25 Jun, 2025
পানিশূন্যতা (Dehydration) তখনই হয় যখন আমাদের দেহে পর্যাপ্ত পানি না থাকে, অর্থাৎ শরীর যতটুকু পানি হারায়, তার তুলনায় কম পানি গ্রহণ করা হয়। এটি গরমে, অতিরিক্ত ঘাম, জ্বর, ডায়রিয়া বা বমির ফলে হতে পারে।
অতিরিক্ত পিপাসা লাগা
মুখ শুকিয়ে যাওয়া
প্রস্রাব কমে যাওয়া ও রঙ গাঢ় হওয়া
দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন। গরমকালে ও ব্যায়ামের পরে বেশি পানি পান করতে হবে।
তরমুজ, শসা, আনারস, মাল্টা ইত্যাদি ফলে পানি ও খনিজ থাকে যা পানিশূন্যতা দূর করে।
বিশেষ করে ডায়রিয়া বা বমির পর শরীর থেকে লবণ-পানি বেরিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ওআরএস সঠিক সমাধান।
ওআরএস তৈরি পদ্ধতি:
১ লিটার ফুটানো ঠাণ্ডা পানিতে ১ চা চামচ লবণ + ৮ চা চামচ চিনি মিশিয়ে নিন।
প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ নারকেল পানি শরীরকে দ্রুত সতেজ করে ও পানিশূন্যতা কমায়।
ডালসুপ, মুরগির স্যুপ, ভাতের মাড় এসব শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে।
চা-কফি বা কোল্ড ড্রিংকস ডিহাইড্রেশনে সহায়তা না করে বরং আরো পানি হারাতে পারে।
ইফতারের শুরুটা লেবু শরবত, ফলের শরবত বা ডাবের পানি দিয়ে করলে শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে।
কিছু সবজি আছে যেগুলোতে ৯০% বা তার বেশি পানি থাকে। যেমন:
ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, পেঁপে ও পালংশাক
এগুলো রান্না করে বা স্যুপে ব্যবহার করলে দেহে পানির চাহিদা মেটায় এবং সতেজ রাখে।
ইফতারে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার হিসেবে স্যুপ খুবই উপকারী।
সবজি ও মুরগির স্যুপে প্রায় ৯২% পানি থাকে
এটি শরীরের পানি ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে
হজমে সহায়তা করে
তরমুজে প্রায় ৯২% পানি থাকে।
তরমুজ জুস, স্মুদি বা কেটে খাওয়া যায়
এটি শরীর ঠান্ডা রাখে
তৃষ্ণা মেটায় ও মিনারেল সরবরাহ করে
কলা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম ও প্রাকৃতিক শর্করার ভালো উৎস।
পানিশূন্যতা কমায়
দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তি যোগায়
সাহরিতে খেলে সারাদিনের জন্য উপকারী
শসা ও লেটুসপাতায় প্রায় ৯৬% পানি থাকে।
সালাদে ব্যবহার করুন
শসার জুস পান করুন
শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখে
টমেটোতে প্রায় ৯৪% পানি রয়েছে।
সালাদ, জুস বা তরকারিতে ব্যবহার করুন
ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি পূরণে সহায়ক
দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও প্রায় ৮৮% পানি।
সাহরি বা ইফতারে দই রাখলে পেট ঠান্ডা থাকে
হজমে সাহায্য করে
পানিশূন্যতা দূর করে
এটা সবচেয়ে প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস (প্রায় ২ লিটার) পানি পান করা উচিত।
বিশেষ ক্ষেত্রে আরও বেশি পানি প্রয়োজন:
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী
যারা শারীরিকভাবে বেশি পরিশ্রম করেন
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় কাজ করেন
টিপস: তৃষ্ণা লাগার আগেই পানি পান করুন। তৃষ্ণা মানেই আপনি ইতিমধ্যে পানিশূন্যতার পথে।
সবসময় শুধু পানি না খেয়ে এমন কিছু ফলমূল ও সবজি খান যেগুলোতে উচ্চ জলীয় উপাদান থাকে।
উপযুক্ত খাবার:
শসা ও লেটুসপাতা (৯৬% পানি)
তরমুজ (৯২% পানি)
কমলা ও মাল্টা
স্ট্রবেরি
গাজর, পেঁপে, বাঁধাকপি, ফুলকপি
এসব খাবারে শুধু পানি নয়, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজও থাকে।
এগুলো দেহ থেকে দ্রুত পানি বের করে দেয়। যদি পান, তবে প্রতিটি কাপ কফির সঙ্গে এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
উচ্চ তাপমাত্রায় দেহ বেশি ঘামে, ফলে পানি হারায়।
গরমে বাইরে গেলে—
হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
ছায়ায় থাকুন বা ছাতা ব্যবহার করুন
প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর পর পানি পান করুন
শরীরচর্চার সময় ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি হারায়।
ব্যায়ামের পর পানি অথবা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করুন যাতে দ্রুত তরল ও লবণ পূরণ হয়।
খেলোয়াড় বা ফিটনেস পছন্দকারীদের জন্য:
স্পোর্টস ড্রিংক
নারকেল পানি
ঘরে তৈরি ওআরএস
আপনার হাইড্রেশন বোঝার অন্যতম সহজ উপায়:
প্রস্রাবের রঙ | অর্থ |
---|---|
হালকা হলুদ বা স্বচ্ছ | আপনি হাইড্রেটেড |
গাঢ় হলুদ বা বাদামি | পানিশূন্যতার ইঙ্গিত |
গাঢ় প্রস্রাব দেখলেই পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান।
যখন অতিরিক্ত ঘাম, ডায়রিয়া বা বমি হয়, তখন শরীর শুধু পানি নয়, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি খনিজ হারায়।
করণীয়:
ওআরএস খাওয়া
ডাবের পানি
স্পোর্টস ড্রিংক (কম চিনিযুক্ত)
অতিরিক্ত চিনি বা কেমিক্যালযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
ব্যস্ততায় অনেকেই পানি খেতে ভুলে যান। সেক্ষেত্রে:
তরমুজ গ্রীষ্মের এক অনন্য উপকারী ফল। এতে ৯০% এর বেশি পানি থাকে, যা শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে ও শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
তরমুজে থাকে:
পটাশিয়াম: শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে
ভিটামিন সি: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ত্বক ও হজমের জন্য উপকারী
খাওয়ার উপায়:
ফল হিসেবে কেটে খাওয়া
ঠাণ্ডা জুস বা স্মুদি তৈরি করে খাওয়া
শসায় থাকে প্রায় ৯৫% পানি। এটি কেবল শরীর হাইড্রেট করে না, বরং হজমের উন্নতিতেও সহায়ক।
উপকারিতা:
ফাইবার পাচনতন্ত্র ঠিক রাখে
খনিজ পদার্থ শরীর ঠান্ডা রাখে
ক্যালোরি কম – ডায়েটের জন্য আদর্শ
খাওয়ার উপায়:
সালাদে ব্যবহার
কাঁচা খাওয়া
জুস করে পান করা
আনারসে থাকে প্রায় ৮৬% পানি, যা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক।
এটি শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, বরং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
উপকারিতা:
ভিটামিন সি: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ব্রোমেলেইন: হজমে সহায়ক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কোষ রক্ষা করে
খাওয়ার উপায়:
কেটে খাওয়া
জুস বানিয়ে খাওয়া
ডাবের পানি হলো শরীরের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও প্রাকৃতিক পানীয়।
এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইট, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি যা দেহের পানি ও খনিজ ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
উপকারিতা:
তাপদাহ প্রতিরোধ করে
হৃদপিণ্ড ও কিডনি ভালো রাখে
শরীর ঠান্ডা রাখে
কিডনির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
কাঁচা আম গ্রীষ্মকালীন এক অনন্য ফল, যা দিয়ে তৈরি হয় "আম-পরা" বা কাঁচা আমের শরবত।
উপকারিতা:
ভিটামিন সি ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ
ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে
তাপজনিত মাথাব্যথা কমায়
উপায়:
কাঁচা আম সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে ঠান্ডা পানিতে, লবণ, চিনি, বিট লবণ মিশিয়ে শরবত তৈরি করুন।
বেল হলো গরমে খাওয়ার জন্য এক অনন্য ফল। এতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, ট্যানিন, ফাইবার ও ফাইটোকেমিক্যাল।
উপকারিতা:
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পেট ঠান্ডা রাখে ও হজমে সহায়তা করে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
ডায়রিয়া ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করে
শরবত তৈরি করে নিয়মিত ইফতার বা দুপুরের খাবারে খেলে দারুণ উপকার পাবেন।
ঘন ঘন ওআরএস দিন
স্তন্যপান চালিয়ে যান
পাতলা খাবার দিন (সুপ্ত ভাত, ডাল ইত্যাদি)
নির্ধারিত সময় পরপর পানি দিন
ডায়রিয়া বা জ্বর হলে ওআরএস অবশ্যই দিন
ডাক্তারের পরামর্শ নিন যদি অবস্থার অবনতি হয়
পানি শরীরের জন্য জীবনরস।
পানিশূন্যতা ছোট সমস্যা মনে হলেও অনেক সময় বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ ও ফলমূল খাওয়া হলে সহজেই এই সমস্যা দূর করা যায়।
তৃষ্ণা বেশি লাগা
মুখ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
প্রস্রাব কমে যাওয়া ও গাঢ় রঙের হওয়া
মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা অনুভব করা
ওআরএস (ORS) পান করা
প্রচুর পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়
গুরুতর হলে স্যালাইন দিতে হয়
ওআরএস হলো পানিশূন্যতা দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এতে শরীরের পানি ও খনিজ পদার্থ দ্রুত পূরণ হয়, বিশেষত ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত ঘামের পরে।
মাথা ঘোরা
দুর্বলতা
প্রস্রাব কমে যায়
হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে
প্রচুর ঘাম
ডায়রিয়া, বমি
পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
অতিরিক্ত গরমে কাজ করা
প্রচুর পানি পান
ফলের শরবত, ওআরএস, ডাবের পানি গ্রহণ
পানি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
বারবার ওআরএস খাওয়ানো
মায়ের দুধ অব্যাহত রাখা
পাতলা খাবার দিন
দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
তরমুজ, শসা, ডাবের পানি
বেলের শরবত, কাঁচা আমের শরবত
আনারস, লেটুসপাতা, দই
মাথা ব্যথা
ত্বক শুষ্ক
প্রস্রাব কম হওয়া
ক্লান্তি, দুর্বলতা
হ্যাঁ, মাথা ভার, মনোযোগ কমে যাওয়া ও অস্বস্তির কারণে দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতে পারে।
ওআরএস বা ডাবের পানি খান
প্রচুর তরল খাবার নিন
ছায়ায় বিশ্রাম নিন
গুরুতর হলে ডাক্তার দেখান
কিডনি বা লিভার সমস্যা
হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা
প্রোটিনের ঘাটতি
তরমুজ, শসা, কমলা, আনারস
ডাবের পানি, লেটুসপাতা, টমেটো
বেল, দই, স্যুপ
মাথা ঘোরা, দুর্বলতা
হিটস্ট্রোক
রক্তচাপ কমে যাওয়া
কিডনি সমস্যা
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
বুক ভার মনে হওয়া
কাশি ও হাঁপানির মতো লক্ষণ
১. হালকা
২. মাঝারি
৩. তীব্র (Severe)
পেট ফাঁপা
ওজন বেড়ে যাওয়া
ক্লান্তি ও হজমের সমস্যা
পা উঁচু করে বিশ্রাম
লবণ কম খাওয়া
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন
কিডনি, লিভার বা হৃদরোগ
এলার্জি
প্রোটিন ঘাটতি
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ২–৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত (৮–১২ গ্লাস)।
ডিহাইড্রেশন
কোষ্ঠকাঠিন্য
মাথা ব্যথা
কিডনি স্টোন
ডিহাইড্রেশন (Dehydration)
ডিহাইড্রেশন হলে কি খেতে হবে?
ডিহাইড্রেশন হলে খেতে হবে এমন কিছু খাবারের নাম:
তরমুজ,
শসা,
ডাবের পানি,
কাঁচা আমের শরবত,
আনারস,
বেলের শরবত,
দই,
লেটুসপাতা,
টমেটো,
গাজর,
পালংশাক,
ওআরএস (ORS),
মাল্টা,
স্ট্রবেরি,
খেজুর।
ডিহাইড্রেশন হলে কি খাওয়া যাবে না?
ডিহাইড্রেশন হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না (বা পরিহার করা উচিত):
চা,
কফি,
কোল্ড ড্রিংক,
অ্যালকোহল,
অতিরিক্ত ঝাল খাবার,
বেশি লবণযুক্ত খাবার,
ফাস্ট ফুড,
ভাজাপোড়া,
চকোলেট,
ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংক।
সারাংশ:
পানিশূন্যতা দূর করার উপায়: প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন, ফলমূল ও ওআরএস গ্রহণ করুন, ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন এবং শরীরে পানি ঘাটতি দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।