যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দিল যুক্তরাষ্ট্র

যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দিল যুক্তরাষ্ট্র

অনেকদিন যাবৎ ইউক্রেন ইস্যুতে চরম উত্তেজনাপূর্ণ বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে। ৫ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বৈঠক বসলেও তাদের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া হয়নি। পুতিন সরকার ইউক্রেনে যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে শনিবার ২২ জানুয়ারি প্রায় ১০০ টন গোলা বারুদ  সাহায্য  হিসাবে পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন কিয়েভ তার সফর শেষ করার পর পরই এই সামরিক সাহায্য পাঠানো হয়। সফর শেষ করার আগে তিনি বলেছিলেন রাশিয়া ইউক্রেনে র উপর হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের এই সামরিক সহায়তা প্রথম চালান হিসাবে পাঠিয়েছে এবং সামনে আরো সামরিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন সামরিক সদস্যদের কাছে এই সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও আধুনিক অস্ত্র সরঞ্জাম তাদের দেয়া হয়েছে। 

গত বছরের ডিসেম্বরে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০০ মিলিয়নের নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছেন ইউক্রেনকে। তখন মার্কিন দূতাবাস কিয়েভে তে বলেছেন "ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার আছে যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা ইউক্রেনের পাশে থাকবে সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে গোলা বারুদ দিয়ে সাহায্য করার জন্য ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী  ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এবং তারা আশা বাদী ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চলমান প্রচেষ্টার  জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে। সাম্প্রতিক ইউক্রেনে ব্যাপক সাইবার হামলার মধ্য দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনা করছে। রাশিয়া যেকোনো কারণ দেখিয়ে ইউক্রেনে হামলার জন্য চেষ্টা করছে। ১৯ জানুয়ারি বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন  উদ্বেগ প্রকাশের সাথে বলেছেন "রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালাবে। কিন্তু  ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এতাটাও শক্তিশালী হয়নি যে তারা রাশিয়ার সাথে মোকাবেলা করবে। আমাদের মার্কিন গোয়েন্দারা দ্বারা তথ্য পেয়েছি তারা ১ মাসের মধ্যে হামলার পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেন সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই যা তাদের অধিকার যা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। রাশিয়া এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে ইউক্রেন সীমান্তে। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাইডেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যেহুতু রাশিয়া যুদ্বের জন্য দিন দিন অগ্রসর হচ্ছে তাই ইউক্রেনের ও উচিত অগ্রসর হওয়া। ইউক্রেন সাহস করলে পুতিন তাদের কোনো কিছুই করতে পারবে না। 

১৬ জুলাই, ২০১৪ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল ইউক্রেনে তখন মার্কিন-রাশিয়ার মধ্যে ইউক্রেন সংকট সমস্যা নিয়ে কথা হচ্ছিলো । বিমানে প্রায় ২১৭ জন আরোহী নিহত হয়। ধারণা করা হয় রুশপন্থী বিদ্রোহীরা বিমানটি গুলি করে। পরে যুক্তরাষ্ট্র  রাশিয়ার কয়েকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে  তখনও দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। ১৯৯১ সাল থেকে প্রায় ৩২ বছর ধরে রাশিয়া ও মার্কিন সম্পর্ক দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। কিন্তু হটাৎ ১৯৯১ নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে পতন ঘটে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই সাথে শেষ হয় স্নায়ুযুদ্ধ। সেই সাথে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীভূত বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রিমিয়া দখল নিয়ে হালকা উত্তেজনা দেখা দিলেও পরে তাদের মধ্যে বিশাল স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় যা অনেক দিন পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। তিন দশক আগে স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই দেশের মধ্যে অনেক বোঝা পরার সৃষ্টি হয়। বিপুল ক্ষয় ক্ষতির পরে যার অবসান ঘটে। কিন্তু বিপুল পরিমান রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে ইউক্রেন সীমান্তে যার জন্য এবার আগের থেকেও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে দুই দেশের মধ্যে। তাছাড়া আরেকটি কারণ হলো কাজাখস্তানে বিক্ষোভ দমন করার জন্য মস্কোতে সেনা পাঠানো বড় বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে।