি, হাইড্রেশন ও ঘুমের মাধ্যমে আপনি আরও লম্বা দেখতে পারেন।
একে বলা যেতে পারে “perceived height increase” বা চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন।
“৭ দিনে ৩ ইঞ্চি লম্বা হোন!” — এ ধরনের দাবি ভুয়া এবং বিপজ্জনক হতে পারে।
কিছু সাপ্লিমেন্ট বা ম্যাসেজ অয়েল ব্যবহার করে দ্রুত ফল পাওয়ার দাবি বিজ্ঞাপনী কৌশল মাত্র।
চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কিছু গ্রহণ না করাই নিরাপদ।
আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাওয়া-দাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ভাল ভঙ্গি অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি নিজেকে আরও সুগঠিত, সোজা এবং আত্মবিশ্বাসী দেখতে পাবেন।
৭ দিনে পুরোপুরি লম্বা হওয়া না হলেও, আপনি ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে যাবেন।
লক্ষ্য রাখুন দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে (কমপক্ষে ৩-৬ মাস)।
শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে সাপোর্ট দিন—ব্যায়াম, খাবার ও ঘুমের মাধ্যমে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো কেমিক্যাল বা হারবাল পণ্য ব্যবহার করবেন না।
নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন—আপনার উচ্চতা আপনার পরিচয়ের এক অংশ, কিন্তু সব কিছু নয়।
“৭ দিনে লম্বা হওয়ার উপায়” আসলে একটি অনুপ্রেরণামূলক শুরু হতে পারে, যদি আপনি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করেন। এটা শুধু উচ্চতার কথা নয়—এটা জীবনযাত্রা পরিবর্তনের একটি পদক্ষেপ। সঠিক জ্ঞান, বাস্তব প্রত্যাশা ও ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন নিজের সেরা সংস্করণ।
সোজা হয়ে ঘুমানো (পিঠের ওপর চিত হয়ে) উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। বালিশ হালকা বা না থাকাই ভালো। এতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে এবং বাড়তে সাহায্য করে।
প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক ও আয়রন যুক্ত খাবার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন: দুধ, ডিম, কলা, বাদাম, মাছ, শাকসবজি।
হ্যাঁ, তবে সীমিতভাবে। সাধারণত ১৬–২১ বছর পর্যন্ত হাড়ের গ্রোথ প্লেট খোলা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ২৫ বছর পর্যন্ত সামান্য বৃদ্ধি হতে পারে—বিশেষত ব্যায়াম, খাদ্য ও ঘুম ঠিক থাকলে।
গভীর ঘুমের সময় গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়, যা উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দরকারি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম হলে হাইট বাড়ার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।
নিয়মিত স্ট্রেচিং ব্যায়াম, যোগব্যায়াম (তাড়াসন, ভুজঙ্গাসন), সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও সঠিক posture দ্রুত হাইট বৃদ্ধিতে কার্যকর।
আপেলে ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরকে সুস্থ রাখে, তবে সরাসরি হাইট বাড়ায় না। স্বাস্থ্যকর ডায়েটের অংশ হিসেবে উপকারী।
এটি বিজ্ঞাপনী প্রতারণা। প্রকৃতপক্ষে ৩ মাসে এত বড় পরিবর্তন সাধ্যসাধ্য নয়। বাস্তবসম্মত হলে ১-২ ইঞ্চি বাড়তে পারে নিয়ম মেনে চললে।
ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, টুনা), দুধ, মাশরুম, সূর্যরশ্মি — এগুলো ভিটামিন ডি এর ভালো উৎস।
এটি উচ্চতা নির্ভর করে জেনেটিক ও লাইফস্টাইলের ওপর। এই উচ্চতা অর্জন করতে চাইলে আপনাকে কম বয়স থেকে সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম ও ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
কারণ হতে পারে—জেনেটিক সীমাবদ্ধতা, অপুষ্টি, হরমোনজনিত সমস্যা, ঘুমের অভাব, অথবা দীর্ঘসময় ভুল posture।
আদর্শ উচ্চতা অঞ্চল ও পেশাভেদে ভিন্ন। বাংলাদেশে গড় উচ্চতা:
মেয়েদের জন্য: ৫'১"–৫'৪" সাধারণভাবে ভালো ধরা হয়।
কলা, পেঁপে, আপেল, আম — এই ফলগুলো ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ, যা হাইট বাড়াতে সহায়ক।
হ্যাঁ, দুধে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে যা হাড় গঠনে সহায়তা করে। এটি নিয়মিত খেলে উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ব্যায়াম (হ্যাংগিং, স্কিপিং), সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, সোজা হয়ে দাঁড়ানো—সব মিলিয়ে কাজ করে উচ্চতা বৃদ্ধিতে।
না, সাধারণত ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমই উপযুক্ত গ্রোথ হরমোন নিঃসরণের জন্য প্রয়োজন। ৬ ঘণ্টা ঘুম অপ্রতুল।
ঘুমের সময় শরীরের গ্রোথ হরমোন সক্রিয় হয়, যা হাড় ও কোষ বৃদ্ধিতে সহায়ক। তাই ভালো ঘুম মানেই উচ্চতা বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ।
চিত হয়ে ঘুমালে স্বাভাবিকভাবে পা সোজা থাকে। ভারী বালিশ ব্যবহার করবেন না এবং বিছানা সমতল রাখুন।
জেনেটিকভাবে যদি সম্ভাবনা থাকে এবং আপনি ব্যায়াম, ঘুম ও পুষ্টি ঠিকমতো মেনে চলেন, তবে ৬ ফুট হওয়া সম্ভব হতে পারে।
আপনি যদি এখনো ১৮–২০ বছরের নিচে হন, তাহলে ব্যায়াম + সুষম খাদ্য + ঘুম নিয়ম করে চললে ৫’৮” উচ্চতা অর্জন সম্ভব।
মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হয়—চিত হয়ে ঘুমানো শ্রেষ্ঠ। পা বেশি না ভাঁজিয়ে রাখাই ভালো।
তাড়াসন, হ্যাংগিং, কপবালতি, স্কিপিং, কেটলবেল স্কোয়াট—এই ধরনের ব্যায়াম মেরুদণ্ড ও পেশি প্রসারিত করে।
ডিম, দুধ, বাদাম, মাছ, শাকসবজি, কলা, দই—এগুলো প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে উচ্চতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া গতি পায়।
হ্যাঁ, সাধারণত একটি পূর্ণ আকারের বিছানা (75–80 ইঞ্চি দৈর্ঘ্য) ৫’১০” পর্যন্ত উচ্চতার জন্য যথেষ্ট।
উচ্চতার সঙ্গে ঘুমের পরিমাণ সরাসরি সম্পর্ক নেই। তবে বৃদ্ধি চলাকালীন বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়।
না, ঘুমের প্রয়োজন বয়স অনুযায়ী ভিন্ন হয়, উচ্চতা অনুযায়ী নয়।
হ্যাঁ, দিনের শেষে মেরুদণ্ডে চাপে সামান্য সংকোচন হয়, যা ঘুমের পর আবার ঠিক হয়ে যায়। তাই সকালে কিছুটা লম্বা মনে হয়।
বারবার ঘুম ভাঙলে গভীর ঘুম কম হয়, ফলে গ্রোথ হরমোন ঠিকভাবে নিঃসরণ হয় না এবং বৃদ্ধি প্রভাবিত হতে পারে।