13 Jul, 2025
বর্তমানে অনেক ছেলেই মুখে ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে টিনএজ ও ২০–৩০ বছর বয়সের ছেলেদের মুখে ব্রণ বেশি দেখা যায়। এটি শুধু চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে না, আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। ছেলেদের ত্বক নারীদের তুলনায় তুলনামূলক মোটা ও তৈলাক্ত হওয়ায় ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় জানা এবং তা নিয়মিত মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রণ একাধিক ধরনের হতে পারে, যেমন:
হোয়াইটহেড (Whitehead): ত্বকের ভেতরে বন্ধ থাকে।
ব্ল্যাকহেড (Blackhead): ত্বকের ওপরে খোলা অবস্থায় দেখা যায়।
পিম্পল (Pimple): লালচে ফুলে ওঠা ব্রণ, অনেক সময় ব্যথাও করে।
সিস্টিক অ্যাকনি (Cystic Acne): চামড়ার নিচে গভীরভাবে হয়, এটি সবচেয়ে জটিল ধরনের ব্রণ।
এগুলো সাধারণত নিচের কারণগুলো থেকে হয়ে থাকে:
ছেলেদের টিনএজে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এই সময় শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ত্বকে তেল উৎপাদন বাড়ায়। অতিরিক্ত তেল মুখের pores বন্ধ করে দেয়, ফলে ব্রণ সৃষ্টি হয়। এই কারণেই অনেক কিশোরের মুখে হঠাৎ করে প্রচুর ব্রণ দেখা যায়।
রাস্তায় চলাফেরার সময় মুখে ধুলা, ধোঁয়া ও দূষণ জমে থাকে। পরিষ্কার না করলে এগুলো মুখের pores বন্ধ করে ব্রণের সৃষ্টি করে। ছেলেরা প্রায়ই বাইরে থাকে এবং মুখ ভালোভাবে ধোয় না, তাই ব্রণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তেল-চর্বি ও ফাস্ট ফুড যেমন বার্গার, চিপস, সফট ড্রিংক বেশি খেলে শরীরের ভিতর থেকে ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এতে ব্রণ সহজেই দেখা দিতে পারে। চিনি ও ডেইরি জাতীয় খাবারও ব্রণ বাড়াতে সাহায্য করে।
অনেক ছেলেই ত্বকের যত্ন নেন না। সঠিকভাবে ফেসওয়াশ ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত মুখ ধোয়া বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহার করাও ব্রণের কারণ হতে পারে। নিয়মিত স্কিন কেয়ার না করলে মুখে তেল ও ময়লা জমে যায়, যা ব্রণ বাড়ায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণ দূর করা অনেক সময় বেশি কার্যকর ও নিরাপদ। ঘরে বসেই কিছু সহজ উপাদান ব্যবহার করে ছেলেরা মুখের ব্রণ কমাতে পারেন। নিচে উল্লেখ করা হয়েছে ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে কার্যকর কিছু ঘরোয়া টিপস:
লেবুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাসিড যা ত্বক পরিষ্কার করে এবং ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
একটি লেবুর রস বের করে তুলো দিয়ে ব্রণের ওপর লাগান।
১০–১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
সতর্কতা:
সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে, তাই আগে হাতে একটু পরীক্ষা করুন।
মধুতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে আর দারুচিনি ত্বকের প্রদাহ কমায়। এটি ব্রণের জন্য খুবই উপকারী।
ব্যবহার পদ্ধতি:
১ চামচ মধু ও ১/২ চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
মুখে লাগিয়ে ১৫–২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে এই মাস্কটি বিশেষভাবে কার্যকর।
অ্যালোভেরা ত্বকে শীতলতা দেয়, লালচে ভাব কমায় ও ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
অ্যালোভেরা গাছের পাতা কেটে ভেতরের জেল সংগ্রহ করুন।
মুখে আলতো করে লাগান এবং সারা রাত রেখে দিন।
সকালে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
রেগুলার ব্যবহার করলে ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে এটি দারুণ কাজ করে।
বেসন ত্বক পরিষ্কার করে, আর দই ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল রাখে।
ব্যবহার পদ্ধতি:
২ চামচ বেসন, ১ চামচ টক দই এবং কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন।
শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এটি মুখের অতিরিক্ত তেল দূর করে ও মুখ পরিষ্কার করে।
এই সব ঘরোয়া উপাদানগুলো সহজলভ্য এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফলাফল দেয়।
যারা ঘরোয়া উপায়ের পাশাপাশি প্রস্তুতকৃত পণ্যে আস্থা রাখেন, তাদের জন্য কিছু ভালো স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট আছে যা ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে কার্যকর:
ভালো মানের অয়েল-কন্ট্রোল ফেসওয়াশ ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং মুখ পরিষ্কার রাখে।
সেরা কিছু ব্র্যান্ড:
Neem Face Wash
OilClear
ব্যবহার:
দিনে অন্তত ২ বার, সকালে ও রাতে।
অ্যাকনি কমানোর জন্য বাজারে কিছু ভালো অ্যাকনি ট্রিটমেন্ট ক্রিম পাওয়া যায়। এতে সাধারণত salicylic acid বা benzoyl peroxide থাকে যা ব্রণের জীবাণু নষ্ট করে।
সেরা কিছু ব্র্যান্ড:
Acnex
PanOxyl
Pimple Cream
ব্যবহার:
রাতে ব্রণের উপর লাগিয়ে ঘুমানো যায়।
অনেকেই মনে করেন তেলতেলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানো ঠিক না। কিন্তু হালকা, অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ত্বককে হাইড্রেট রাখে ও ব্রণের ঝুঁকি কমায়। টোনার毛孔 ছোট করতে সাহায্য করে।
সেরা কিছু টোনার ও ময়েশ্চারাইজার:
The Body Shop Tea Tree Toner
Oil Control Moisturiser
Alcohol-Free Toner
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় জানার পাশাপাশি প্রতিদিনের নিয়ম মেনে স্কিনকেয়ার করা খুব জরুরি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে নিন।
বাইরে থেকে আসার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন যেন ধুলো ও ঘাম জমে না থাকে।
এতে মুখ পরিষ্কার থাকে ও ব্রণ কমে।
সপ্তাহে ২ বার স্ক্রাব করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং মুখের pores বন্ধ হওয়া রোধ হয়।
মাইল্ড স্ক্রাবার ব্যবহার করুন, বেশি ঘষবেন না।
অতিরিক্ত স্ক্রাব করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
রোদে বের হওয়ার আগে SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ত্বকে রোদে পোড়া ভাব, কালচে দাগ ও ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
ছেলেদের জন্য উপযুক্ত সানস্ক্রিন:
Herbals Safe Sun
Ultra Sheer Dry Touch SPF 50
উপসংহার:
প্রতিদিনের যত্ন ও সঠিক পণ্যের ব্যবহারই ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় এর মূল চাবিকাঠি। যারা নিয়মিতভাবে এই স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করেন, তাদের ত্বক পরিষ্কার ও ব্রণমুক্ত থাকে।
শুধু বাইরে থেকে স্কিনকেয়ার করলেই হবে না, ত্বককে ভেতর থেকে ভালো রাখার জন্য খাবার ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। তাই নিচে কিছু কার্যকর টিপস তুলে ধরা হলো যা ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ:
ফাস্ট ফুড, বেশি তেলেভাজা, চিপস, চকোলেট বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার খেলে শরীরের ভেতর থেকে ব্রণ বেড়ে যায়।
পরামর্শ:
– হালকা রান্না করা ঘরোয়া খাবার খান।
– সবজি ও ফলমূল বেশি খান।
শরীর থেকে টক্সিন বের করতে ও ত্বক হাইড্রেট রাখতে দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ফলাফল:
– ত্বক পরিষ্কার থাকে
– ব্রণের পরিমাণ কমে
– ত্বক উজ্জ্বল হয়
অপ্রতুল ঘুম ও মানসিক চাপ ব্রণের অন্যতম কারণ। দেরি করে ঘুমানো ও ঘুমের ব্যাঘাত হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
টিপস:
– দিনে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
– স্ট্রেস কমাতে প্রয়োজনে মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করুন।
সব ব্রণ ঘরোয়া উপায়ে বা সাধারণ স্কিনকেয়ারে ভালো হয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে।
– যদি অনেকদিন ধরে ব্রণ ভালো না হয়
– যদি ব্রণ ফুলে ওঠে ও ব্যথা করে
– যদি দাগ ও গর্ত পড়ে যায়
এই অবস্থায় ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
– ঘরোয়া প্যাক বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও যদি ব্রণ না কমে
– বরং আরও বেড়ে যায় বা ছড়িয়ে পড়ে
তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছেলেদের মুখে ব্রণ দূর করার উপায় জানতে হলে শুধু স্কিন প্রোডাক্ট নয়, বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত যত্ন ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা জরুরি। নিয়মিত ফেসওয়াশ ব্যবহার, ঘরোয়া প্যাক, পর্যাপ্ত পানি পান, ও হেলদি ডায়েট—সব কিছু একসাথে করলে ত্বক হয়ে উঠবে ব্রণমুক্ত, পরিষ্কার ও উজ্জ্বল।
ছেলেদের ত্বক একটু মোটা ও তেলতেলে হয়, তাই প্রতিদিন ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা, ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করা ও তেল-ঝাল খাবার কমানো খুব জরুরি।
ব্যক্তিগত অংশে ব্রণ হলে হালকা ও সানিটারি সাবান ব্যবহার করুন, আঁচড়াবেন না। পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। পরিস্থিতি খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যালোভেরা জেল, লেবুর রস, মধু ও টক দইয়ের মিশ্রণ নিয়মিত লাগালে ব্রণের দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়।
পানি, শসা, আমলকি, পেঁপে, ফলমূল, সবজি, ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেলে ত্বক ভালো থাকে ও ব্রণ কমে।
অ্যালোভেরা, মধু, দারুচিনি-মধুর প্যাক, বেসন-দই প্যাক ব্যবহার করলে ব্রণ ধীরে ধীরে কমে।
ব্রণের জন্য Netural Neem Face Wash।
অ্যালোভেরা জেল, মধু-লেবু মিশ্রণ, টমেটোর রস ও ব্রণ দাগ হালকা করার ক্রিম ব্যবহার করুন।
এটি ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে এবং ব্রণের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।
সাধারণত টিনএজ থেকে শুরু করে ২৫–৩০ বছর পর্যন্ত ব্রণ বেশি হয়। তবে হরমোনজনিত কারণে বেশি বয়সেও হতে পারে।
মুখের pores ছোট হয়, ত্বক ঠান্ডা হয়, ব্রণের লালচে ভাব কমে এবং ত্বক টানটান লাগে।
সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া বা র্যাশ হতে পারে, তাই আগে হাতে টেস্ট করে ব্যবহার করুন।
রসুনে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকলেও কাঁচা রসুন অতিরিক্ত খাওয়া পেটের সমস্যা করতে পারে। সরাসরি মুখে না লাগানোই ভালো।
ব্রণের জীবাণু কমাতে সাহায্য করে, তবে সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালা হতে পারে, তাই মধুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
অতিরিক্ত তেল, নাকের pores বন্ধ হয়ে যাওয়া, ধুলোবালি জমা ও হরমোনজনিত সমস্যা।
কিছু মানুষের শরীর দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারের প্রতি সংবেদনশীল, যাদের ব্রণ বাড়তে পারে।
মধু + দারুচিনি, অ্যালোভেরা + লেবুর রস, বেসন + দই এসব মিশ্রণ ভালো কাজ করে।
নাকের pores বড় এবং তেল বেশি জমে বলে এখানে সহজে ব্রণ হয়।
প্রতিদিন ফেসওয়াশ ব্যবহার, ঘরোয়া প্যাক, পর্যাপ্ত পানি, কম তেল-মশলা খাওয়া ও স্ট্রেস কমানো।
এটি স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে ও ত্বকের মৃত কোষ দূর করে। তবে বেশি ব্যবহার করলে শুষ্কতা আসতে পারে।
সরাসরি বরফ খেলে ব্রণের ওপর প্রভাব পড়ে না, তবে মুখে বরফ ঘষলে উপকার পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত বা কাঁচা লেবু সরাসরি দিলে ত্বকে জ্বালাপোড়া বা দাগ পড়ে যেতে পারে।
ফুলে ওঠা ও লালচে ভাব কমে যায়, ব্যথা হালকা হয় এবং ত্বক ঠান্ডা থাকে।
লেবু শরীর ডিটক্স করে ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তবে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও ভালো অভ্যাস।
ত্বক নরম হয়, ব্রণের জীবাণু ধ্বংস হয় এবং দাগ হালকা হয়।