শরীলের উপকারিতা আম - Bangali 15 Benifit Of Mango

শরীলের উপকারিতা আম - Bangali 15 Benifit Of Mango

আম বাংলাদেশের এক রাজকীয় ফল। যা ফলের রাজা নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের মত সুমিষ্ট ফল পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। এই সুমিষ্ট ফলের সুন্দর সুন্দর নামও রয়েছে যেমনঃ কালিয়া, রানী পাসন্দ, বারি আম, দেউরি, ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, লোটা বোম্বাই, বোম্বাই, খিরসাপাত, অশ্বিনা এবং সুরজাপুরী। এই মিষ্টি আমের অনেক গুনাবলি রয়েছে। নিচে আমের উপকারের বর্ননা করা হলঃ


ক্যান্সার প্রতিরোধক খাবার আম:
আমেতে প্রচুর পরিমানে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যেমন: কোয়ারসেটিন, ফিসেটিন, আইসোক্যারসিট্রিন, অ্যাস্ট্রাগালিন, গ্যালিক অ্যাসিড এবং মিথাইল গ্যালেট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের দেহকে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার যেমন: স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং লিউকেমিয়া বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। ল্যাবে প্রমানিত যে আম, ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধ করতে ফলের মধ্যে সর্বাধিক সক্ষম। আমের ভিটামিন সি, ফাইবার এবং পেকটিন শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। 


ত্বকের যত্নে আম :
বাহিরের ধুলা বালি, ঘাম, রোদ আপনার ত্বককে নষ্ট করে দেয়, আম আপনার ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বলতা করে। নিয়মিত আম খেলে ফেইস ওয়াস বা ক্রিম এর প্রয়োজন পড়ে না। আম গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করার ফলে ব্রন বা মুখে ছিদ্র ছিদ্র গর্ত থাকে না। আমের অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ব্রণ, ফ্রেকলস, পিগমেন্টেশন এবং কালো দাগ করতে সহয়তা করে। আমের বিটা-ক্যারোটিন ও অ্যান্টি-এজিং ত্বক ফর্সা করে। এতে থাকা ভিটামিন "সি" ত্বকের কোলাজেন(সংযোগকারী টিস্যুর অগ্রভাগ) টিস্যু কে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে। 


ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ন্ত্রণে আমের পাতা:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম পাতা অসাধারণ উপকারী। ৫-৬টি আম পাতা সিদ্ধ করে, সারারাত ভিজিয়ে রাখুন পরে সকালে ছাকন দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে নিয়মিত খান। আমে গ্লাইসেমিক, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং জিআই কম থাকার কারনে রক্তে সুগার এর মাত্রা বাড়ে না। তাছাড়া আমে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান হ্রাস করে।


ওজন কমানোর উপায়ে আম:
আম একটি পরিপূর্ন ফল এতে প্রচুর ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আম আঁশযুক্ত ফল এবং প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকায় হজমের ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমায় ফলে ওজন ও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাই।


চোখের দৃষ্টি ভালো রাখার উপায়ে আম:
চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আম ব্যাপক উপকারী। আমে ভিটামিন "এ" আছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করে এবং রাতকানা থেকে আমাদের রক্ষা করে।
এক কাপ কাটা ২০০ গ্রাম আমে প্রায় ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন "এ" রয়েছে, যা দৈনিক প্রয়োজনের ২৫ শতাংশ। ভিটামিন "এ" দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এই ভিটামিন এর অভাবে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। প্রতিদিন নিয়মিত আম খেলে রাতকানা, শুষ্ক চোখ, প্রতিসরণ ত্রুটি, চুলকানি, কর্নিয়া নরম হয়ে যাওয়া, সাইপ্টক্সানথিন থেকে পেশী ক্ষয় এবং চোখ জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ করা যায়।


রক্তশূন্যতা ঘরোয়া চিকিৎসায় আম :
আমে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ভিটামিন "সি" থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের এবং রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য আম খু্বই উপকারি। 


স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়ে আম :
আমে গ্লুটামিন অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬ এবং আয়রন সমৃদ্ধ আছে যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। যেসব শিশুরা পড়াশোনা মনে রাখতে কষ্ট হয় তাদের আম খাওয়া গুরুত্বপূর্ন। গ্লুটামিন অ্যাসিড স্মৃতিশক্তি উদ্দীপিত কোষগুলিকে সক্রিয় করে এবং মস্তিষ্কের ডিটক্সিফিকেশন করে । 


স্ট্রোক রোগীর খাবার তালিকায় আম :
প্রছন্ড গরমে মানুষের স্ট্রোক করার সম্ভবনা থাকে। সেই স্ট্রোক পতিহত করতে আসে আম। এটি খেলে আপনাকে তাৎক্ষণিক ঠান্ডা এবং সতেজ করে তুলে। তাই গ্রীষ্মে বেশি বেশি আম খান এবং ঠান্ডা থাকুন।


হজম শক্তি বৃদ্ধির খাবার আম :
আম পাচনতন্ত্রকে স্থিতিশীল ও শক্তি করতে সাহায্য করে। আমে অ্যামাইলেজ এবং ফাইবার থাকে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে বাঁচা যায়।  অ্যামাইলেজ যৌগ খাদ্য দ্রব্য কে দ্রবীভূত ফলে কঠিন স্টার্চও সহজে ভেঙ্গে যায়। এবং ফাইবার যৌগ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে আমাদের বাচায়। আমের মধ্যে থাকা এনজাইম পাক্সথলীর প্রোটিন ভেঙে হজমে সহয়তা করে। এই এনজাইম পাক্সথলীর গোলমাল দূর করে পেটকে উপশম করে। আমে প্রচুর ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সম্পূর্ন কার্যকর। ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখতেও সহয়তা করে।


ভিটামিনে সমৃদ্ধ আম :
আমে প্রচুর পরিমানে অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বিটা-ক্যারোটিন, নিয়াসিন,  ফ্ল্যাভোনয়েড, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, এবং পটাসিয়াম রয়েছে। ২০০ গ্রাম, আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন "সি", ২.৩ গ্রাম ভিটামিন "ই" এবং ৩৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন "এ" রয়েছে। এছাড়াও, আরডিএ ১০% ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের আম প্রদান করে। আমে বিদ্যমান ভিটামিন হল ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, কোলিন এবং ফোলেট। 


ঘুম আসার খাবার হিসাবে আম:
২০০ গ্রাম আম খাওয়ার ফলে আপনি তাড়াতাড়ি ঘুমাতে এবং শান্তিকর বিশ্রাম পারবেন। আমে পাইরিডক্সিন বি-৬ থাকে যা মানুষের সেরোটোনিন সংশ্লেষণ করে মেলাটোনিন তৈরি করে ফলে শান্তিকর ঘুম আসে।  


হার্টের যত্নে আম:
পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের হার্ট এবং রক্তনালী শীতিল রাখে, যা আমের মধ্যে বিদ্যমান। আমে তে থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন বায়ো-অ্যাকটিভ উপাদান যা হার্টের ব্যাথা কমায়।


কিডনি পাথরের চিকিৎসায় আম:
আম পাতা কিডনি ও পিত্তথলির পাথরের চিকিৎসায় করে। আমের পাতা বেলেন্ডারে পিষে সারা রাত পানিতে ভিজেয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খেলে পাথর ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে।


হাড় শক্তিশালী করতে আম:
আমে বিভিন্ন খনিজ ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে  যেমন ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম যা হাড় ও দাঁতকে স্বাস্থ্যকর শক্তিশালী ও উন্নত গঠন  করে। ভিটামিন "কে" শরীরে কোথাও রক্ত ক্ষরণ হলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে এবং হাড় শক্তিশালী করতেও প্রভাব বিস্তার করে। ভিটামিন কে হাড়কে ক্যালসিয়াম দিয়ে পুরু করে ডেকে রাখে ফলে হাড় বৃদ্ধি পায়। আম বয়স্কদের অস্টিওপোরোসিসের অবস্থাও প্রতিরোধ করতে পারে।


অ্যাজমা প্রতিরোধ করতে আম :
আমের মধ্যে বিটাক্যারোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা শ্বাসনালীগুলির হাঁপানির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে করে।


ভিটামিনে ভরপুর আম এক রাজকীয় ফল। গরমে নিয়মিত খান আর সুস্থ থাকুন।