বাংলাদেশ থেকে আবিষ্কার কাঁকড়া খেকো ব্যাঙ ও সবুজ ব্যাঙ

বাংলাদেশ থেকে আবিষ্কার কাঁকড়া খেকো ব্যাঙ ও সবুজ ব্যাঙ

কাঁকড়াখেকো ব্যাঙ -
আপনি জানেন কি? বাংলাদেশের ব্যাঙের একটি প্রজাতি হলো কাঁকড়াখেকো ব্যাঙ বা ম্যানগ্রোভ ব্যাঙ। অধ্যাপক দত্ত ২০০৭ সালে প্রথম ওড়িশার উপকূলে এই ব্যাঙ আবিষ্কার করা হয়। উভচর সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল দাস প্রজাতিটির বৈজ্ঞানিক নাম দেন "Fejervarya cancrivora"।  তাছাড়া এ ব্যাঙের প্রথম ছবি তুলা হয় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে।জার্মানের বিজ্ঞানী জেট্রোড নিউম্যান ডেনজু এবং হেলমেট ডেনজু বুরিগোয়ালিনি এ দুইজন বিজ্ঞানী ছবিটি তুলেন কিন্তু তারা তখন বুজতে পারেনি যে এটা নতুন প্রজাতির একটি ব্যাঙ। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কাঁকড়াখেকো ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ ব্যাঙের একটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো এরা খাদ্যের খুঁজে সবসময় উপকূলে বসবাস করে। আমাদের আশে পাশে সচারচর থাকা কুলা ব্যাঙ বা সোনা ব্যাঙের মতো দেখতে হয় এরা। 

বর্তমানে এই ব্যাঙ গুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি দেখায় যায়। কাঁকড়াখেকো ব্যাঙের চোখের পেছনে আঁকা রেখা থাকে। এরা ৫ সে.মি থেকে ৮ সে.মি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙের অপেক্ষায় ছোট হয়। এই ব্যাঙের আরেকটি অনন্য ক্ষমতা হলো এরা শরীরে ইউরিয়া জমা করে রাখতে পারে। তাই তারা উপকূলে বসবাস করতে পারে। সমুদ্রের অতিরিক্ত লবণাক্ততা সহ্য করার সক্ষম এ ব্যাঙের রয়েছে। সাধারণ যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙ অপেক্ষায় এদের সক্ষমতা বেশি। 

উপকূলে থাকা কালীন এরা প্রচুর কাঁকড়া খাই যা তারা বেশি ভালোবাসে তবে অন্যানো পোকা মাকড় খেয়েও জীবন যাপন করে। কাঁকড়া লোভী হওয়ায় এর নাম হওয়ায় কাঁকড়াখেকো  নাম রাখা হয়েছে। এরা উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও বসবাস করে বাচ্চা দেয়ার জন্য। মিঠা পানিতেই তারা ডিম ফুটে বাচ্চা বের করে। অনেকসময় উপকূলীয়তে বর্ষা মৌসুমে অনেক ছোট ছোট পুকুর হয় সেখানেও তারা বসবাস করে। 


সবুজ ব্যাঙ -
বাংলাদেশে আগে অধিক পরিমানে পাওয়া যেত এবং প্রথম পাওয়া গিয়েছিলো আরেকটি ব্যাঙ হলো সবুজ ব্যাঙ। কিন্তু বর্তমানে ভারত ও শ্রীলঙ্কা উপদ্বীপে পাওয়া যায় এই ব্যাঙ। বৈজ্ঞানিক নাম  এই ব্যাঙের "Euphlyctis Hexadactylus"। দেখতে অনেক সুন্দর চকচকে। এর উপরিভাগ সবুজ রঙের এবং পিঠের শিরার রঙ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ছোট বেলায় এদের রং সবুজ হালকা কচি পাতার মতো থাকে বয়স হতে থাকলে তা গাঢ় সবুজ রঙে পরিবর্তিত হয়। এই ব্যাঙের লম্বা ১.৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনান্য ব্যাঙের তুলনায় অদ্ভুত খাদভ্যাসের জন্য এর নাম সবুজ ব্যাঙ রাখা হয়েছে। এদের খাদ্যতালিকায় ৯০ শতাংশই সবুজ শাকসবজি খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্যান্য ব্যাঙের মতো এত সাপ, কীটপতঙ্গ ও পোকা মাকড় বেশি খাই না। তাই খাদ্য সন্ধানে বেশি ঝামেলা হয় না তাদের। 

কাঁকড়াখেকো ব্যাঙের মতোই পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙের চেয়ে ছোট হয়। সরাসরি চিনার উপায় হলো এদের পায়ের আঙ্গুলগুলো আলাদা আলাদা থাকে। যেমন অন্নান্য ব্যাঙের পায়ের আঙ্গুলগুলো একসাথে পাতলা চামড়ায় লাগানো থাকে কিন্তু সবুজ ব্যাঙের তা থাকে না। আমাদের আশে পাশে থাকা সোনালী ব্যাঙের মতোই এদের ডাক হয়। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এদের মিলনের সময়। এ সময় তারা পুকুরের আশে পাশেই বসবাস শুরু করে। এরা খাদ্য দিনের বেলাতেই খুঁজে রাতে এদের বাইরে চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। সুন্দরবনের মধুপুর ও ভাওয়াল এলাকায় এই ব্যাঙ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সর্ব প্রথম সুন্দরবনে এই ব্যাঙ পাওয়া গেলেও বর্তমানে ভারত, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্গাতেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। যেসব পুকুর সবুজে ঘেরা উপরে সবুজের ভারী আস্তরণ এরূপ পুকুরে এরা বসবাস করতে ভালোবাসে। এই  সবুজ  ভারী আস্তরণের উপর এরা ভেসে থাকে কোনো রূপ বিপদ দেখলেই পানির বিতর লুকিয়ে যায়। তাছাড়া স্থলের সবুজ গাছের সাথে এর মিশে থাকে শিকারির চোখ কিভাবে ফাকি দিতে হয় তারা তা ঠিক মতোই জানে।