মশা তাড়ানোর ঘরোয়া ১৬টি উপায়

মশা তাড়ানোর ঘরোয়া ১৬টি উপায়

দিন দিন মশা 'র উৎপাত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যুও হচ্ছে। মশার কামড়ের ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, এবং পীত জ্বরের মতো ভয়াবহ রোগ আমাদের হচ্ছে। বর্তমানে মশা মারতে আমরা কয়েল অথবা অ্যারোসল ব্যবহার করে থাকি যা ফুসফুসের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আবার ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশা তাড়ানো যাই কিন্তু এটিতে শক থাকায় শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। তাই আজকে আমরা জানবো কিভাবে ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়াতে পারি।     


নিম তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে দিয়ে মশা তাড়ানো 
নিমের গন্ধ মশা পছন্দ করে না। তাই নিমের তেল হাতে বা পায়ে মাখলে ঐ জায়গাতে মশা কামুড় দিবে না। তাছাড়া নিমের তেল শরীরে মাখলে বিভিন্ন রকম ত্বকের ঘা, অ্যালার্জি, এবং ইনফেকশন থেকে বিস্তার লাভ করা যায়। আপনি চাইলে নিমের তেলের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে লাগাতে পারেন। ১ ফোটা নিমের তেলের জন্য তিন ফোঁটা নারকেল তেল ব্যবহার করুন। 

mosa taranor sohoj upay
লেবু দিয়ে মশা তাড়ানোর
লেবু দিয়ে মশা তাড়ানো আগে গ্রাম বাংলায় প্রায় চোখে পরতো। একটি লেবুকে মাঝ বরাবর কেটে নিন এরপর এর ভিতরে লবঙ্গের নিচের অংশটুকু পুরোটা ঢুকাবেন এবং লবঙ্গের ফুলটা বাহিরের দিকে রাখবেন। একবার ঘরের দরজায় এবং জালানায় রেখে দিলে ৭দিন পর্যন্ত সেই ঘরে মশা প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ মশা টক দ্রব্যের (যেমন লেবু) এবং লবঙ্গের গন্ধ একদমই সহ্য করতে পারে না। আপনার ঘরে যেখান থেকে বেশি মশা আসে সেখানেই লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার করে মশার মরণ অস্ত্র বানাতে পারেন।

পুদিনা ও নারকেল তেল মিশিয়ে দিয়ে মশা তাড়ানো
পুদিনা গাছের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না যেখানে মশা বেশি থাকে সেখানে পুদিনা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। পুদিনার গন্ধ এতটাই অসহ্য যে অন্যকোনো ক্ষতিকর পোকামাকড় এর আসে পাশে আসতে পারে না। তাছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় গরম পানিতে পুদিনা পাতা দিয়ে জ্বাল দিলে যে ধুয়া বের হয় তাও মশা সহ্য করতে পারে না। এছাড়া আপনি পুদিনা তেল শরীরে মেখে রাখলেও আপনাকে মশা কামড় দিবে না। আবার আপনি চাইলে পুদিনা তেলের সাথে নারকেল তেল মিশাতে পারেন এতে করে এটি দ্বিগুন শক্তিশালী হবে। 

মশা তাড়াতে থাই লেমন গ্রাস
মশাদের জম হলো থাই লেমন গ্রাস। এর সুগন্ধ মশাদের মরণ জম। থাই লেমন গ্রাস থেকে বের হয় একধরণের সাইট্রোনেলা অয়েল আর এই অয়েলের সুগন্ধ মশারা এর ধারের কাছেই আসতে পারে না। ঘরের আঙ্গিনায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে থাই লেমন গ্রাস লাগাতে পারেন।  

নিশিন্দা ও নিম পাতা পুড়িয়ে মশা তাড়ানো 
প্রতিদিন নিশিন্দা ও নিম পাতা একসাথে গুঁড়া করে তা পুড়িয়ে মশা রোধ করতে পারেন। আর তাছাড়া নিশিন্দা ও নিম পাতা একসাথে বেটে শরীরে লাগালে ঐ জায়গাতে মশা কামড় দিতে পারবে না। এছাড়া খোসপাঁচড়া সারাতেও এটি কার্যকর।  

মশা তাড়ানোর লাইট
মশা হলুদ বার্তি অথবা এলইডি বার্তি থেকে সর্বদা দূরে থাকতে চাই। তাই আপনাদের ঘরের বার্তিটি পরিবর্তন করে হলুদ বার্তি অথবা এলইডি বার্তি নিয়ে আসুন। অথবা আপনি হলুদ সেলোফেন আপনার বার্তিটিকে জড়িয়ে রাখুন এতেও কাজ হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বৈদ্যুতিক হলুদ বার্তিটি জ্বালিয়ে রাখুন দেখবেন আপনার ঘরে মশার উৎপাত কমে যাবে।    

চা পাতা দিয়ে মশা তাড়ানো
আমরা চা খাওয়ার পর নষ্ট চা পাতা গুলি ফেলে দেই। কিন্তু এ ফেলানো চা পাতা দিয়েই তৈরী করা যাই মশা তাড়ানোর প্রাকৃতিক স্বাস্থ্যসম্বত পদ্ধতি। প্রথমে ফেলানো চা পাতা গুলি ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর তা সন্ধ্যার দিকে পোড়ান, পোড়ানো ফলে যে ধুয়া বের হবে তাই মশা তাড়ানোর ফর্মূলা। এতে করে মশা, মাছি এবং অন্যানো পোকামাকড়ও দূরে সরে যাবে। 

ফ্যান চালিয়ে মশা তাড়ান 
মশা অতি ক্ষুদ্র জীব হওয়ায় মশা ফ্যানের বাতাসে নিজের ভারসম্য ঠিক রাখতে পারে না। তার ফলে মশা আপনাকে কামড় দেওয়ার চিন্তা সে তখন কখনো করবে না। ঘরে ফ্যান চালিয়ে রাখলে মশা ঐ ঘরে প্রবেশ করতে চাই না। 

মশা থেকে বাঁচতে সঠিক কাপড়ের রং নির্বাচন করুন 
গাঢ় রঙের লাল, কালো, এবং নীল কাপড় মশাদের পছন্দ। তাই এই ধরণের কাপড় ঘরে বা গায়ে থাকলে তার প্রতি মশা আসক্তি থাকে। তাই হালকা রঙের কাপড় পরিধান করুন। 

কর্পূর দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
যেকোনো ফার্মেসি দোকান থেকে মশা তাড়ানোর ঔষধ ৫০ গ্রামের কর্পূরের ট্যাবলেট নিয়ে এসে একটি গ্লাসে রেখে দিন দেখবেন ২ মিনিটের মধ্যে সব মশা গায়েব হয়ে যাবে। ২ থেকে ৩ দিন পর পর পানি পরিবর্তন করুন। পরবর্তীতে ঐ পানি ফেলে না দিয়ে ঘর মুছে ফেলুন এতে করে ঘরে পিঁপড়া থাকবে না।    

সুগন্ধি দিয়ে মশা তাড়ানো 
মশারা যেকোনো সুগন্ধি পছন্দ করে না। তাই ঘুমানোর আগে আতর বা লোশন মেখে ঘুমাতে পারেন এতে করে মশা আপনার ধারের কাছেও ঘেসে আসবে না। ঘরের ভিতরেও সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন এতে করে মশা অনেকাংশ কমে যাবে।  

রসুন দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
রসুনের স্প্রে শরীরের খোলা জায়গায় লাগালে ঐ জায়গাতে মশা আক্রমণ করবে না। এই স্প্রে তৈরী করতে প্রথমে ৫-৭ টি রসুনের কোয়া মিহি করে বেটে নিন তারপর এর ভিতরে আদা চা চামচ নারকেলের তেল মিশিয়ে এক রাত রাখুন পরে ছেকে শেষে ৪-৫ ফোটা লেবুর রস ও ২ টেবিল চামচ পানি দিয়ে স্প্রে তৈরি করুন।  

নারিকেলের আঁশ দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
প্রথমে নারিকেলের আঁশটি টুকরা টুকরা করে ভালো মতো রোদে শুকান পরে তা পোড়ালে যে ধুয়া বের হবে তা দিয়ে মশা ৫ মিনিটের ভিতরে চলে যাবে। 

কেরোসিন তেল দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
কেরোসিন তেলের ভিতরে কয়েক টুকরা কর্পূর ভালো মতো মিশান। তারপর স্প্রে দিয়ে সারা ঘরে কিনারে কিনারে স্প্রে করলে মশা চলে যাবে। 

তুলসীগাছ লাগিয়ে মশা তাড়ানো 
খেয়াল করলে দেখবেন তুলসীগাছ আসে পাশে মশা থাকে না। কারণ এর সুগন্ধি মশা পছন্দ করে না। তাই জালানার পাশে তুলসীগাছ লাগাতে পারেন এতে করে ঘরের সুন্দর্য বৃদ্ধি পাবে তার সাথে পালাবে মশা। 

তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
নিমের তেল ও কর্পূর একসাথে মিশিয়ে স্প্রে তৈরি করুন। তারপর ঐ স্প্রে দিয়ে তেজপাতা উপর ছিটান। আবার তেজপাতাটি পুড়িয়ে ফেলুন। দেখবেন ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সব মশা গায়েব হয়ে গিয়েছে। 

mosa taranor sohoj ghoroa upay

ট্যাগ : মশা, মশা তাড়ানো, ঘরোয়া উপায়, প্রাকৃতিক উপায়

মশা তাড়ানোর সহজ ঘরোয়া উপায়