পদার্থবিজ্ঞান তাপগতিবিদ্যা সাজেশন নোট গুরুত্বপূর্ন অনুধাবন মূলক প্রশ্নোত্তর এইচএসসি পর্ব ৩

পদার্থবিজ্ঞান তাপগতিবিদ্যা সাজেশন নোট গুরুত্বপূর্ন অনুধাবন মূলক প্রশ্নোত্তর এইচএসসি পর্ব ৩

এইচএসসি তাপগতিবিদ্যা সাজেশন নোট অনুধাবন প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তর সহ
এইচএসসি তাপগতিবিদ্যা গুরুত্বপূর্ন অনুধাবন মূলক প্রশ্নোত্তর তাপগতিবিদ্যার নোট পর্ব ২



প্রশ্ন : দেখাও যে, অপ্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায় -এনটপি বৃদ্ধি পায়। 
উত্তরঃ ধরি, T1 তাপমাত্রার একটি উষ্ণ বস্তু হতে T2 তাপমাত্রার একটি শীতল বস্তুতে dQ পরিমাণ তাপ সঞ্চলিত হয়। এখানে T1 > T2
সুতরাং উষ্ণ বস্তুর এনট্রপির পরিবর্তন dS1 = -dQ/T1
এবং শীতল বস্তুর এনট্রপির পরিবর্তন dS1 = +dQ/T2
সুতরাং এনট্রপির মোট পরিবর্তন, dS=dS1 +dS2
=-dQ/T1+dQ/T2
=dQ/T2-dQ/T1
এখানে T1>T2 হওয়ায় dS>0 । সুতরাং বলা যায় যে, অপ্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায় -এনট্রপি বৃদ্ধি পায়। 

প্রশ্নঃ এনট্রপির পরিবর্তন 20JK-1 বলতে কি বুঝ? 
উত্তর: কোন সিস্টেমের তাপমাত্রা সাপেক্ষে গৃহিত বা বর্জিত তাপের হার দ্বারা এনট্রপি পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ ds=dQ/T । -এনট্রপির পরিবর্তন 20JK-1 বলতে বুঝায় উক্ত সিস্টেমের তাপমাত্রা 1k পরিবর্তনের জন্য 20J তাপের প্রয়োজন হয়। 

প্রশ্ন : দেখাও যে, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেম অন্তঃস্থ শক্তির বিনিময়ে কাজ করে। 
উত্তর : তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রমতে, dQ = du + dW, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় তাপের কোন আদান প্রদান না হওয়ায় dQ= 0  হয় এবং dW= -dU। সুতরাং বলা যায় যে, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় সিস্টেম অতঃস্থ শক্তির বিনিময়ে কাজ করে। 

প্রশ্ন : এন্ট্রপি বিশৃঙ্খলা পরিমাপক? ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর: এন্ট্রপি বিশৃঙ্খলা পরিমাপকঃ এনট্রপি থেকে বিশৃঙ্খলার গাণিতিক ধারনা পাওয়া যায়। আমরা জানি প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া সকল স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনাই অপত্যাগামী। আর সকল অপ্রত্যাগামী ঘটনায় এনট্রপি বৃদ্ধি পায়। এনদীপ বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হল শৃঙ্খল অবস্থা হতে বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া। যে ব্যবস্থায় এনট্রপি বেশি সে ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা বা অনিয়মও বেশি। উদাহরণ স্বরূপ পদার্থের তিন অবস্থা বিবেচনা করা যাক। কঠিন অবস্থায় পদার্থের অনুগগুলো সবচেয়ে সুশৃঙ্খল তাবস্থায় থাকে। তরল তাবস্থায় এর শৃঙ্খল অবস্থা খাবেনা, বিশৃঙ্খল অবস্থা বাড়তে থাকে। গ্যাসীয় তাবস্থায় এর বিশৃঙ্খলার মাত্রা সর্বাধিক হয়। আমরা দেখতে দাই, কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে এটি তরলে পরিণত হয় এবং এর বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকে। আবার আমরা জানি, তাপ দেয়ার কারণে বস্তুর এনট্রপিও বৃদ্ধি পায়। তরল পদার্থে আরও তাপ দিলে এটি বাষ্পে পরিণত হয় এবং সর্বাধিক বিশৃঙ্খল অবস্থা প্রাপ্ত হয়। আর গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের এনট্রপিও সর্বাধিক হয়। অত এব আমরা বলতে পারি এনট্রপি বৃদ্ধিতে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায় এবং এনট্রপি হ্রাসে বিশৃঙ্খলা হ্রাস পায়। সুতরাং আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ‘এন্ট্রপি বিশৃঙ্খলা পরিমাপক”। 

প্রশ্ন: প্রত্যাগামী ও অপ্রত্যাগামী প্রক্রিয়ার পার্থক্য লিখ। 
উত্তর : প্রত্যাগামী ও অপ্রত্যাগামী প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ :- 

প্রত্যাগামী ও অপ্রত্যাগামী প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
প্রত্যাগামী অপত্যাগামী 
১। এ প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী ভাবে  প্রত্যাবর্তন করে। ১। এ প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী ভাবে প্রত্যাবর্তন করে না। 
২। এটি ধীর প্রক্রিয়া ২। এটি দ্রুত প্রক্রিয়া।
৩। কার্য নির্বাহক বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে।  ৩। কার্য নির্বাহক বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে না। 
৪। এটি  স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়া নয়।  ৪। এটি স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়া।

প্রশ্নঃ দেখাও যে, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় এনট্রপি স্থির থাকে। 
উত্তর: কোন সিস্টেম T তাপমাত্রায় dQ পরিমান তাপ গ্রহন বা বর্জন করার ফলে এনট্রপির পরিবর্তন, ds=dQ/T । বুদ্ধতাপীয় প্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায় কার্য নির্বাহক বস্তুর সাথে পরিবেশের তাপের কোন আদান প্রদান না হওয়ায় dQ =0 হয়। ds =0 হয়। অর্থাৎ, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় এনট্রপি স্থির থাকে। 

প্রশ্নঃ এন্ট্রপির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর : এন্ট্রপির তাৎপর্য: নিম্নে এন্ট্রপির কতিপয় তাৎপর্য উল্লেখ করা হল :- 
ক) এনট্রপি একটি প্রাকৃতিক রাশি। তাপ ও পরম তাপমাত্রার অনুপাত দ্বারা এনট্রপির পরিবর্তন পরিমাপ করা হয়। 
খ) এটি বস্তুর একটি তাপীয় ধর্ম যা তাপ সঞ্চালনের দিক নির্দেশ করে। 
গ) এটি বস্তুর তাপীয় অবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করে। 
ঘ) এন্ট্রপি বৃদ্ধি পেলে বস্তু শৃঙ্খল তাবস্থা হতে বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ধাবিত হয়। 
ঙ) এটি তাপমাত্রা, চাপ, আয়তন, অন্তর্নিহিত শক্তি, চুম্বকীয় তাবস্থার ন্যায় কোন বস্তুর অবস্থা প্রকাশ করে। 

প্রশ্ন : সমোষ্ণ ও রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লিখ। 
উত্তর: সমোষ্ণ ও রূদ্ধতাপীয় ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:- 
সমোষ্ণ ও রূদ্ধতাপীয় ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
সমোষ্ণ  রূদ্ধতাপীয় 
১। সিস্টেমে তাপের আদান প্রদান ঘটে।  ১। সিস্টেমে তাপের আদান প্রদান ঘটে না। 
২। সমোষ্ণ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটে।  ২। রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া দপ্ত ঘটে। 
৩। অন্তঃস্থ শক্তির পরিবর্তন ঘটে না। ৩। অন্তঃস্থ  শক্তির পরিবর্তন ঘটে।
৪। তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে না।  ৪। তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। 

প্রশ্নঃ তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র ও ২য় সূত্রে মধ্যে গুণগত পার্থক্য কি? 
উত্তর: তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র শক্তির নিত্যতা সূত্রেরই বিশেষ রূপ। এই সূত্রমতে তাপ কাজে বা কাজ তাপে রূপান্তরিত হতে পারে। কিন্তু তাদ কোন দিকে প্রবাহিত হবে তার সমাধান দিতে পারে না। কিন্তু তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র এর সমাধান দিতে পারে। 

প্রশ্ন : এনট্রপি বলতে কী বুঝায়? 
উত্তর : এনট্রপি : কোন সিস্টেমের শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা বা রূপান্তরের জন্য শক্তির অপ্রাপ্ততাকে এনট্রপি বলে। অথবা, রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় বস্তুর যে তাপীয় ধর্ম অপরিবর্তিত থাকে তাকে এনট্রপি বলে। চাপ আয়তন এবং তাপমাত্রার ন্যায় এটি একটি প্রাকৃতিক রাশি। কোন বস্তুর মোট এনট্রপির পরিমান পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এনট্রপির পরিবর্তন পরিমাপ করা যায়। কোন বস্তু তাপ গ্রহন করলে এর এনট্রাপ বাড়ে এবং তাপ বর্জন করলে এনট্রপি করে। 
যদি কোন সিস্টেম T তাপমাত্রায় dQ তাপ গ্রহন বা বর্জন করে তবে এনট্রপির পরিবর্তন ds= dQ/T  । 
যদি তাপমাত্রা স্থির না থাকে অর্থাৎ বৃহৎ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এনট্রপির পরিবর্তন ds = ƒT2T1 dQ/T   । 

প্রশ্ন : কোন ইঞ্জিনের দক্ষতা 60% বলতে কী বুঝায়? 
উত্তর : কোন ইঞ্জিনের দক্ষতা 60% বলতে বুঝায় ইঞ্জিনটি গৃহীত তাপের শতকরা 60 ভাগ কাজে রূপান্তর করতে পারে।

প্রশ্নঃ তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্রের মূল বিষয়গুলো লিখ। 
উত্তর: তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্রের মূল বিষয়গুলো হলো- 
১. কোন ব্যবস্থায় এনপি কখনো হ্রাস পায় না। 
২. তাপশক্তিকে সম্পূর্ণরূপে কাজে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। 
৩. বাহ্যিক কাজ ব্যতিত নিম্ন তাপমাত্রার স্থান হতে উচ্চ তাপমাত্রার স্থানে তাপ স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। 

প্রশ্ন : জগতের তাপীয় মৃত্যু ব্যাখ্যা কর। 
উত্তর : জগতের তাপীয় মৃত্যুঃ একটি সিস্টেম যতই সাম্যাবস্থার দিকে এগিয়ে যায় তার কাছ থেকে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ততই কমে যায় ফলে তার এনট্রপিও তত বেড়ে যায়। সাম্যাবস্থায় এন্ট্রপি হয় সর্বাধিক। প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন সর্বদা সাম্যাবস্থার দিকে পরিচালিত হয়। সুতরাং সকল স্বতঃস্ফুর্ত পরিবর্তনৈ এনট্রপি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু প্রকৃতিতে সবকিছুই সাম্যাবস্থা পেতে চায়, তাই বলা যায় জগতে এন্ট্রপি ক্রমাগত বাড়ছে। জগতের এন্ট্রপি যখন সর্বোচ্চে পৌঁছাবে তখন সবকিছুর তাপমাত্রা এক হয়ে যাবে। ফলে তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা যাবেনা। এই অবস্থাকে জগতের তাপীয় মৃত্যু বলা হয়।

প্রশ্ন : দেখাও যে, প্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায় এনট্রপি স্থির থাকে। 
উত্তরঃ ধরি, T1 তাপমাত্রার একটি উৎস হতে একটি সিস্টেম Q1 তাপ গ্রহন করে এবং T2 তাপমাত্রার একটি তাপগ্রাহকে Q2 পরিমাণ তাপ বর্জন করে।  সুতরাং উৎসের এনট্রপির পরিবর্তন ds1=-Q1/T1, 
এবং তাপগ্রাহকের নট্রপির পরিবর্তন ds1=+Q2/T2
সুতরাং এনট্রপির মোট পরিবর্তন, ds = dS1 + dS2 
=-Q1/T1+Q2/T2
=Q2/T2-Q1/T1
আবার আমরা জানি, প্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায়  Q1/T1=Q2/T2
সুতরাং এনট্রপির মোট পরিবর্তন, dS = 0
সুতরাং বলা যায় যে, প্রত্যাগামী প্রক্রিয়ায় এনট্রপি স্থির থাকে।

প্রশ্ন : কোন তাপ ইজ্জিনের দক্ষতা 100% হতে পারেনা কেন? 
উত্তর : আমরা জানি, ইঞ্জিনের দক্ষতা, n= 1 - Q2/Q1। এখানে, n = 100% = 1
বা, Q2/Q1=1-n
বা, Q2/Q1=1-1
বা, Q2/Q1=0
বা, Q2=0
ইঞ্জিন কর্তৃক বর্জিত তাপের পরিমান শূণ্য হলে ইঞ্জিনের দক্ষতা 100% হয়। অর্থাৎ ইঞ্জিনের দক্ষতা 100% হতে হলে ইঞ্জিন কর্তৃক গৃহীত তাপের সম্পূর্ণ অংশকেই কাজে রূপান্তর করতে হয়। যা বাস্তবে সম্ভব নয় তাই কোন তাপ ইঞ্জিনের দক্ষতা 100% হতে পারেনা। অথবা, 
আমরা জানি, ইঞ্জিনের দক্ষতা, n = 1- T2/T1 এখানে, n = 100% = 1
বা, T2/T1=1-n
বা, T2/T1=1-1
বা, T2/T1=0
বা, T1/T2= 1/0
বা, T1/T2= α
বা, T1= α
ইঞ্জিনের উৎসের তাপমাত্রা অসীম হলে ইঞ্জিনের দক্ষতা 100% হয়। যা বাস্তবে সম্ভব নয় তাই কোন তাপ ইঞ্জিনের দক্ষতা 100% হতে পারেনা। 


এখানে তাপগতিবিদ্যা বিষয় হতে গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবন প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো। যেকোনো পরীক্ষায় শতাধিক কমনের নিশ্চয়তা দেওয়া যাই এখান থেকে। তাপগতিবিদ্যার এই অনুধাবন প্রশ্ন ও প্রশ্নের উত্তর আমরা তিনটি পর্বে ভাগ করেছি। আশা করি তোমরা উপকৃত হবে। তোমাদের সকলের জন্য এইচএসসি পরীক্ষার শুভ কামনা।