দোয়া কবুলের সময়: কবে ও কীভাবে দোয়া কবুল হয় – দোয়া কবুল হবার বিশেষ সময় ও টিপস

24 Jun, 2025

দোয়া কবুলের সময়: কবে ও কীভাবে দোয়া কবুল হয় – দোয়া কবুল হবার বিশেষ সময় ও টিপস

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার দোয়া কবুল করেন, তবে কিছু বিশেষ সময় রয়েছে যেগুলোতে দোয়া অধিক কবুল হয় বলে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব দোয়া কবুলের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সময় সম্পর্কে, ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

তাহাজ্জুদের সময়

হাদীস থেকে:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"প্রভাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন— কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দেব?" (বুখারী)

বিশেষত্ব:
এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা অত্যন্ত বেশি। একাগ্রতার সাথে নামাজ ও দোয়া করুন।


  আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত (জুমার দিন)

হাদীস থেকে:
জুমার দিন এমন একটি সময় আছে, যেখানে বান্দা যদি কিছু চায়, আল্লাহ তাকে তা দিয়ে দেন। (মুসলিম)

বিশেষত্ব:
এই সময়টিতে দোয়া করা বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ, বিশেষ করে আসর থেকে মাগরিবের মাঝের সময়।


. আজান ও ইকামতের মাঝখানে

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“আজান ও ইকামতের মাঝখানে করা দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না।” (আবু দাউদ)

বিশেষত্ব:
মসজিদে কিংবা ঘরে, আজানের পর আল্লাহর কাছে মন খুলে দোয়া করুন।


. বৃষ্টি নামার সময়

রাসূল (সা.) বলেন:
“দোয়া কবুল হয় যখন বৃষ্টি বর্ষিত হয়।” (আবু দাউদ)

বিশেষত্ব:
বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা থাকে, সেই সময় বেশি বেশি দোয়া করা উচিৎ।


. যুদ্ধের ময়দানে ও মজলুমের দোয়া

রাসূল (সা.) বলেন:
“তিনটি দোয়া আছে যা প্রত্যাখ্যাত হয় না— মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া, এবং পিতামাতার দোয়া।” (তিরমিজি)

বিশেষত্ব:
কোনো নির্যাতিত বা বিপদগ্রস্ত মানুষের দোয়া সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।
 


. রুকু ও সিজদার মাঝে (সিজদার সময়)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"বান্দা যখন সিজদায় যায়, তখন সে তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটে থাকে। অতএব, বেশি বেশি দোয়া করো।" (মুসলিম)

বিশেষত্ব:
নামাজের সিজদার সময় হৃদয় থেকে করা দোয়া বেশি কবুল হয়।


 রোজাদারের ইফতারের সময়

হাদীস:
"রোজাদারের ইফতারের সময় দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না।" (তিরমিজি)

বিশেষত্ব:
ইফতারের মুহূর্তে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তখন বান্দা ক্ষুধার্ত ও বিনয়ী থাকে।


. কোরআন খতমের পর

ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
“কোরআন খতমের সময়ে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

বিশেষত্ব:
কোরআনের শেষ সুরা বা আয়াত পড়ে একান্তভাবে দোয়া করা একটি সুন্নাতী আমল।


 . লাইলাতুল কদরের রাতে

আল্লাহ বলেন (সূরা আল-কদর):
"এই রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।"

বিশেষত্ব:
রমজানের শেষ ১০ রাতের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজা উচিত। ওই রাতে দোয়া অগণন নেকি নিয়ে কবুল হয়।


 কোনো ভালো কাজের পরপরই

যেমন: সদকা দেওয়ার পর, কোরআন তিলাওয়াতের পর, সালাত আদায়ের পর ইত্যাদি।

বিশেষত্ব:
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো নেক আমলের পর করা দোয়া অনেক সময় দ্রুত কবুল হয়।


 সিজদার সময়

হাদীস:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"বান্দা যখন সিজদায় যায়, তখন সে তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটে থাকে। অতএব, বেশি বেশি দোয়া করো।"
(মুসলিম)

ফজিলত:
নামাজের মধ্যে সিজদার সময় হৃদয় নিংড়ানো দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।


রোজাদারের ইফতারের মুহূর্ত

হাদীস:
"রোজাদারের ইফতারের সময় দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না।"
(তিরমিজি)

ফজিলত:
ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে রোজাদারের অন্তর নরম ও বিনীত থাকে, তাই এ সময় দোয়া গ্রহণযোগ্যতার সম্ভাবনা বেশি।


 কোরআন খতমের পর

ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেছেন:
"কোরআন খতমের পর করা দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।"

ফজিলত:
কোরআন তিলাওয়াত শেষ করে আল্লাহর প্রশংসা ও নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী দোয়া করলে তা দয়ালু রবের কাছে পৌঁছে যায়।


 লাইলাতুল কদরের রাত

আল্লাহ বলেন (সূরা আল-কদর):
"এই রাতটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।"

ফজিলত:
রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজা উচিত। এই রাতটি দোয়া কবুলের বিশেষ সুযোগ।


. কোনো নেক কাজের পর

উদাহরণ: সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত, সালাত আদায় ইত্যাদি।

ফজিলত:
নেক কাজ করার পরপরই আন্তরিকভাবে দোয়া করলে তা অধিক কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
 


 সিজদার সময়

হাদীস:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“সেজদারত অবস্থায় বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে নিকটে থাকে। অতএব, এই সময় বেশি বেশি দোয়া কর।”
(মুসলিম, হাদীস ৪৮২)

কারণ:
সিজদা হলো বান্দার নতমুখ অবস্থান। এই বিনয়পূর্ণ মুহূর্তে দোয়া অধিক কবুল হয়।


রোজাদারের ইফতারের মুহূর্ত

হাদীস:
“রোজাদারের ইফতারের সময় তার দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।”
(তিরমিজি: ২৫২৫)

কারণ:
রোজা রাখার ফলে আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর অধিক নিকটে চলে যায়।


 কোরআন খতমের পর

ইবনে আবি দাউদ বলেন:
“সাহাবিগণ কোরআন খতম করলে পরিবারের সবাইকে একত্র করে দোয়া করতেন।”

কারণ:
কোরআন তিলাওয়াত আল্লাহর বড় নেক আমল। এর শেষে দোয়া করা আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।


 লাইলাতুল কদরের রাত

আল্লাহ বলেন:
“লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।”
(সূরা আল-কদর: ৩)

কারণ:
এই রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে এবং ফেরেশতারা অবতরণ করেন। তাই এই রাতে করা দোয়া অধিক গ্রহণযোগ্য।


 নেক কাজ করার পর

উদাহরণ: সালাত, সদকা, হজ, ওমরাহ, কুরআন তিলাওয়াত, কাউকে সাহায্য করা ইত্যাদি।

কারণ:
নেক আমলের পর অন্তর নরম হয় এবং আল্লাহর করুণা লাভের সুযোগ তৈরি হয়।


. বিপদের মুহূর্তে (চরম সংকট বা কষ্টের সময়)

আল্লাহ বলেন:
"কে আছে যে বিপদের সময় তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় এবং বিপদ দূর করে দেয়?"
(সূরা নামল: ৬২)

কারণ:
কষ্ট, কান্না বা বিপদের সময় দোয়া সত্যিই অন্তর থেকে আসে। সেই হৃদয়বিদারক দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।


. মসাফিরের (ভ্রমণরত ব্যক্তির) দোয়া

হাদীস:
“তিনটি দোয়া প্রত্যাখ্যান হয় না— মজলুমের দোয়া, পিতামাতার দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া।”
(তিরমিজি: ৩৪৪৮)

কারণ:
ভ্রমণে কষ্ট হয়, আত্মা নম্র হয়—এই অবস্থায় দোয়া সহজেই কবুল হয়।


. নামাজের পর

হাদীস:
"প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর দোয়া করো, তা কবুল হয়।"
(তিরমিজি)

কারণ:
সালাত শেষে অন্তর নরম থাকে, এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে গভীরতম অবস্থায়।


রমজান মাসে

হাদীস:
“রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খোলা হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকে...”
(বুখারী ও মুসলিম)

কারণ:
এই মাসে নেক কাজের প্রতিদান অনেক গুণ বেশি, দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেড়ে যায়।


. নামাজের মধ্যে দোয়া (বিশেষত তাশাহহুদের পর)

রাসুল (সা.) তাশাহহুদের পর দোয়া করতেন।
বিশেষত দরূদ পাঠের পর ব্যক্তিগত দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার আশা থাকে।


 অন্যের অজান্তে কারও জন্য দোয়া

হাদীস:
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে, ফেরেশতা তার জন্যও বলেন: ‘আমিন, তোমার জন্যও যেন হয়।’”
(মুসলিম: ২৭৩২)

কারণ:
এই নিঃস্বার্থ দোয়া অনেক বেশি কবুল হয়।


. হজ এবং আরাফাহর দিনে

হাদীস:
“আরাফাহর দিনের দোয়া হলো সর্বোত্তম দোয়া।”
(তিরমিজি: ৩৫৮৫)

কারণ:
এই দিনটি হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এই দিন দোয়া কবুলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়।
 


 রাতের শেষ অংশ (তাহাজ্জুদের পূর্বে শেষ তৃতীয়াংশ)

হাদীস:
“প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন: ‘কে আছে আমার কাছে চাইবে? আমি দেবো।’”
(বুখারী: ১১৪৫)

 এটি সবচেয়ে শক্তিশালী সময়গুলোর একটি, যা আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন।


 দুর্বল, অভাবী, গরীবদের দোয়া

হাদীস:
“তোমরা গরীবদের মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত হও এবং তাদের দোয়ার মাধ্যমে রিজিক লাভ কর।”
(আবু দাউদ: ২৬৪১)

নিঃস্ব, গরীব, নিপীড়িত ব্যক্তির অন্তরের দোয়া সহজেই কবুল হয়।


 ইমান বৃদ্ধি ও গুনাহ থেকে ফিরে আসার পর

যখন কেউ সৎপথে ফিরে আসে এবং তাওবা করে, তখন তার অন্তর নরম ও খাঁটি হয়।

 এ সময় তার দোয়াগুলো খুব আন্তরিক হয়, যা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


 গোপনে কান্নাকাটি করে দোয়া করার সময়

হাদীস:
“সাত শ্রেণির লোক কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া পাবে... যিনি একাকী আল্লাহকে স্মরণ করেন এবং তার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।”
(বুখারী: ৬৬০)

 অশ্রুসিক্ত দোয়া হল সবচেয়ে প্রভাবশালী দোয়া।


 হালাল উপার্জন ও খাবারের মাধ্যমে দোয়া

হাদীস:
“যদি কারো খানা-পিনা হালাল হয়, পরিধান হালাল হয়, আয় হালাল হয় – তাহলে তার দোয়া কবুল হয়।”
(মুসলিম)

 জীবিকা হালাল হলে দোয়া কবুল হওয়ার পথ খুলে যায়।


. জামাতে নামাজের পর সম্মিলিত দোয়া

বিশেষ করে ইমামের সঙ্গে বা মুসল্লিদের সম্মিলিত দোয়া অনেক সময় আল্লাহ কবুল করে থাকেন।

 এটি সাহাবাদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।


. "ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুম" বলে দোয়া করা

দুআ:
“ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুম, বিই রহমাতিকা আস্তাগিস।”

 এই দোয়া পড়ে আল্লাহর দয়া কামনা করলে তা খুবই প্রভাবশালী বলে বর্ণিত।
 


 কারো অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা

হাদীস:
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে, ফেরেশতা বলে: ‘আমিন, এবং তোমার জন্যও একই রকম হোক।’”
(সহীহ মুসলিম)

 নিঃস্বার্থভাবে কারো কল্যাণ চেয়ে দোয়া করলে ফেরেশতাও দোয়া করে।


 দোয়ার শুরু ও শেষে নবীর (সা.) প্রতি দরূদ পাঠ

হাদীস:
“যদি কেউ দোয়ার শুরুতে এবং শেষে দরূদ না পাঠ করে, তাহলে তার দোয়া মেঘের নিচে আটকে যায়।”
(তিরমিজি)

 দোয়ার কাঠামোতে দরূদ থাকলে দোয়া কবুলের পথ খুলে যায়।


. ইমানদার ভাইয়ের জন্য পেছনে দোয়া

 এটা এমন সময় নয়, বরং এমন প্রক্রিয়া—যেটার মাধ্যমে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।


. গুনাহ করার পর কাঁদতে কাঁদতে তাওবা করা

আল্লাহ বলেন:
“যারা গুনাহ করার পর সাথে সাথে তাওবা করে, তাদের আমি ক্ষমা করে দিই।”
(সূরা আল-ইমরান: ১৩৫)

 গুনাহর পর অনুশোচনাসহ কাঁদতে কাঁদতে তাওবা করলে দোয়া কবুল হয়।


. আল্লাহর নাম (আস্মা উল হুসনা) ব্যবহার করে দোয়া করা

কোরআনে:
"আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, সেগুলো দিয়ে তাঁকে ডাকো।"
(সূরা আরাফ: ১৮০)

 “ইয়া রাহমান, ইয়া গফুর, ইয়া সালাম…” ইত্যাদি ব্যবহার করলে দোয়া আরও গ্রহণযোগ্য হয়।


. হঠাৎ জেগে ওঠার পর যে কেউ দোয়া করে

হাদীস:
“যে কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দোয়া করে, তার দোয়া কবুল হয়।”
(বুখারী: ১১৫৪)

 রাতের মাঝখানে বা হঠাৎ জেগে গেলে তখন দোয়া কবুল হয়।


. নিজের উপর মায়া করে আল্লাহকে ডাকলে

আল্লাহ বলেন:
“রহম করতে চাইলে আমি তোমার চেয়েও বেশি মায়াবান।”
(সূরা আনআম: ৫৪)

 যখন বান্দা নিজেকে অসহায়, পাপী ও অপরাধী জ্ঞান করে আল্লাহর রহমত কামনা করে—তখন তা অধিক কবুল হয়।
 


. যখন কেউ আল্লাহর নামে কসম খেয়ে কিছু চায়

উদাহরণ:
"হে আল্লাহ! আমি তোমার দয়ার কসম করে চাই..."
 আল্লাহর নাম ও গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করলে তা অধিক গুরত্ব পায়।


. বিপদের সময় বললে: "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন"

হাদীস:
যখন কেউ কোনো ক্ষতি বা দুঃখজনক সংবাদ শুনে এই বাক্যটি পড়ে, আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দেন।
(মুসলিম: ৯১৮)

 তারপর চুপিচুপি চাওয়া দোয়াটি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


. আল্লাহর ‘বড়ত্ব ও অসীমতা’ স্বীকার করে দোয়া করা

উদাহরণ:
“হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই...”
 যখন বান্দা একান্তভাবে আল্লাহর মহত্ব ও একত্ব স্বীকার করে দোয়া করে, তখন তা আত্মিকভাবে গভীর হয় ও কবুল হয়।


. অন্য কেউ ‘আমিন’ বললে

হাদীস:
দোয়া করার সময় কেউ ‘আমিন’ বললে, সে দোয়াতেও অংশীদার হয়।
 তাই সম্মিলিত দোয়া বা জামাতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়।


 ন্যায়বান পিতামাতার দোয়া সন্তানের জন্য

হাদীস:
"তিনটি দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না, তার মধ্যে একটি হল পিতামাতার সন্তানের জন্য দোয়া।"
(তিরমিজি)

 পিতা-মাতার মন থেকে আসা দোয়া সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠন করে দিতে পারে।


 সালেহ ব্যক্তির কাছে দোয়া চাওয়া

যেমন সাহাবারা রাসুল (সা.) এর কাছে দোয়া চাইতেন।
 ভালো, তাকওয়াবান মানুষের দোয়া অনেক সময় কবুল হয়।


. ঈমানি জোশে দোয়া করা

যখন কেউ আল্লাহর প্রতি তীব্র ঈমান ও নির্ভরতার সাথে কিছু চায়। যেমন:
"হে আল্লাহ! তুমিই একমাত্র আশ্রয়!"

 এই ভরসামূলক ও বিশ্বাসভিত্তিক দোয়া কবুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রাখে।


. যখন কারও প্রতি জুলুম করা হয় না, বরং নিজে সহ্য করে আল্লাহর কাছে বিচার চায়

 জুলুম না করে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করা—এটি একপ্রকার "মজলুমের দোয়া" হয়।


. জানাজার পর মানুষের সম্মিলিত দোয়া

যেমন: “হে আল্লাহ! এই মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করুন...”
জানাজার পর বহু মানুষের সম্মিলিত দোয়া কবুল হতে পারে।
 


. হজের সময় “তাওয়াফ” বা “সাফা-মারওয়া” এর মাঝে দোয়া

 হজ ও ওমরাহর সময় কাবা শরীফ ঘিরে তাওয়াফ করার সময় ও সাফা-মারওয়ার মাঝে ওঠানামার সময় দোয়া কবুল হয়।
দলিল: সাহাবা ও তাবেয়ীদের আমল।


 গোপনে দান করার পর

 গোপনে দান করা ইখলাসের অন্যতম নিদর্শন।
হাদীস: “সাত শ্রেণির লোক কিয়ামতের দিনে আরশের ছায়া পাবে... তাদের একজন সেই, যে ডান হাত যা দেয়, বাম হাত জানে না।” (বুখারী)
গোপন দানের পর করা দোয়া অনেক সময় কবুল হয়।


. অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় (কিন্তু আল্লাহর কাছে অভিযোগ না করে দোয়া করা)

আল্লাহর কাছে নির্ভরতায় থাকা অবস্থায় ধৈর্য সহকারে দোয়া করলে তা কবুল হতে পারে।


 অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে দোয়া

হাদীস:
“যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখে ও দোয়া করে, আল্লাহ তার পাপ মাফ করে দেন।” (তিরমিজি)


. নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করার পর

যেমন: গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, হারাম থেকে ফিরে আসা ইত্যাদি।
এই আত্মসংযমের মুহূর্তে দোয়া খুব আন্তরিক হয় এবং কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


 চোখের অশ্রু নিয়ে একাকী রাতে আল্লাহকে ডাকা

"অশ্রু" ও "নিঃশব্দ কান্না" আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদা রাখে।


. ঈদের দিন সকালে নামাজের পর দোয়া

যদিও ঈদের দিন রোজা হারাম, তবে নামাজের পর বা তকবীরের সময় দোয়া আল্লাহ কবুল করে থাকেন। (ইবনে আবি শাইবা)


. সদকা দেয়ার পর গরীবের দোয়া

আপনি যদি কাউকে সাহায্য করেন, তার হৃদয় থেকে করা দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।


. অমুসলিম থেকে মুসলিম হওয়ার পর প্রথম দোয়া

ইলমুল ফিকহ অনুযায়ী, নতুন মুসলিমদের দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয় কারণ তাদের আমলনামা তখন একদম নতুন।


. আযাবের আশঙ্কায় আল্লাহর কাছে কান্না করে ক্ষমা চাওয়া

 বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিকম্প, মহামারী ইত্যাদির সময় আল্লাহর কাছে তওবা ও দোয়া।
 


 নামাজে কুরআন তিলাওয়াতের সময় অন্তর নরম হয়ে দোয়া করা

 যখন আপনি নামাজে এমন কুরআন তিলাওয়াত করেন যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়—যেমন জান্নাত, জাহান্নাম, আল্লাহর রহমত বা আযাব সম্পর্কে—সেই মুহূর্তে চোখে পানি এসে গেলে তখন দোয়া করলে তা খুব আন্তরিক হয়।


 আল্লাহর “আরশ” এর নিচে দোয়া করা মনে করে, গভীর বিনীতভাবে চাওয়া

 যিনি মনে মনে উপলব্ধি করেন, “আমি এখন যেন আরশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি”—এই ভয় ও শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে দোয়া করলে তা দয়ালু আল্লাহর কাছে কবুল হয়।


. সৃষ্টির নিঃসঙ্গতা দেখে স্রষ্টাকে ডাকলে

 যেমন: গভীর রাতে আকাশের তারা দেখে, অথবা একা নির্জনে বসে আল্লাহর সৃষ্টিকে চিন্তা করে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দোয়া করা।

আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আসমান-জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত-দিনের পরিবর্তনে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে...” (সূরা আলে ইমরান: ১৯০–১৯১)


 অন্যের কষ্ট দেখে নিজের জন্য দোয়া করা (সচেতনভাবে)

 আপনি যখন কাউকে বিপদে দেখেন এবং আপনি আল্লাহর কাছে বলেন:
"হে আল্লাহ! আমাকে তুমি এমন কষ্ট থেকে হেফাজত করো, এবং তাকে তুমি রক্ষা করো" — এটা এক ধরনের খাঁটি দোয়া।


 দুনিয়ার প্রতি বিরক্তি ও আখিরাতের প্রতি আগ্রহ থেকে দোয়া

কেউ যখন প্রকৃত ঈমানদার হয়ে দুনিয়ার মোহ থেকে নিজেকে সরিয়ে আখিরাতের সফলতা কামনা করে, তখন তার দোয়াগুলো বেশি আন্তরিক হয়।

হাদীস:
“হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তর দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত করো।” (দু'আয় সালাফ থেকে)


আল্লাহ তাআলা সব সময়ই বান্দার দোয়া কবুল করতে সক্ষম, তবে উপরোক্ত সময়গুলোতে দোয়া করলে তা অধিক কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব সময়কে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।