পারকিনসন রোগ কী? লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

03 Jul, 2025

পারকিনসন রোগ কী? লক্ষণ, কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

পারকিনসন রোগ কী?

পারকিনসন রোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) ও প্রগতিশীল স্নায়ুবিক ব্যাধি যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে ডোপামিন নামক রাসায়নিকের ঘাটতির কারণে ঘটে। এই রোগের প্রভাবে শরীরের চলাফেরা, ভারসাম্য ও পেশির নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়। এটি মূলত মস্তিষ্কের substantia nigra নামক অঞ্চলের কোষ ধ্বংসের ফলে হয়, যেখান থেকে ডোপামিন উৎপন্ন হয়।

সংজ্ঞা: পারকিনসন রোগ হলো একটি নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার, যা মূলত শরীরের চলাচল নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করে।

ব্যাখ্যা: পারকিনসন রোগে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে যেসব কোষ ডোপামিন উৎপন্ন করে। ডোপামিনের ঘাটতির ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে সঠিকভাবে সঙ্কেত আদান-প্রদান ব্যাহত হয়। এতে করে রোগীর চলাফেরা ধীর হয়ে যায়, শরীর কাঁপতে থাকে এবং ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

কাদের বেশি হয়?

পারকিনসন রোগ সাধারণত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে কম বয়সেও (৪০ এর নিচে) কারো মধ্যে এই রোগ দেখা দিতে পারে – যেটিকে Young-onset Parkinson’s disease বলা হয়।

বেশি ঝুঁকিতে থাকেন যাঁরা:

  • বয়স্ক ব্যক্তিরা (৬০ বছরের বেশি)

  • যাদের পরিবারে আগে পারকিনসন রোগ ছিল (জেনেটিক কারণ)

  • যেসব পেশায় টক্সিক কেমিক্যাল বা কীটনাশকের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে

  • পুরুষদের মধ্যে নারীদের তুলনায় সামান্য বেশি ঝুঁকি থাকে


পারকিনসন রোগের প্রধান লক্ষণসমূহ

পারকিনসনের মূল চারটি শারীরিক লক্ষণকে "Cardinal Symptoms" বলা হয়। এগুলো হলো:

১. শরীরের কাঁপুনি (Tremor)

রোগের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণ। সাধারণত হাত, আঙুল বা পায়ের নির্দিষ্ট কোনো অংশ বিশ্রাম অবস্থায় থাকলেও কাঁপতে থাকে। একে “Resting Tremor” বলা হয়। অনেক সময় লিখতে গেলে হাত কাঁপে বা ছোট ছোট অক্ষর লেখে – যাকে Micrographia বলে।

২. গতির ধীরতা (Bradykinesia)

শরীরের প্রতিক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। কোনো কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়, হাঁটার গতি কমে যায় এবং মুখের অভিব্যক্তিও কমে আসে। দৈনন্দিন কাজ যেমন জামা পরা, দাঁড়ানো, ঘোরা ইত্যাদি কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া (Rigidity)

শরীরের পেশি শক্ত বা জড় হয়ে যায়। এটি হাত, পা বা ঘাড়ে বেশি অনুভূত হয়। এতে করে ব্যথা বা অস্বস্তিও হতে পারে এবং চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে।

৪. ভারসাম্যহীনতা (Postural Instability)

রোগী সহজেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে পারে। হাঁটার সময় শরীর সামনে ঝুঁকে থাকে এবং হঠাৎ থেমে যেতে পারে (freezing)। এই কারণে অনেক সময় হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায় বা পড়ে যায়।


পারকিনসন রোগের কারণ

পারকিনসন রোগের মূল কারণ এখনো পুরোপুরি নির্ধারিত নয়, তবে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত হয়েছে, যেগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

১. স্নায়ুতন্ত্রে ডোপামিনের ঘাটতি

পারকিনসন রোগের প্রধান কারণ হলো মস্তিষ্কের substantia nigra নামক স্থানে ডোপামিন উৎপাদনকারী স্নায়ুকোষ ধ্বংস হয়ে যাওয়া।
ডোপামিন এমন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা আমাদের শরীরের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। এর ঘাটতি হলে মস্তিষ্ক শরীরকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে হাত-পা কাঁপা, ধীরে চলা, পেশির শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

২. জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণ

 জেনেটিক কারণ:

  • প্রায় ১০-১৫% পারকিনসন রোগীর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস পাওয়া যায়।

  • কিছু নির্দিষ্ট জিনের মিউটেশন (যেমন: SNCA, LRRK2) এই রোগের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

 পরিবেশগত কারণ:

  • কীটনাশক, শিল্প রসায়ন বা বিষাক্ত ধাতুর সংস্পর্শ

  • দূষিত পানি বা বায়ুর প্রভাবে নিউরনের ক্ষতি

  • মাথায় আঘাতের ইতিহাস

এই সব কারণ দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুকোষ ধ্বংসে ভূমিকা রাখতে পারে।


কীভাবে রোগটি ধীরে ধীরে বাড়ে (Stages of Parkinson’s Disease)

পারকিনসন রোগ ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এবং একে সাধারণত Hoehn and Yahr Scale অনুযায়ী ৫টি ধাপে ভাগ করা হয়:

Stage 1:

  • একপাশের শরীরে লক্ষণ (উদাহরণ: ডান হাতে কাঁপুনি)

  • দৈনন্দিন কাজ করতে পারেন, তেমন সমস্যা হয় না

Stage 2:

  • উভয় পাশে লক্ষণ প্রকাশ (দুই হাত/পা)

  • চলাফেরা একটু ধীর, কিন্তু স্বাধীনভাবে চলা যায়

Stage 3:

  • ভারসাম্যহীনতা শুরু

  • হাঁটার সময় হোঁচট খাওয়া বা পড়ে যাওয়া

  • দৈনন্দিন কাজ করতে কিছুটা সহায়তা লাগে

Stage 4:

  • চলাফেরায় বড় বাধা, সহায়তা প্রয়োজন

  • স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ে

Stage 5:

  • রোগী শয্যাশায়ী বা হুইলচেয়ার নির্ভর

  • সর্বক্ষণ সাহায্যের প্রয়োজন


পারকিনসন রোগের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি কারা?

সবাই পারকিনসন রোগে আক্রান্ত না হলেও কিছু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে:

বয়স

  • ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সে এই রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

  • বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুকোষের কার্যকারিতা কমে যেতে থাকে।

জিনগত কারণ

  • পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ পারকিনসনে আক্রান্ত থাকলে নিজের ঝুঁকিও বাড়ে।

  • কিছু বিশেষ জিনের পরিবর্তন রোগের সূচনা ঘটাতে পারে।

পেশাগত বা পরিবেশগত ঝুঁকি

  • কৃষি কাজ, কীটনাশকের ব্যবহার বা রাসায়নিক কারখানার কর্মীদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি

  • টক্সিন বা ভারী ধাতুর সংস্পর্শে থাকার ইতিহাস

  • মস্তিষ্কে বারবার আঘাত (যেমন: ক্রীড়াবিদ, যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনা সদস্য)


রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি

পারকিনসন রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্ট কোনো একক ল্যাব টেস্ট নেই। চিকিৎসক রোগীর লক্ষণ, ইতিহাস এবং কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ চিহ্নিত করেন।

১. শারীরিক পরীক্ষা

চিকিৎসক রোগীর চলাফেরা, পেশির অবস্থা, কাঁপুনি, মুখের অভিব্যক্তি এবং ভারসাম্য দেখে প্রাথমিক মূল্যায়ন করেন। যেমন:

  • হাঁটার গতি ও ভঙ্গি

  • বসা বা দাঁড়ানোর সময় ভারসাম্য

  • হাত বা পা-র কাঁপুনি

  • মুখে এক্সপ্রেশন আছে কি না

২. নিউরোলজিকাল টেস্ট

নিউরোলজিস্ট (স্নায়ু বিশেষজ্ঞ) রোগীর স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করেন, যেমন:

  • Reflex পরীক্ষা

  • Muscle tone পর্যবেক্ষণ

  • Coordination ও অনুভূতির পরীক্ষা

  • Cognitive function বোঝার জন্য কিছু প্রশ্নোত্তর

৩. MRI বা CT Scan

এই স্ক্যানগুলো সাধারণত পারকিনসনের সঙ্গে মিল থাকা অন্য রোগ যেমন ব্রেইন টিউমার, স্ট্রোক বা হাইড্রোসিফালাস排除 করার জন্য করা হয়।
পারকিনসন রোগ নিজে MRI বা CT তে সরাসরি ধরা পড়ে না, তবে এটি অন্য কারণ排除 করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর।


পারকিনসন রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা

পারকিনসন রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সময়মতো চিকিৎসা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় রোগীর জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত করা যায়।

১. ওষুধ

Levodopa (L-Dopa):

  • এটি পারকিনসন রোগের সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ।

  • শরীরের ভিতরে গিয়ে এটি ডোপামিনে রূপান্তরিত হয়।

  • অনেক সময় এটি Carbidopa-র সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়।

Dopamine agonists:

  • ডোপামিনের মতো কাজ করে (যেমন: Pramipexole, Ropinirole)

  • প্রাথমিক অবস্থায় বা Levodopa এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয়।

MAO-B Inhibitors:

  • ডোপামিন ভেঙে ফেলার এনজাইমকে প্রতিরোধ করে (যেমন: Selegiline, Rasagiline)

COMT Inhibitors, Anticholinergics:

  • সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে।

২. শারীরিক থেরাপি

  • শরীর সচল রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি ও ওকুপেশনাল থেরাপি প্রয়োজন।

  • ভারসাম্য রক্ষা, পেশির নমনীয়তা ও শরীরের গতি উন্নত করে।

 কিছু কার্যকর থেরাপি:

  • Stretching exercises

  • Treadmill walking

  • Tai Chi বা Yoga

৩. সার্জারি (Deep Brain Stimulation - DBS)

যেসব রোগীর ওষুধে উপকার হচ্ছে না বা যাদের অপ্রতিরোধ্য কাঁপুনি রয়েছে, তাদের জন্য এই সার্জারি কার্যকর হতে পারে।

কীভাবে কাজ করে:

  • মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে এক জোড়া ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়।

  • শরীরের ভেতরে একটি ব্যাটারি সংযুক্ত ডিভাইস (পেসমেকার-এর মতো) দিয়ে ইলেকট্রিক সিগনাল পাঠানো হয়।

  • এতে কাঁপুনি ও অন্যান্য উপসর্গ অনেকাংশে কমে যায়।

৪. খাদ্য ও জীবনযাপন পরামর্শ

 খাদ্যাভ্যাস:

  • উচ্চ ফাইবার ও পানি: কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়

  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: মস্তিষ্ক রক্ষা করে (যেমন: ফল, বাদাম, সবজি)

  • ওষুধ খাওয়ার সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে খাবার গ্রহণ জরুরি (Levodopa খালি পেটে বেশি কার্যকর হয়)

 জীবনযাপন:

  • পর্যাপ্ত ঘুম

  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

  • নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ


পারকিনসন রোগ কি সম্পূর্ণ ভালো হয়?

x সম্পূর্ণ নিরাময় নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

বর্তমানে পারকিনসন রোগের কোনো চূড়ান্ত নিরাময় নেই। এটি একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা স্নায়ু রোগ, যার ফলে রোগীকে সারা জীবন এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হয়। তবে সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় রোগের অগ্রগতি ধীর করা যায় এবং অনেক বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব হয়।

yes চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণ

  • সময়মতো ওষুধ গ্রহণ করলে অনেক রোগী অনেক বছর ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন।

  • নতুন নতুন ওষুধ ও সার্জারি (যেমন: Deep Brain Stimulation) চিকিৎসাকে আরও উন্নত করেছে।

  • শারীরিক থেরাপি ও ব্যায়াম রোগের অগ্রগতি রোধে বড় ভূমিকা রাখে।

 মানসিক সাপোর্টের গুরুত্ব

পারকিনসন রোগ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রভাবও ফেলে – যেমন হতাশা, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া।

প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা:

  • পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি

  • কাউন্সেলিং বা থেরাপি

  • রোগীদের গ্রুপ বা কমিউনিটিতে যুক্ত থাকা

 মনোবল শক্ত থাকলে চিকিৎসার ফল আরও ভালো হয়।


পারকিনসন রোগে করণীয় ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

যদিও পুরোপুরি প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং যাদের মধ্যে রোগ রয়েছে, তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে।

 ১. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

  • সুষম খাবার গ্রহণ

  • পর্যাপ্ত ঘুম

  • মানসিক চাপ কমানো

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার

২. নিয়মিত ব্যায়াম

ব্যায়াম স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীরকে সচল রাখে।

কার্যকর ব্যায়ামসমূহ:

  • হাঁটা, সাইকেল চালানো

  • হালকা জগিং

  • যোগব্যায়াম বা ত’ai chi’

  • স্ট্রেচিং ও ভারসাম্য ব্যায়াম

৩. সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ

  • ছোট ছোট লক্ষণেও অবহেলা না করে নিউরোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।

  • নিয়মিত ফলোআপ ও ওষুধ গ্রহণ রোগের গতি কমিয়ে দেয়।

  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা জরুরি।

সংক্ষিপ্তভাবে:
পারকিনসন রোগ জীবনকে কঠিন করে তুললেও এটি জীবন শেষ করে না। সঠিক চিকিৎসা, মানসিক শক্তি এবং পরিবার-সমাজের সহানুভূতি থাকলে একজন রোগী দীর্ঘদিন সুস্থভাবে জীবন কাটাতে পারেন।

 

? সচরাচর জিজ্ঞাসা (FAQ)

১. পারকিনসন কি বংশগত?

পারকিনসনের বেশিরভাগ ক্ষেত্র বংশগত নয়। তবে ১০-১৫% ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস দেখা যায় এবং নির্দিষ্ট কিছু জিন (যেমন LRRK2, PARK7) এর পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।


২. রোগ কত দ্রুত বাড়ে?

পারকিনসন একটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা রোগ। রোগীর জীবনযাপন, চিকিৎসা গ্রহণ ও ব্যায়ামের উপর ভিত্তি করে অগ্রগতির গতি ভিন্ন হতে পারে।


৩. কোন বয়সে বেশি হয়?

সাধারণত ৬০ বছরের পর এই রোগের ঝুঁকি বেশি। তবে ৪০ বছরের কম বয়সেও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে, যাকে Young-onset Parkinson’s Disease বলা হয়।


৪. পারকিনসন রোগের প্রধান কারণ কী?

মস্তিষ্কের substantia nigra অঞ্চলের নিউরন ধ্বংস হয়ে ডোপামিন হ্রাস পাওয়া। ডোপামিনের ঘাটতি মস্তিষ্কের চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়।


৫. পারকিনসন রোগ পরিবারকে কিভাবে প্রভাবিত করে?

রোগীর স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম কমে গেলে পরিবারের উপর আর্থিক ও মানসিক চাপ বাড়ে। সহানুভূতি ও সহায়তামূলক পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ।


৬. পারকিনসন রোগের লক্ষণ কী কী?

  • শরীর কাঁপা (Tremor)

  • ধীর গতি (Bradykinesia)

  • পেশি শক্ত হওয়া (Rigidity)

  • ভারসাম্যহীনতা

  • মুখাবয়ব অনড় হয়ে যাওয়া


৭. পারকিনসনের জন্য কোন ওষুধ সবচেয়ে কার্যকর?

Levodopa + Carbidopa সবচেয়ে কার্যকর ও সাধারণ ওষুধ। এছাড়া Dopamine agonist ও MAO-B inhibitor ব্যবহৃত হয়।


৮. মস্তিষ্কের সমস্যার লক্ষণ কী কী?

  • স্মৃতি দুর্বলতা

  • কথা বলতে কষ্ট

  • চলাফেরার সমস্যা

  • আচরণগত পরিবর্তন

  • ভারসাম্যহীনতা


৯. বাংলাদেশে পারকিনসনের ভালো ডাক্তার কারা?

ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU)জাতীয় নিউরো-সায়েন্স ইনস্টিটিউট-এ অভিজ্ঞ নিউরোলজিস্টরা রয়েছেন। নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।


১০. শরীর কাঁপা কী কী কারণে হতে পারে?

  • পারকিনসন রোগ

  • অতিরিক্ত টেনশন বা স্ট্রেস

  • থাইরয়েড সমস্যা

  • ভিটামিন B12-এর অভাব

  • অতিরিক্ত চা/কফি


১১. পারকিনসন রোগের ব্যায়াম কী?

  • হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং

  • ভারসাম্য বজায় রাখার অনুশীলন

  • যোগব্যায়াম বা Tai Chi

  • ফিজিওথেরাপির অধীনে ব্যায়াম


১২. কি করলে ব্রেন ভালো থাকে?

  • পর্যাপ্ত ঘুম

  • নিয়মিত ব্যায়াম

  • মানসিক চাপ কমানো

  • মাছ, বাদাম, ফলমূল ও সবজি খাওয়া

  • নতুন কিছু শেখা বা বই পড়া


১৩. নিউরো রোগের লক্ষণ কী কী?

  • চলাফেরায় সমস্যা

  • হাত-পা দুর্বল হয়ে যাওয়া

  • কাঁপুনি

  • স্মৃতিভ্রষ্টতা

  • অস্পষ্ট কথা বলা


১৪. AVM এর অর্থ কী?

AVM = Arteriovenous Malformation, এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীতে গঠনগত সমস্যা, যা হঠাৎ ব্রেইন হেমোরেজের ঝুঁকি বাড়ায়।


১৫. ঘুমের মধ্যে শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে কেন?

এটি Hypnic jerk নামে পরিচিত। সাধারণত স্ট্রেস, ক্লান্তি, ঘুমের আগে ক্যাফেইন গ্রহণের কারণে হয়।


১৬. শরীর আনচান করার কারণ কী কী?

  • রক্তে ক্যালসিয়াম বা পটাশিয়ামের ঘাটতি

  • স্নায়ু সমস্যা

  • রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত

  • মাংসপেশির ক্লান্তি


১৭. হাত পা কাঁপা রোগের নাম কী?

  • পারকিনসন রোগ

  • Essential tremor

  • Hyperthyroidism

  • Anxiety-induced tremor


১৮. হাত-পা দুর্বল লাগে কেন?

  • নিউরো সমস্যা

  • পুষ্টির ঘাটতি

  • স্নায়ুর প্রদাহ

  • হেমোগ্লোবিন কম


১৯. পারকিনসন রোগের সবচেয়ে ভালো ঔষধ কোনটি?

Levodopa + Carbidopa সবচেয়ে কার্যকর, তবে ওষুধ নির্ধারণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে।


২০. পারকিনসন রোগ কি ভালো হয়?

সম্পূর্ণ ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। সময়মতো চিকিৎসা ও ব্যায়ামে রোগের গতি ধীর করা যায়।


২১. পারকিনসনের প্রাথমিক লক্ষণ কী?

  • শরীর কাঁপা

  • হালকা ভারসাম্য সমস্যা

  • হালকা মন্থরতা

  • হাতের লেখা ছোট হয়ে যাওয়া (Micrographia)


২২. পারকিনসন রোগ হয় কোনটির অভাবে?

ডোপামিন উৎপাদনকারী নিউরনের ক্ষয় ও ডোপামিন হ্রাস।


২৩. পারকিনসন রোগ কেন হয়?

ডোপামিন কোষ ধ্বংস, জেনেটিক পরিবর্তন, বিষাক্ত পরিবেশ বা মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে।


২৪. পারকিনসন রোগের ব্যায়াম কী কী?

  • নিয়মিত হাটা

  • ভারসাম্য ব্যায়াম

  • স্ট্রেচিং

  • থেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ফিজিওথেরাপি