02 Dec, 2022
রকেট আবিষ্কারের গল্প
মানুষ উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পরে এবার চেষ্টা করতে লাগলো কিভাবে আরো দ্রুত আকাশে উপরে ছুটে চলা যায়। শুরু হয়ে গেলো রকেট সৃষ্টির চিন্তা। তবে ঠিক কবে থেকে এই রকেট নিয়ে চেষ্টা হয়েছিল তা নিযে সঠিক ভাবে বলা কঠিন। কেউ বলে থাকেন, ১২৩২ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম রকেট ব্যবহার করে। তবে তা ছিল খুবই কম গতির রকেট। এরপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়ম কনগ্রেভ রকেটের অনেক উন্নতি করলেন। শোনা যায়, ফ্যান্সের নেপোলিয়ান দ্য গ্রেটের বিরুদ্ধে ইংরাজরা রকেট ব্যবহার করেছিল। তবে প্রথম মহাযুদ্ধের পরই রকেট নিয়ে ভালোভাবে গবেষণা শুরু হয়। আমেরিকার ড. হাচিংস গডার্ড মাত্র পনেরো বছর বয়সে একটা বড় অ্যালুমিনিয়ামের বেলুন তৈরি করে ছিলেন। বেলুনটা অবশ্য বেশিদূর ওড়েনি। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে একটু পরেই মাটিতে নেমে এলো। তবু গডার্ড দমলেন না। মনদিয়ে লেখাপড়া শিখে কলেজে অধ্যাপক হলেন। তিনি তখন ডক্টরেট। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর তৈরি রকেট শূন্যে উঠলো। কিন্তু সেই রকেটের উৎকট শব্দে লোকে ভয় পেয়ে গেল। তখন গডার্ড কিছু সহকর্মী নিয়ে নিউ মেক্সিকোতে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটা নতুন ধরনের রকেট তৈরি করলেন যার পেটটা বিরাট একটা জালার মতো। তার ভেতরে পুরে দেওয়া হলো প্রচুর জ্বালানি। জ্বালানিতে আগুন দেওয়া হলো। জ্বালানি পুড়ে রকেটের ভেতরে গ্যাসের প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হলো। ঐ চাপই রকেটকে প্রচণ্ড বেগে ওপরে ওঠার সাহায্য করলো। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে আবার গডার্ড আকাশে রকেট ওঠালেন। এই রকেটটি লম্বায় ছিল প্রায় পনেরো ফুট আর ওজন প্রায় ৮৫ পাউন্ড। সেটা মাটি থেকে ঘণ্টায় প্রায় ৭০ মাইল বেগে ওপরে উঠে গেল। ড. গডার্ড রকেটকে আরও ওপরে ওঠাবার চেষ্টায় গবেষণা করছিলেন। সেই গবেষণার খবরাখবর নিয়ে গডার্ড তরল জ্বালানির কথা চিন্তা করতে লাগলেন। গড়ার্ডের পরীক্ষা শুরু হলো এই সব গ্যাসোলিন আর নাইট্রিক অ্যাসিড, তরল রিফাইনড কেরোসিন ও তরল হাইড্রোজেন, অ্যালকোহল ও তরল অক্সিজেন নিয়ে। ড. গডার্ড ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করায় গবেষণার উপরে গতি কমতে শুরু করলো। পরবর্তীকালে বৈজ্ঞানিকরা রকেটের আরও পরিবর্তন ও উন্নতি সাধন করলেন । তারা রকেটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার উপায় আবিষ্কৃত করলো। বর্তমানে মানুষ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে অতিক্রম করে রকেটে চড়ে চাঁদ সহ বিভিন্ন গ্রহে অতিক্রকম করছে।