অতিরিক্ত ঘাম ও ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার সহজ উপায়

অতিরিক্ত ঘাম ও ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার সহজ উপায়

স্বাভাবিকভাবে প্রতেকটি মানুষেই ঘামে। এর মাধ্যমে মানুষের অনেক উপকার হয়ে থাকে। শরীরের ভিতরে থাকা দূষিত উপাদান ঘাম আকারে মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরমে ঘামলে আমরা ঠান্ডা অনুভব করি। কিন্তু যদি আমাদের নির্ধারিত অপেক্ষায় অতিরিক্ত ঘাম আসে তাহলে তা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। শরীর অতিরিক্ত ঘাম আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। অতিরিক্ত ঘাম এই সমস্যাটি আমাদের হাত, পা, মুখ ও বগলে সবচেয়ে বেশি হয়। ডাক্তারি ভাষায় অতিরিক্ত ঘামাকে হাইপারহিডরোসিস বা মাত্রাতিরিক্ত ঘাম বলা হয়। আর এই অঙ্গ গুলি বেশি ঘামলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে বাজে গন্ধ বের তাই এর থেকে বিস্তার পাওয়াই আজকের আলোচনার বিষয়।   
 

কেন অতিরিক্ত ঘাম হয় 

অনেকেই হয়তো মনে করে থাকেন আমি মোটা অথবা এখন প্রচুর গরম পড়েছে তাই আমি কোনোরূপ ব্যায়াম ছাড়াই গামাচি। আসলে এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। শরীর ভিতরে ভয়ানক রোগ বাসা বাড়লেও শরীরে অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি হয়। আবার কোনো ঔষদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে। কিন্তু কিছু সময় ডাক্তাররা দেখেন জম্মগত ভাবে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরছে যা বংশগত কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন, হরমোনের দুর্বলতা, থাইরয়েডের সমস্যা অথবা ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শরীরে দেখা দিলেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। মেনোপজের ও গর্ভাবস্থা সময় কিন্তু শরীর থেকে মাত্রা অতিরিক্ত ঘাম হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত চিন্তা, উদ্বেগ, ভয়, এবং মানসিক চাপের কারণেও শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম আসতে পারে।     
 

অতিরিক্ত ঘামের জীবনে যেসব সমস্যার সম্মুর্খীন হতে হয় 

যারা অতিরিক্ত ঘামের সমস্যায় আছে তারাই জানে সমাজে তাদের কত কথা শুনতে হয়েছে। তাদের সাথে কেউ হাত মিলাতে চাই না। অতিরিক্ত ঘামের কারণে ঐ সকল রুগীর কাছ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে যার ফলে কেউ তাদের কাছে আসতে চাই না। অতিরিক্ত ঘামের কারণে তাদের জামা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হয় তা না হলে তাদের জামায় তিলা পরে যাওয়ার সম্ববনা থাকে আবার পরিষ্কার না করলে ঐ জামা প্রচুর পরিমানে নোংরা দেখায়। বগলে অতিরিক্ত ঘামার কারণে প্রচুর অস্বস্তিকর ও মনের ভিতরে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ঘামের মানুষেরা কোনোরূপ সরকারি ডিফেন্সের চাকরি করতে পারে না। যেসকল বাচ্চাদের হাত ঘামে তারা ক্রিকেটে খেলতে পারে না ঠিকমতো। এগুলো ছাড়াও আরো বহু সমস্যার সম্মুর্খীন হতে হয় অতিরিক্ত ঘামের মানুষদের। 
 

অতিরিক্ত ঘাম দূর করার উপায় 

১।  ভিটামিন বি জাতীয় খাবার অধিক পরিমানে খেতে হবে। যেমন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, এবং বি-১২ ইত্যাদির অভাব হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ঘাম নির্গত হয় শরীর থেকে। তাই ভিটামিন বি জাতীয় খাবার অধিক পরিমানে খেতে হবে। ভিটামিন বি জাতীয় খাবারে ছোট একটি তালিকা হলো : মাছ, দুধ, ডিম, সবুজ মটর, রুটি, বাদাম, গরুর মাংস, চিকেন, চিনাবাদাম, স্যালমন মাছ, গমের পাউরুটি, লবঙ্গ, স্ট্রবেরি, আপেল, এবং আদা।
২। শীত কালে অতিরিক্ত গরম পানি বা গরম কালে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা যাবে না। 
৩। অতিরিক্ত আয়োডিনযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ আয়োডিনযুক্ত খাবার শরীরের বজ্র বৃদ্ধি করে যার ফলে অতিরিক্ত ঘামের সৃষ্টি হয়। 
৪। বগলের ঘাম দূর করার জন্য বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন প্রয়োগ করতে পারেন। বোটুলিন ঘাম উৎপন্নকারীর কার্য ক্ষমতা হ্রাস করে দেয় তবে এই পদ্ধতি সাত-আট মাস পর্যন্ত কার্যকরী হয়ে থাকে।  
৫। ঘাম দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা হলো সার্জারি তবে সার্জারি করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে মানে বগলের সার্জারি করলে দেখা যাবে তখন বগল দিয়ে ঘাম না বেরিয়ে পিঠ দিয়ে অতিরিক্ত ঘাম ঝরছে আবার ফুসফুসের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 
৬। বিভিন্ন তামাক জাতীয় দ্রব খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 
৭। অতিরিক্ত পানি পান করুন কারণ অতিরিক্ত পানি করার ফলে শরীর থেকে বজ্র, প্রস্রাবের আকারে বেশি বের হবে। 
৮। চা বা কফির ভিতরে প্রাকৃতিক টনিক এসিড থাকে যা ঘাম দূর করার ওষুধ হিসাবে কাজ করে তাই এক লিটার পানির মধ্যে চারটি চায়ের ব্যাগ ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। তারপর সেই পানি দিয়ে যেখানে যেখানে অধিক ঘাম ঝরে সেখানে ২০ মিনিট ধরে ভিজিয়ে রাখুন। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই শরীর থেকে ঘাম ঝরা কমে যাবে। 
৯। অনেকেই মনে করেন বগলে বা শরীলে পাউডার ব্যবহার করলে কম ঘাম বের হবে কিন্তু পাউডার ব্যবহার করলে প্রাথমিক ভাবে ঘাম শরীর থেকে বাধাগ্রস্ত্র হয় ফলে ঘাম উৎপন্নকারী কোষ গুলি আরো শক্তি শালী হয়ে পরে তাই কোনো রকমের পাউডার শরীলে ব্যবহার করবেন না। 
১০। অ্যালুমিনিয়াম কোরাইড হেক্সাড্রেট এলকোহোলিক সলুশনজাতীয় (ড্রাইসল) ওষুধ ঘাম দূর করতে সাহায্য করে তবে এটি প্রয়োগ করলে শরীর চুলকাতে পারে। ঘামের অঞ্চলটি শুকনো করে সকালে ও রাতে প্রয়োগ করুন। 
১১। দুর্বল শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ঘাম আসতে পারে তাই অধিক পরিমানে শাক সবজি খান।  

(আর মনে রাখবেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ছাড়া কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন শরীরে প্রয়োগ করা ঠিক নয়। কারণ সকলের দেহের সম্যসা এক রকম নয় চিকিৎসকেরা রুগীর রক্ত পরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নিবেন কোন ওষুধ বা ইনজেকশন শরীরে প্রয়োগ করতে হবে।)

শরীরে থেকে ঘামের গন্ধ দূর করার উপায় 

১। গোসলের আগে চা ব্যাগ অথবা গ্রিন টি এর ব্যাগ ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি দিয়ে গোসল করুন। 
২। যেখানে অতিরিক্ত ঘাম বের হয় সেখানে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে পারেন তাতেও কম ঘাম বের হবে। 
৩। ক্ষারযুক্ত সাবান শরীরে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। 
৪। প্রতিদিন  এক টেবিল চামচ বেকিং পাউডার ও আদা টেবিল চামচ বেকিং সোডা একসাথে ভালো ভাবে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া অঞ্চলটিতে লাগাতে পারেন এতে ঘামের ঘন্ধ বের হবে না। 
৫। লেবুর রস অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া অঞ্চলটিতে প্রতিদিন সকালে ও রাতে লাগালে ঘামের ঘন্ধ বের হবে না।  
৬। ভাজাপোড়া খাবার ও ফাস্ট ফ্রুড খাবার থেকে বিরত থাকুন। 
৭। অতিরিক্ত পানি পান করুন। 
৮। ঘাম বের হওয়ার পর শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগলে খাবার সেলাইন অথবা গ্লুকোজ খান। 
৯। ডিলা ডালা নরম হালকা সুতির কাপড় পরিধান করুন। 
১০। সিগেরেট ও তামাক জাতীয় দ্রব গ্রহণ করলে প্রসাবের সাথে সাথে ঘামেও প্রচুর পরিমানে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই এগুলি পরিত্যাগ করুন। 

 

অতিরিক্ত ঘাম সমস্যায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন ?

যদি আপনার অতিরিক্ত ঘামের জন্য আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটে বা ৬ মাসের বেশি এই সমস্যায় ভুগছেন তবেই ডাক্তারের কাছে যাবেন। আবার অনেক সময় দেখা যাই কোনো ওষুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ অতিরিক্ত ঘাম সমস্যা দেখা দিচ্ছে তখন সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।