কফি বা চা য়ের বিকল্প পানীয়

কফি বা চা য়ের বিকল্প পানীয়

আমরা অনেকেই প্রায় প্রচুর পরিমানে চা খাই, দুধ চা অথবা রং চা। ডাক্তাররা বলে থাকেন রং চা য়ে কিছু পরিমান শরীলের উপকার করলেও দুধ চা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর প্রত্যেকদিন একইরকম চা খেতে খেতে আমরা এক ঘোয়ামি হয়ে পরি। তাই চায়ের বিকল্প পানীয় হিসাবে নিচের পানীয় গুলি খেতে পারেন এতে আপনার শরীর সুস্থ্য থাকার পাশাপাশি মন তাজা উৎফল্ল থাকবে।  

মাচা চা
গ্রিন টিয়ের বিপরীতে মাচা টি খেতে পারেন কারণ উভয়ই আসে ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস উদ্ভিদ থেকে। এটি খেতে সামান্য তিক্ত হয়ে থাকে এবং জংলা গাছ পালা খাওয়ার মতো স্বাদ থাকে। এটি গ্রিন টি অপেক্ষায় ১০ গুণ বেশি ঘনত্ব তাই এর চেয়ে বেশি সাস্থ্য উপকারী। এই মাচা টিতে অত্যাধিক পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। নিয়মিত এ পানীয় খেলে আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এপিগ্যারোক্যাটেচিন গালাটে উপাদান থাকায় আমাদের হৃদ ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে। তাছাড়া হজম শক্তি বৃদ্ধি, শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে তোলা, মস্তিষ্কের বিকাশ বাড়ানো, কিডনির সাস্থ্যকে সুস্থ্য রাখা, লিভারকে সুস্থ্য রাখা, ত্বকের যৌবনতা ধরে রাখা এবং অতিরিক্ত মেদ কমাতে আমাদের সাহায্য করে। এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মায়োয়ান ইসাই  ১২০০ শত বছর আগে চিনে প্রথম মাচা টি আবিষ্কার করেন পরে তিনি এটিকে জাপানে নিয়ে আসেন। মাচা টি তৈরী করতে আপনি মাচা পাউডারের সাথে চিনি গরম পানির সাথে মিশ্রণ করে খেতে পারেন, ইচ্ছে করে এর সাথে দুধও মিশাতে পারেন। 

কম্বুচা চা
আপনি আপনার সকাল কম্বুচা চায়ের সাথে শুরু করতে পারেন। এটি খেতে খেতে অনেকটা একটু টক টক এবং মিষ্টি জাতীয় পানীয়। কম্বুচা চায়ের মধ্যে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোবায়োটিক উপাদান রয়েছে। আমরা জানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু গুলিকে  ধ্বংস করে ফেলে এবং প্রোবায়োটিক শরীরের উপকারী জীবাণু গুলিকে স্বাস্থ্যকর রাখে। প্রায় দুই হাজার বছর আগের  থেকে চিনে এই টক মিষ্টি পানীয় পান করা হলেও বর্তমানে এর গুনাগুন দেখে সমগ্র বিশ্বে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পানীয় তৈরী  করতে চিনি এবং ইস্ট ব্ল্যাক টি বা গ্রিন টিয়ের সাথে মিক্সড করে ১ থেকে ২ মাস  পর্যন্ত ফারমেন্ট করে রেখে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সময় যত বেশি হবে ততো টক স্বাদ যুক্ত হবে। 
            
আধা চা বা গিনগার টি
শরীর এবং মনকে সতেজ রাখতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হলো গিনগার টি অথবা আধা চা।   পানীয়দের মধ্যে এতে সবচেয়ে বেশি এন্টিঅক্সিজেন বেশি থাকে তাই এটিও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করতেও এটি কাজ করে।  আধা কুচি কুচি করে পানিতে মিশিয়ে ৫ মিনিট গরম করতে হবে পরে মধু মিশিয়ে  খেতে হবে। এই চা য়ের ধরে রাখতে চিনি না দেওয়াই ভালো তবে দিলেও সামান্য পরিমান দিতে পারেন। 

সোনালি দুধ বা হলদে দুধ
দুধের আরো শক্তিশালী রূপ হচ্ছে সোনালি দুধ। একে বিভিন্ন দেশে বিভিন্নই নামে ডাকে যেমন:- টার্মেরিক মিল্ক, গোল্ডেন মিল্ক, হলদে দুধ, টার্মেরিক লাতে এবং ইয়েলো মিল্ক। এটি খেতে অনেকটা তেতো ধারালো কফির মতো। তবে মধু যোগ করলে মিষ্টি লাগবে। এটি সাধারণ দুধকে আরো এন্টিঅক্সিজেন যুক্ত করে। এর কারকিউমিন উপাদান শরীরে কোথাও ইনফেকশন বা ব্যথা থাকলে তা উপশম করে। তাছাড়া রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের বিকাশ বাড়ানো, ত্বকের ব্রণ দূর করতে, পেটের গ্যাস কমাতে, ভালো ঘুম করতে, হার্ট সুস্থ্য রাখতে, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং কিডনি সচল রাখতে সাহায্য করে। ভারতে এই দুধ খাওয়া শুরু  হলেও বর্তমানে বাংলাদেশেও এটি ব্যাপক প্রচলিত। এটি তৈরী করতে দুধ, হলুদ, গোলমরিচ, আধা, মধু এবং পানি সব গুলো উপাদান এক সাথে মিশিয়ে খেতে হয়। 

পেপারমিন্ট চা বা গোলমরিচ চা
ওষুধের বিকল্প হিসাবে ধরা হয় পেপারমিন্ট চা কে। কারণ আগের কার দিনে পেপারমিন্ট দিয়ে বহু ওষুধ তৈরী করা হতো। তাই এই চা কিন্তু হালকা গরম পানি দিয়ে খেতে হয়, অতিরিক্ত গরম খেলে পরে আবার সাইড ইফেক্ট থাকার সম্ভবনা থাকে। এই চা কে মেন্থল বা গোলমরিচ চা নামেও ডাকা হয়। এই চায়ের বিশেষত হলো ক্যান্সার আক্রান্ত রুগীদের জন্য। এটি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। তাছাড়া এন্টিঅক্সিজেন যুক্ত পেপারমিন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেই সাথে বমিভাব থাকলে দূর করে, হজম ক্ষমতা শক্তিশালী করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি দেয়, অ্যান্টিস্পাসোমডিক যুক্ত পেপারমিন্ট চা বুকের ব্যথা দূর করে, মাথাব্যাথা থাকলে তা দূর করে, মানসিক চাপ দূর করে এবং শরীরের নানা রকম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি শুকনো পেপারমিন্ট পাতা দিয়ে চিনি বা মধু মিশিয়ে ২-৩ মিনিট গরম করে পরিবেশন করতে হয়।