পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা ও রস বানানোর নিয়ম

পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা ও রস বানানোর নিয়ম

ভিটামিন ও প্রাকৃতিক সংযোজকের উপস্থিতি রপয়েছে পেঁপে পাতায় ভিটামিন এ, সি, ই, কে ও বি এবং পুষ্টিকর মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাংগানিজ,  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এনজাইম এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস ও আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শরীরের প্রশস্ত কাজকর্ম বৃদ্ধি এবং অঙ্গ শক্তিশালী  ও সুন্দর করে। তাছাড়া পেঁপে পাতার রস হজম শক্তিশালী, চুল পড়া, খুশকি, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি, বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, লিভারকে সুস্থ রাখা, পিরিয়ডের সময় যন্ত্রণা দূর, এবং বিভিন্ন রকমের জ্বরের হাত থেকে রক্ষা করে।  

পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা

ডায়াবেটিসের জন্য পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা :    
পেঁপে পাতার রস ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা খুব কম থাকে। এটা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভালো, কারণ তারা অধিক ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট অন্তর্ভুক্ত খাদ্য থেকে দূরে থাকতে পারবে। পেঁপে পাতার রস খালি পেটে খেলে, ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ বা ওজন কমাতে সহায়তা করবে এটি। উচ্চ পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে হটাৎ ডায়াবেটিস বাড়ার লক্ষণ হবে না। কারণ ফাইবার ওজন কমিয়ে রক্তে কোলেস্টেরলের স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। পেঁপে পাতার রসে ভিটামিন ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর এটি তাদের ক্ষমতা পূর্ণ উদ্ধার করে। কিডনি ড্যামেজ রক্ষায় পেঁপে পাতার রসের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান বেশ কার্যকর। এটি  ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে।       

পিরিয়ডের সময় যন্ত্রণা পেঁপে পাতার রসের উপকারিতা :
পিরিয়ডের সময় যন্ত্রণা ও দুর্বলতা অনেক মহিলা জন্য সাধারণ সমস্যা। পেঁপে পাতার রসের মাধ্যমে যন্ত্রণা কমানো যায় কারণ এটি আরাম প্রদান করতে পারে এবং শরীরের শক্তি বাড়াতে পারে। মহিলাদের পিরিয়ডের সময় স্তন ব্যথা অনুভব হতে পারে। পেঁপে পাতার রসের মাধ্যমে এই সমস্যা কমাতে পারে। পিরিয়ডের সময় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে তা দূর করতে পেঁপে পাতার রস খেতে পারেন এতে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেল। শরীর দুর্বলতার কারণে হরমোনের ঘাটতি এবং মাসিক চক্র অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে তাই পেঁপে পাতার রস খেলে এই সমস্যা থেকেও বাচা যায়। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি পিরিয়ডের সময় যন্ত্রণা এবং হরমোনাল অস্বাভাবিকতা দূর করতে পারে।   

লিভারের জন্য পেঁপে পাতার রস : 
পেঁপে পাতার রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন সি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে উন্নত করে এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে। পেঁপে পাতার রসে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইমগুলি লিভার শুদ্ধিকরণে কার্যকারী হয়ে থাকে। এটি লিভারের জীবানু, টক্সিন এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানগুলি অপসারণ করে দেয় এবং লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। পেঁপে পাতার রসে থাকা প্রাকৃতিক ভিটামিন, এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোটিনগুলি লিভারের ক্ষমতা বৃদ্ধির   জন্য উপযোগী। এগুলি লিভারকে শক্তি প্রধান করে। সাধারণত, লিভার ক্ষতিকর উপাদানগুলির কারণে লিভারের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরে, কিন্তু পেঁপে পাতার রসে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলি লিভারকে শক্তিশালী রাখে। জন্ডিস এবং লিভার সিরোসিস এবং জন্ডিস হবার আশংকা কমে যায়।  

হজম শক্তি বাড়ায় পেঁপে পাতার রস : 
পেঁপে পাতায় রয়েছে প্রোটিস, অ্যামিলেস, এনজাইম, প্রোটিন, প্যাপেইন, কার্বোহাইড্রেড, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, মিনারেল এবং ফাইবার এগুলি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে পাকস্থলি এবং কোলনের প্রদাহ দূর করে। তারসাথে নিরাময় করে আলসার। পেঁপে পাতার রসে থাকা এন্জাইমগুলি হজম বাড়াতে ভূমিকা পালন করে। এটি হজম শক্তির প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং খাদ্য উপাদানগুলি ভালোভাবে রূপান্তরিত হয়। এটি আপনার হজম শক্তি বাড়ায় এবং পাচনতত্ত্বক সমস্যাগুলি সমাধান করতে সাহায্য করে। যদি আপনার পেটে গ্যাস হয় বা বায়ু বের হয় তাহলেও তা খুব দ্রুত দূর করবে এটি। পেট ঠান্ডা ও আরামদায়ক অনুভব করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেতে এক গ্লাস খাবেন। তাতে আপনি শক্তিও পাবেন। এটি আপনার স্বাস্থ্যকে বৃদ্ধি ও সুস্থতা উপহার দেয়।

ক্যান্সারের প্রতিরোধে পেঁপে পাতার রস : 
পেঁপে পাতার রসে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল ধারণ করে, যা বিভিন্ন ক্যান্সারের প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এটি ক্যান্সারের শুরুকর্তৃক ক্যান্সারের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিন ক্যান্সার কোষ গুলিকে বৃদ্ধি করতে দেয় না। যেহুতু এর মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান তাই এটি শরীরের জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই আমরা বলতে পারি পেঁপে পাতার রসে পলিফেনল এর উপস্থিত থাকার কারণে মৃত বা ক্যান্সার  কোষ গুলি বাড়তে পারে না। ব্রেস্ট ক্যান্সারকে প্রতিরোধে এতে রয়েছে প্যানক্রিয়াটিক, লং, এসিটোজেনিন এবং এনজাইম লিভার।এই অ্যান্টি-ক্যানসার উপাদান গুলি অগ্ন্যাশয় ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, এবং ফুসফুসের ক্যানসার দূর করে। তাছাড়া কেমোথেরাপির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পেঁপে পাতার রস বেশ উপকারী।    

পেঁপে পাতার রস ত্বক এবং চুলের সমস্যাদির সমাধান :
পেঁপে পাতার রসে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন রয়েছে, যা ত্বককে  স্বাস্থ্যকর ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন সি, গ্লটেমেট অ্যাসিড, গ্রাইসিন, ভেলিন, কারপাইন যৌগ, ট্রাইপটোফেন এবং হিস্টিডিন ব্রণ দূর করে এবং ত্বকের বয়স হ্রাস করে। এটি মুখের ত্বক সমস্যা যেমন ব্রণ, পিম্পলস, দাগ, ফ্রিকেলস এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যাগুলি দূর কোনো পারে। এর মধ্যে থাকা  বিটাক্যারোটিন  চুলের স্বাস্থ্য উন্নতি ও বৃদ্ধি প্রদান করতে পারে। চুল পড়া, ভঙ্গুর চুল, এবং খুশকি দূর করতে সহায়তা করে। এটি ত্বককে করে মলিন ও মসৃণ।   

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পেঁপে পাতার রস :
পেঁপে পাতার রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন রয়েছে, যা শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে স্থায়ীভাবে উন্নত করে। এটি ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রতিরোধে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রুগীদের দ্রুত হারে প্লাটিলেট কমতে থাকে। পেঁপে পাতার রস রক্তে প্লাটিলেট মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত জ্বর, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, বমি, ত্বকের প্রদাহে, মাথাব্যাথা, মাংসপেশী ব্যাথা এবং হাড় ব্যাথা করে। পেঁপে পাতার রসের উপস্থিত এন্টিইনফ্ল্যামেটরির গুণাবলী এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। তাছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের শরীরে তরলের স্তর ভেঙে পরে পেঁপে পাতার রস দরকার পরে শরীরের তরল স্তর পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। তাছাড়া শরীরের স্নায়ুতাত্ত্বিক সমস্যা কমিয়ে আনা যায় এর মাধ্যমে।


ইত্যাদি ছাড়াও মহান আল্লাহ তালার সৃষ্টি পেঁপে পাতার রসের বহু ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। নিচে কিভাবে তৈরী করবেন এই রস সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

পেঁপে পাতার রস বানানোর নিয়ম

১. প্রথমে ২ থেকে ৩ টি কচি পরিষ্কার পাতা নিন। 
২. তারপর ব্লেন্ডারে দিয়ে অথবা পিষে রস বের করুন ইচ্ছা করলে লবণ দিতে পারেন। 
৩. শেষে পাঁচ থেকে ছয় চা চামচ রস এক গরম গ্লাস পানিতে মিশান। 
এ ভাবে সকাল, দুপুর, ও সন্ধ্যায় খেতে হবে টানা ৭ - ১৪ দিন।  


আশা করি পেঁপে পাতার রস প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ভালো হয়ে যাবে। তবে আপনি যদি নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যাবেন। তাছাড়া যদি খাবার পর চুলকানি বা এলার্জি হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে দেখান।