থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা Thankuni Patar Upokarita

থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা Thankuni Patar Upokarita

প্রাকৃতিক ওষুধ হলো থানকুনি পাতা। যার মাধ্যমে ঘা, কাশি, ত্বকে সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, পেটের সমস্যা, শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। এছাড়া আরো বহু সমস্যার সমাধান করে এ রস। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :


কাশি কমাতে থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
কাশি দূর করতে প্রাকৃতিক ওষুধ হলো থানকুনি পাতার রস। এ রসের ব্যবহার কাশি কমাতে সাহায্য করে। কাশি হলো একটি সাধারণ শ্বাসকষ্ট যা হালকা বা মাঝারি একটি সংক্রমণ জাতীয় মারাত্মক অসুখ । থানকুনি পাতার রসের উপাদানগুলি শ্বাসনালীতে সংক্রমণ কমিয়ে দেয় যার ফলে কাশির উপসর্গ সহজে কমে যায়। কাশির কারণে গলা ব্যাথা ও জীবাণু নিরাময় করে এই ওষুধি রস। তাই  ঠান্ডা কাশি, হাঁচি, সম্পৃক্ত অসুখগুলি হলে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। ১ থেকে ২ সপ্তাহ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সকাল, বিকাল ও ঘুমানোর আগে দু’চামচ করে খেলে কাশি পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে। 

ত্বকের জন্য থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
থানকুনি পাতার রস ত্বকের জন্য একটি মাধ্যম যা ত্বকে অসম্ভব উপকারিতা দিতে পারে। থানকুনি পাতার রসে অনেকগুলি উপাদান থাকে, যেগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। থানকুনি পাতার রসের ব্যবহার করা হলে ত্বক উদ্দীপন পায় এবং ত্বকের টিস্যু গুলি নতুনত্ব শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের শুষ্কতা, বিষাক্ততা এবং দাগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক গ্লোইং বাড়ায়। এটি ত্বকের মুখ্য পরিস্কারক হিসাবে কাজ করে। থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়। এটি মৃত সেলগুলি সরাসরি দূর করে এবং ত্বকের মধ্যে রক্ত প্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে ত্বকে পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর অনুভূতি দেয়। এই পাতার রসে উপস্থিত প্রোটিন ও ভিটামিন ত্বকের উদ্দীপন বৃদ্ধি করে। এটি নতুন টিস্যু উৎপাদনে সহায়তা করে এবং মুখের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা, ফর্সা ও তরুণত্ব উপহার দেয়।থানকুনি পাতার রসে উপস্থিত অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এটি ত্বকের মুখ্য রোগপ্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে এবং ত্বক স্বাস্থ্যকে সংরক্ষিত রাখে। এতে রয়েছে ফাইটোক্যামিকেল, বিটা ক্যারোটিন, অ্যামাইনো অ্যাসিড এটি ত্বকের রোগ যেমন এগজিমা, হাঁপানি, আলসার, অ্যাংজাইটি এবং চর্মরোগ দূর করতে সাহায্য করে এই মহামূল্যবান পাতাটি। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা 
থানকুনি পাতার রস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। ডায়াবেটিস হলে শরীরের রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) স্তর অনিয়ন্ত্রণ হয়ে পরে।থানকুনি পাতার রস নিয়মিত ব্যবহারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এ রস শরীরে ইনসুলিন এবং মেটাবলিজম সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজের স্তরকে নিরাপদ এবং স্থিতিশীল রাখতে পারে এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যা সংক্রান্ত ঝুঁকি কমায়। আপনি যদি দিনে দুই থেকে তিন বার এ রস খান তাহলে এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান নিয়ন্ত্রণে এনে দিবে। 

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
থানকুনি পাতার রস স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যারা অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার রোগে ভুগছেন তারা এ রস খাওয়ার ফলে ভালো ফল পাবেন।এই রসে আরো রয়েছে "ব্যাকোসাইড এ" ও "ব্যাকোসাইড বি" যা আপনার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করবে এবং মস্তিষ্কে নতুন কোষ উৎপাদনে সাহায্য করবে। যারা অ্যালঝাইমার্স বা ডিমেনশিয়ার রোগে ভুগছেন তারা এ রস খাওয়ার ফলে ভালো ফল পাবেন। এই রসে আরো রয়েছে "ব্যাকোসাইড এ" ও "ব্যাকোসাইড বি" যা আপনার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করবে এবং মস্তিষ্কে নতুন কোষ উৎপাদনে সাহায্য করবে। এটি ত্বকে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পেনটাসাইক্লিক ট্রিটারপেন্স সিস্টেমকে প্রভাবিত করে মানসিক চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি করতে সহায়তা করে। এ পাতার রসে উপস্থিত মিথাইলকোবালামিন ও সায়ানোকোবালামিন বাড়ায়, যা মানসিক শক্তি ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি করে। থানকুনি পাতার রসে থাকা উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি মনোসামাজিক অবস্থা ও ঘুমের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি মনোসামাজিক চিন্তা ও মনোসামাজিক রোগের প্রতিরোধ বাড়ানোর মাধ্যমে মানসিক শক্তি ও স্মৃতিশক্তির উন্নতি করে। এটি স্মৃতিশক্তিকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।

পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
থানকুনি পাতার রস পেটের সমস্যা সমাধানে উপকার করে। পেটের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে আমাশয় , আলসার, হজমের সমস্যা, পেট ব্যথা, পাচনতন্তের সমস্যা, গ্যাস ও আরও অনেক কিছু। থানকুনি পাতার রসে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি পেটের যেকোনো সমস্যার উপশম করতে সহায়তা করে। এটি  পাচনতন্তের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, থানকুনি পাতার রসের ব্যবহার মাধ্যমে পেটের গ্যাস দূর হয় এবং গ্যাসের কারণে ব্যথা হলে তাও ঠিক হয়ে যায়। এছাড়াও, থানকুনি পাতার রসে থাকা উপাদানগুলি পেটে পাথর সমস্যার হলেও তাও উপশম করতে সহায়তা করে। এটি পাথর গঠন কমায় এবং পাথর বিস্তারশীলতা নিরাময় করে।

শরীরের বর্জ নিষ্কাশন করতে  থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
থানকুনি পাতার রস শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে পারে। থানকুনি পাতার রসে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষমতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকরীতা প্রদান করে এবং টক্সিনগুলি শরীর থেকে বের করে দেয়। এ পাতার রসে থাকা উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে টক্সিনগুলির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ শক্তিশালী করে, যার ফলে শরীরে অপ্রয়োজনীয় টক্সিন প্রক্রিয়া বা মেটাবলিক উপাদানগুলি বের হয়ে যায়। শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হতে থাকলে কিডনি নষ্ট, টিউমার, এবং নানা ধরণের অসুখ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত এ ওষুধি পাতার রস খেলে মূত্র আকারে শরীরের বর্জ নিষ্কাশন হয়। মধুর সাথে অথবা থানকুনি পাতা চিবিয়েও আপনি খেতে পারেন। 

ঘুমের সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
আমরা আগের থেকেই জানি থানকুনি পাতার রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যা  নার্ভাস সিস্টেমকে স্বাভাবিক রাখে তাতে ভালো ঘুম হয়, মন উৎফল্ল থাকে। প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খালি পেটে একগ্লাস দুধে ৪-৬ চা চামচ মিশালে ত্বকে বয়সের ভাঁজ পরে না। আপনি চাইলে  থানকুনি পাতার রস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। ইচ্ছা করলে তাতে লবণ অথবা মধু মিশাতে পারেন। থানকুনি পাতার রস অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে খুবই উপকারী। নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে কমতে থাকবে অনিদ্রার সমস্যা এবং আসবে সম্পূর্ণ শান্তিকর নিদ্রা । থানকুনি পাতার রসে উপস্থিত উপাদানগুলি মন শান্ত করতে সহায়তা করে। যা গভীর নিদ্রার জন্য কাজ করে। 

ক্ষত সারাতে  থানকুনি পাতার রসের উপকারিতা
থানকুনি পাতার রস ক্ষত সারাতে পারে। এর মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বাড়াতে করতে সহায়তা করা যায়। এ পাতার রসে থাকা উপাদানগুলি প্রাকৃতিক রক্ষা কার্যকরী হিসাবে কাজ করে। তাই একে এন্টিসেপ্টিকও বলতে পারেন। থানকুনি পাতা বেটে শরীরে কাটা স্থানে লাগালে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে তারসাথে সংক্রমণের কোনোরকম আশংখা থাকবে না। এটি কাটা স্থানে নিয়মিত লাগালে ঘা দ্রুত শুকিয়ে যায় কারণ এটি কোষ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। 


থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম :
এই পাতা ধুয়ে আপনি যেকোনো ভাবেই খেতে পারেন। তবে নিম্নে উল্লিখিত উপায়ে খাওয়া ভালো :
১. এক গ্লাস দুধের সাথে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন। 
২. গরম পানির সাথে ৫ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে তার সাথে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। 
৩. তাছাড়া আপনি চাইলে থানকুনি পাতা চিবিয়েও রস খেতে পারেন।