ক্যানিস্টেল ফলের উপকারিতা - Benefit of Canistel Fruit in Bengali

ক্যানিস্টেল ফলের উপকারিতা - Benefit of Canistel Fruit in Bengali

ক্যানিস্টেল ফল সুস্বাদু ফলের মধ্যে একটি। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এটি চাষ হচ্ছে। মধ্য আমেরিকায় প্রথম ফলটি পাওয়া যায়। বর্তমানে তাইওয়ান,  ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ভারতে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে এবং বাংলাদেশে স্বল্প পর্যায়ে পাওয়া যাচ্ছে। ক্যানিস্টেল ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Pouteria campechiana। ক্যানিস্টেলে প্রচুর পরিমানে স্বাস্থ্য উপকারিতার উপাদান বিদ্যমান। কিডনি রোগ, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো, ত্বক সুস্থ রাখা, লিভার পরিষ্কার করা, ঘুমের উন্নতি, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, লিভারের স্বাস্থ্য উন্নতি, ওজন কমাতে, হাড়ের ঘনত্ব উন্নত করতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে ক্যানিস্টেল ফল ব্যাপক কার্যকর। নিচে ক্যানিস্টেল ফলের কিছু উপকারিতার কথা বলা হলো :

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে ক্যানিস্টেল ফল:
নায়াসিন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সক্ষম এক উপাদান যা ক্যানিস্টেলে রয়েছে। তাছাড়া ক্যানিস্টেলে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বৃদ্ধি সাহায্য করে। যে সকল রুগীরা শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন নিচ্ছেন তারা নিয়মিত ক্যানিস্টেল ফল খান। 

ভিটামিনের রস ক্যানিস্টেল:
ক্যানিস্টেলে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগত উপাদান রয়েছে। ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য উপকারী খনিজ উপাদান থাকায় এটি দ্রুত জন প্রিয় হয়ে উঠছে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, নিয়াসিন, ফোলেট, পাইরিডক্সিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, নিয়াসিনামাইডে, উপকারী ফাইবার, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং আরো অনেক পুষ্টিকর উপাদান আছে। তাছাড়া এত পুষ্টি উপাদান থাকা সত্বেও এতে বিন্দু পরিমান কোলেস্টেরল নেই। 

অস্টিওআর্থারাইটিস সমস্যা দূর করতে ক্যানিস্টেল ফল:
নায়াসিন অস্টিওআর্থারাইটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধ হ্রাস করে যা ক্যানিস্টেল ফলে ভরপুর রয়েছে। নায়াসিন এবং নায়াসিনমাইড পুষ্টি উপাদান জয়েন্টের ব্যথা প্রশম করে এবং শক্তিশালী করে। 

হার্টের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক রাখতে ক্যানিস্টেল:
প্রচুর পরিমাণে ক্যানিস্টেল ফল ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফাইবার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা  কমায় বলে হার্ট স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক ঝুঁকি হ্রাস পাই। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানিস্টেল ফল শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যালের মাত্রা কমায় এবং অক্সিডেটিভ ক্ষতি হ্রাস করে। এলডিএল  কোলেস্টেরল শরীলে বৃদ্ধি পেলে মানুষ মোটা এবং হার্টের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাই পরে মানুষের দম আটকে যাওয়ার সম্ববনা থাকে। নিয়মিত ক্যানিস্টেল ফল খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল শরীলে কমতে থাকে। 

স্নায়ুতন্ত্র রোগের ঝুঁকি কমাবে ক্যানিস্টেল:
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ক্যানিস্টেল ফলে থাকা আয়রন খুবই উপকারী। মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও রক্ত ​​​​প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আয়রন কাজ করে। ডিমেনশিয়ার  এবং আলঝেইমার জাতীয় স্নায়ুতন্ত্রের রোগ গুলো আয়রন প্রতিরোধ করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ক্যানিস্টেল:
আমরা এটি মধ্যেই জেনেছি যে ক্যানিস্টেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার হজম শক্তি উন্নতির সাথে সাথে পেটের গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া  প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক করতে এবং খাবারের মসৃণ পথ উন্নত করতে ফাইবার কাজ করে। তাছাড়া ফাইবার শরীর থেকে মল এবং ঘামের মাধ্যমে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দেয়। 

চোখের দৃস্টি বৃদ্ধি করতে ক্যানিস্টেল:
ক্যানিস্টেল চোখের দৃষ্টি শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে কারণ এতে প্রচুর ক্যারোটিনয়েড এবং ভিটামিন এ উপাদান থাকে। ভিটামিন এ আমাদের চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে। ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য হওয়ায় শরীলের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে এবং চোখের অক্সিডেটিভ কোষ ক্ষতি হ্রাস করে। চোখের বিভিন্ন সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, ছানি এবং অন্যানো সমস্যা প্রতিরোধ করে ক্যানিস্টেল ফলের ক্যারোটিনয়েড। 

অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণে ক্যানিস্টেল ফল:
আয়রন উপাদান শরীরের জন্য খুব উপকারী। এটি রক্তাল্পতার ঝুঁকি হ্রাস করে। এই আয়রন উপাদান ক্যানিস্টেল ফলে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ। শরীরে প্রচুর পরিমানে আয়রনের অভাব হলে আমাদের অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার রোগ দেখা দেয়। রক্তের কোষে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে শরীরে আয়রন প্রয়োজন। তাছাড়া কোষের সঠিক বৃদ্ধি, সম্পূর্ণ দেহে অক্সিজেন সরবাহ এবং পুষ্টি পেতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং শরীরের দুর্বলতা আয়রনের ঘাটতিজনিত সমস্যা দূর করতে ক্যানিস্টেল ফল খুবই উপকারী। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে ক্যানিস্টেল:
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ক্যানিস্টেলে আছে বলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি তে ব্যাপক কার্যকর। শ্বেত রক্ত ​​কণিকা শরীলে উৎপাদন করতে ভিটামিন সি সাহায্য করে। শ্বেত রক্ত ​​কণিকা আমাদের শরীলের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ধ্বংস করে। নিয়মিত ক্যানিস্টেল ফল খেলে ফ্লু, সর্দি এবং কাশি জনিত রোগ বালাই থেকে বাঁচা যায়।